মুনাফিকের প্রকারভেদ ও পরিণাম
কপটতা, ভণ্ডামি, ধোঁকাবাজি ও অন্তরে দ্বিমুখীভাব পোষণ করে রাখা নিফাক। অন্তরে শত্রুতা ও বিরোধিতা গোপন রেখে বাইরে দিয়ে আনুগত্য প্রদর্শন করা হলো নিফাক। অন্তরে কুফর, শিরক ও অবাধ্যতা গোপন রেখে মুখে মুমিনসুলভ বাক্য উচ্চারণ করার নাম নিফাক। আর যে ব্যাক্তি এমন আচরণ করে তারাই মুনাফিক।
মুনাফিকের প্রকারভেদ
নিফাক বা মুনাফেকি হচ্ছে দুই প্রকার। ১. বিশ্বাসগত নিফাক এবং ২. কর্মগত নিফাক।
বিশ্বাসগত নিফাক : বিশ্বাসগত নিফাক হচ্ছে বড় কুফর; যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। এ নিফাক ৬ প্রকার-
১. আল্লাহর নবি ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা,
২. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দ্বীন নিয়ে আসছেন তার কোনো কিছুকে মিথ্যা বলে সাব্যস্ত করা,
৩. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঘৃণা করা,
৪. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দ্বীন নিয়ে এসেছে তাকে ঘৃণা করা,
৫. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের ক্ষতিতে খুশি হওয়া এবং
৬. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দ্বীনের বিজয় অপছন্দ করা।
কর্মগত নিফাক
কর্মগত নিফাক হলো ছোট কুফর; যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে না। তবে তা বড় ধরনের অপরাধ ও মহাপাপ। তন্মধ্যে রয়েছে সে আমল যা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদিসে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সে হবে খাঁটি মুনাফিক যার মধ্যে এই ৪ টি স্বভাব বিদ্যমান থাকবে। এর কোনো একটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায় । তাহলো-
১. তার কাছে আমানত রাখলে সে আমনতের খেয়ানত করে।
২. সে যখন কথা বলে তখন মিথ্যা কথা বলে।
৩. কথা দিয়ে তা রাখে না অর্থাৎ ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে।
৪. ঝগড়া করার সময় অশ্লীল গালি দেয়।
মুনাফিকের পরিণাম
মুনাফিকরা অভিশপ্ত, অবাধ্য ফাসিক ও নিশ্চিত জাহান্নামি। জাহান্নামে তাদের অবস্থানও আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্ট করে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে মুনাফিকদের খোলস উন্মোচন করেছেন। মুনাফিকদের পরিণতি খুবই ভয়াবহ। তাহলো-
১. মুনাফিকরা ফাসিক
اَلۡمُنٰفِقُوۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتُ بَعۡضُهُمۡ مِّنۡۢ بَعۡضٍ ۘ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمُنۡکَرِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَقۡبِضُوۡنَ اَیۡدِیَهُمۡ ؕ نَسُوا اللّٰهَ فَنَسِیَهُمۡ ؕ اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ هُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
‘মুনাফিক পুরুষ এবং নারীরা এক অপরের অনুরূপ। তারা অসৎ কাজের নির্দেশ দেয়, সৎকাজ থেকে বিরত রাখে এবং নিজেদের হাতগুলোকে (আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে) সংকুচিত করে রাখে। তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, সুতরাং তিনিও তাদেরকে ভুলে গেছেন। নিঃসন্দেহে মুনাফিকরাই হচ্ছে অতি অবাধ্য।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৬৭)
২. মুনাফিকরা ধোঁকাবাজ
মুনাফিকরা মহান আল্লাহকেও ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-
اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ یُخٰدِعُوۡنَ اللّٰهَ وَ هُوَ خَادِعُهُمۡ ۚ وَ اِذَا قَامُوۡۤا اِلَی الصَّلٰوۃِ قَامُوۡا کُسَالٰی ۙ یُرَآءُوۡنَ النَّاسَ وَ لَا یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِیۡلًا
‘নিশ্চয়ই মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা আল্লাহকে ধোঁকা দিতে চায়। বস্তুত তিনিও তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। এবং যখন তারা নামাজে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্য তথা অলসতার সঙ্গে নিছক লোক-দেখানোর জন্য দাঁড়ায় আর আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে থাকে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৪২)
৩. মুনাফিকরা জাহান্নামি
وَعَدَ اللّٰهُ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقٰتِ وَ الۡکُفَّارَ نَارَ جَهَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا ؕ هِیَ حَسۡبُهُمۡ ۚ وَ لَعَنَهُمُ اللّٰهُ ۚ وَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّقِیۡمٌ
আল্লাহর পক্ষ থেকে মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফেরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের প্রতিশ্রুতি। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এটা তাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ করেছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৬৮)
৪. মুনাফিকদের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ جَاهِدِ الۡکُفَّارَ وَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ اغۡلُظۡ عَلَیۡهِمۡ ؕ وَ مَاۡوٰىهُمۡ جَهَنَّمُ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ
‘হে নবি! আপনি কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম এবং তা কতই না নিকৃষ্ট ঠিকানা।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৭৩)
৫. মুনাফিকদের জাহান্নামে অবস্থান
اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ فِی الدَّرۡکِ الۡاَسۡفَلِ مِنَ النَّارِ ۚ وَ لَنۡ تَجِدَ لَهُمۡ نَصِیۡرًا
মুনাফিক (কপট) ব্যক্তিরা অবশ্যই জাহান্নামের সর্ব নিম্ন স্তরে অবস্থান করবে এবং তাদের জন্য তুমি কখনও কোনো সাহায্যকারীও পাবে না।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৫)
এছাড়াও কোরআনের একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুনাফিক নারী ও পুরুষদের নিশ্চিত জাহান্নামী ঘোষণা করেছেন। চিরকাল তাদের অবস্থান হবে জাহান্নাম তা-ও নিশ্চিত করেছেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানর উচিত, দুনিয়ায় যাবতীয় নিফাক থেকে বিরত থাকা। দ্বীনের সঠিক পথ পরিচালিত হওয়া। ভয়াবহ এসব পরিণতি থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব ধরনের মুনাফেকি থেকে হেফাজত করুন। নেফাকির সব ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস