যেসব আমল ও দোয়ায় অন্তর নরম হয়
অনেক সময় মানুষের অন্তর কঠিন ও কঠোর হয়ে যায়। এতে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও নেক আমলের মানসিকতা নষ্ট হয়। তাযকিয়াতুন নফস তথা অন্তরের পরিশুদ্ধি বাড়াতে মানুষের অন্তর নরম হওয়ার বিকল্প নেই। কঠোর মনোভাব পরিহার করে অন্তরকে নরম করতে হলে কিছু আমলের পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য অপরিহার্য। তাহলো-
১. মৃত্যুর কথা স্মরণ করা
একদিন মানুষকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। দুনিয়ার প্রতিটি স্বাশ-প্রশ্বাসের হিসাব দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে এ চিন্তাও বিশ্বাস অন্তরে পোষণ করা। আর এটিই মানুষের অন্তরকে নরম করে তোলে।
২. কবর জেয়ারত করা
কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কবরবাসীর জন্য দোয়া করা। কবরবাসীর কথা চিন্তা করা। এ কবরবাসীরাও একদিন দুনিয়ায় চলাফেরা করতো খাওয়া-দাওয়া করতো। আজ তারা কবরবাসী। কবর জেয়ারত করলে, কবরবাসীর কথা চিন্তা করলে মানুষের অন্তর নরম হয়। হাদিসে পাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি প্রথমে তোমাদের কবর জেয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা কবর জেয়ারত কর। কেননা এটা অন্তরকে নরম করে।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
৩. কোরআন তেলাওয়াত করা
কোরআন তেলাওয়াত ও তার ঘটনাগুলো মানুষের অন্তর নরম করে দেয়। চিন্তাশীল মানুষরাই কোরআনে বর্ণিত ঘটনা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন। এ জন্য পরকালীন জীবনের ঘটনাগুলো বেশি বেশি তেলাওয়াত করা। কেয়ামত ও আজাব সম্পর্কিত আয়াত তেলাওয়াত করা এবং তেলাওয়াত শোনা যেতে পারে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রকৃত মুমিন তো তারাই, (যাদের সামনে) আল্লাহর কথা স্মরণ করা হলে তাদের অন্তর ভীত হয় এবং তার বাণী তেলাওয়াত করা হলে যাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৫)
৪. জিকির করা
জিকির অন্তর নরম করার অন্যতম হাতিয়ার। জিকিরে মানুষের অন্তর প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর জিকির বা স্মরণে অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)
৫. ইসতেগফার করা
নিরবে নিভৃতে নিজের যাবতীয় গুনাহ ও অপরাধের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হওয়া এবং খাঁটি অন্তরে তওবা করা। আল্লাহর কাছে দুইহাত তুলে কান্নাকাটি করা। এসময় কবরের আজাব ও হাশরের ময়দানের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করা ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং কান্নাকাটি করা। এতে মানুষের অন্তর নরম হয়। আল্লাহ তাআলা ক্ষমাপ্রার্থনার দ্বারা মানুষের অন্তর নরম করে দিতে পারেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পাপ ক্ষমাকারী, তওবা কবুলকারী, কঠোর শাস্তিদাতা ও সামর্থ্যবান। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা গাফির : আয়াত ৩)
৬. সৎ লোকের সঙ্গে থাকা
যারা আল্লাহকে ভয় করে, তাদের সঙ্গে সময় কাটানো। তাদের সংস্পর্শে থাকা। তাদের সান্নিধ্য ও উপদেশ মানুষের অন্তরকে নরম করে দেয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আপনি নিজেকে তাদের সৎসঙ্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ২৮)
৭. আল্লাহর কাছে দোয়া করা
দোয়া মুমিনের প্রধান হাতিয়ার এবং দোয়া ইবাদতের মূল। অন্তরের কঠোরতা থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিকল্প নেই। কেননা অন্তর পরিবর্তনে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে একাধিক চমৎকার দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। তাহলো-
اللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা মুসাররিফাল কুলুব সাররিফ কুলুবানা আলা তাআতিক।’
অর্থ : ‘হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরগুলোকে আপনার আনুগত্যের দিকে ঘুরিয়ে দিন।’ (মুসলিম, রিয়াযুস সালিহীন, মিশকাত)
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلَى دِيْنِكَ
উচ্চারণ : ‘হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর স্থির রাখুন।’ (তিরমিজি, ইবনু মাজাহ, মিশকাত)
মুমিন মুসলমানের উচিত, অন্তরের কঠোরতা পরিহার করা। আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্যে নিজেদের অন্তরকে নরম ও অনুগত রাখা। কোরআন-সুন্নাহর আমলে নিজেদের পরিচালনা করা।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে উল্লেখিত আমল ও দোয়াগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস