ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মৃতব্যক্তির নামে পশু জবাই করা যাবে কি?

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

জীবিত কিংবা মৃত নয়, বরং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম পশু জবাই করা শিরক। শুধু তাই নয়, যে স্থানে মুশরিকরা তাদের দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে পশু জবাই করে সে স্থানটি শিরকের নিদর্শনে পরিণত হয়। কারণ এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেব-দেবীর নৈকট্য লাভ করা এবং আল্লাহর সাথে শরিক করা।

একারণেই যদি কোন মুসলমান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়তেও উক্ত স্থানে পশু জবাই করে, তবুও তা হবে মুশরিকদের অনুরূপ কাজ। মুশরিকদের দৃষ্টিতে তাদের পুণ্যময় স্থানের অংশীদার। মুশরিকদের কোনো কাজের সঙ্গে বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ মিল তাদের প্রতি আসক্তিরই নামান্তর।

 মৃতব্যক্তির নামে কোনো কিছু জবাই করাও হারাম। মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيْرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللهِ بِهِ

‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃতপ্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়।’ এরপরই আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوْا بِالْأَزْلَامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ

‘যে জন্তু যজ্ঞবেদিতে জবাই করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বণ্টন করা হয় (তাও হারাম)। এসব পাপ কাজ।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩)

আল্লাহর সঙ্গে শিরককারীর পরিণতি

আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে পশু জবাইকারী সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

لَعَنَ اللهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ وَلَعَنَ اللهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللهِ وَلَعَنَ اللهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا وَلَعَنَ اللهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الأَرْضِ

‘১. যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লানত; ২. যে ব্যক্তি গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু-প্রাণী জবাই করে তার উপর আল্লাহর লানত; ৩. যে ব্যক্তি কোনো বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লানত; ৪. যে ব্যক্তি জমির সীমানা পরিবর্তন করে, তার উপর আল্লাহর লানত।’ (মুসলিম ১৯৭৮; মিশকাত ৪০৭০)

উল্লিখিত বিষয় সমূহ সুস্পষ্ট রূপে শিরকে আকবর, যা থেকে বিরত থাকা একান্ত প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা শিরকের ব্যাপারে বলেন-

إِنَّ اللهَ لاَ يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيْدًا

‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা শিরকের গুনাহ ক্ষমা করবেন না। তবে অন্যান্য গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১৬)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দেন-

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِيْنَ مِنْ أَنْصَارٍ

‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক স্থাপন করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার আবাসস্থল হয় জাহান্নাম। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭২)

হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ مَاتَ وَهْوَ يَدْعُو مِنْ دُوْنِ اللهِ نِدًّا دَخَلَ النَّارَ

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি ৪৪৯৭)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

اجْتَنِبُوا السَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِى حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ، وَالتَّوَلِّى يَوْمَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلاَتِ-

‘তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক। ছাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ঐ ধ্বংসাত্মক জিনিসগুলো কি? তিনি জবাবে বললেন-

১. ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা;

২. যাদু করা;

৩. অন্যায়ভাবে এমন কোন ব্যক্তিকে হত্যা করা, যাকে আল্লাহ হারাম করেছেন;

৪. সুদ খাওয়া;

৫. ইয়াতিমের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করা;

৬. ধর্মযুদ্ধ কালীন সময়ে (রণক্ষেত্র) থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করা;

৭. সতী-সাধ্বী মুমিন নারীদের প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা।’ (বুখারি ৬৮৫৭; মুসলিম ৮৯)

হজরত জাবির রাদিয়া্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

مَنْ لَقِىَ اللهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ

‘যে ব্যক্তি কোনো শিরক করা ছাড়া আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে (মৃত্যুবরণ করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (মুসলিম ৯৩)

আল্লাহ তাআলা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও শিরক থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বললেন এভাবে-

لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ

‘যদি তুমি শিরক কর, তবে তোমার সমস্ত আমল অবশ্যই বাতিল হয়ে যাবে এবং নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৬৫)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-

مَنْ عَمِلَ عَمَلاً أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِىْ غَيْرِىْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ

‘যে ব্যক্তি এমন আমল করে যে আমলে আমার সঙ্গে অন্যকে শরিক করেছে, এমন আমল ও যাকে সে শরিক স্থাপন করেছে, আমি উভয়ই প্রত্যাখ্যান করি।’ (মুসলিম ৭৬৬৬; মিশকাত ৫৩১৫)

এমএমএস/জেআইএম

আরও পড়ুন