স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে জামাতে নামাজ পড়তে পারবে কি?
মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়া পুরুষের জন্য আবশ্যক। বিনা কারণে ফরজ নামাজ ঘরে পড়ার সুযোগ রাখেনি ইসলাম। তারপরও অনেক সময় বিভিন্ন কারণে বা অজুহাতে অনেকের মসজিদে যাওয়া সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তে চায় তবে কি জামাতে নামাজ পরতে পারবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
মসজিদে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায়কারীকেও অনেক সময় প্রয়োজনের খাতিরে বাড়িতে নামাজ পরতে হয়। সে সময় জামাতে নামাজ আদায় ও ফজিলত পাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামী-স্ত্রী কিংবা পরিবারের ছেলে-মেয়ে, মা-বোনদের নিয়ে জামাতে নামাজ পড়ার সুযোগ আছে। এমনটি নিষিদ্ধ নয়।
কখনো মসজিদের জামাত না পেলে সেক্ষেত্রে একাকী নামায না পড়ে বাসায় স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে জামাতে নামায পড়াই উত্তম। এক্ষেত্রে দাঁড়ানোর পদ্ধতি হল, স্ত্রী স্বামীর বরাবর হয়ে দাঁড়াবে না বরং একটু পিছনে দাঁড়াবে। আর নাবালেগ শিশু থাকলে তারা ইমামের ডান পাশে দাঁড়াবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৩৮৫; আলবাহরুর রায়েক ১/৩৪৫; আদ্দুররুল মুখতার ১/৫৫৩)
এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনাও রয়েছে। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ صَلَّى بِهِ وَبِأُمِّهِ أَوْ خَالَتِهِ . قَالَ فَأَقَامَنِي عَنْ يَمِينِهِ وَأَقَامَ الْمَرْأَةَ خَلْفَنَا
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে এবং তার মা কিংবা খালাকে নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তাঁর ডান পার্শ্বে দাঁড় করালেন এবং নারীদে আমাদের পেছনে দাঁড় করালেন।’ (মুসলিম ১৩৭৭)
তাই বলে মসজিদের নামাজের জামাত তরক করে বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে জামাতে নামাজ নিয়মিত করা যাবে না। জামাতের গুরুত্বের ব্যাপারে একাধিক হাদিসের মাধ্যমে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَمِعَ الْمُنَادِيَ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ ” . قَالُوا وَمَا الْعُذْرُ قَالَ خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ ” لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلاَةُ الَّتِي صَلَّى
‘যে ব্যক্তি মুয়াজ্জিনের আজান শোনা সত্ত্বেও কোনোরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামাতে নামাজ আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী) নামাজ কবুল হবে না। (অর্থাৎ তার নামা্জকে পরিপূর্ণ নামাজ হিসেবে গণ্য করা হবে না)। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ওজর কী? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা।’ (আবু দাউদ ৫৫১)
জামাতের ক্ষেত্রে স্ত্রী কোথায় দাঁড়াবে?
তবে স্বামী-স্ত্রীর জন্য জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে, ইসলামি শরিয়তের বিধান। স্বামী-স্ত্রীর জামাতের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হলো- স্ত্রীকে স্বামী নিজের এক কাতার পেছনে দাঁড় করাবে। স্ত্রী স্বামীর বরাবর দাঁড়াবে না। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘আমাদের ঘরে আমি এবং এক এতিম হরজত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পেছনে (জামাতের সঙ্গে) নামাজ পড়েছি। আর আমাদের পেছনে আমার মা উম্মে সুলাইম (ইকতিদা করেন)।’ (বুখারি)
উল্লেখ্য যে, উম্মে সুলাইম (রা.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাহরাম ছিলেন।
তবে অনেক ইসলামি স্কলার বলেছেন, যদি স্ত্রী স্বামীর পায়ের গোড়ালির পেছনে দাঁড়ায়; তাহলেই নামাজ সহিহ হবে। এক কাতার পেছনের দাঁড়ানোর বাধ্যবাধকতা নেই। এক কথায়, স্ত্রী স্বামীর একদম সমান সমান দাঁড়াবে না। যদি একদম বরাবর দাঁড়ায় তাহলে নামাজ হবে না।
মনে রাখতে হবে
স্বামী-স্ত্রীর জামাত যেন মসজিদের জামাতের বিকল্প না হয়। মসজিদের জামাতের বিকল্প হিসাবে এ জামাত গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি কোনো কারণে বা ওজরে ঘরেই নামাজ পড়তে হয়, আর তা জামাতে পড়ে সেটা গ্রহণযোগ্য। ফরজ নামাজ ছাড়া তো আর কোনো নামাজে জামাত নেই। ফরজ নামাজ যখন ঘরে পড়ার মত কারণ ঘটে তখন স্বামী স্ত্রী মিলেও জামাত পড়া যায়। তবে, ইমাম অবশ্যই স্বামীকে হতে হবে। দুই ব্যক্তি জামাত করলে যেভাবে একই কাতারে দাঁড়ায়, স্ত্রী এভাবে দাঁড়াবে না। স্ত্রী জামাতের সময় বরাবর না দাঁড়িয়ে পেছনে দাঁড়াবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর স্বামী-স্ত্রীকে প্রয়োজন জামাতে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস