ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ইসলামে সফর মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:৩২ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২

ফখরুল ইসলাম নোমানী

ইসলামি হিজরি বর্ষের দ্বিতীয় মাস সফর। এই মাস মহররম মাসের জোড়া মাস। মাসটি নানা কারণে নবিযুগ থেকেই আলোচনা-সমালোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইসলামের সুস্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন বিশ্বাসের নির্মলতার খাতিরে তা অপরিহার্যও বটে। ইসলাম নানা কারণে নানা সময়, দিন ও মাসকে বিশেষায়িত করলেও সফর মাস সেসবের অন্তর্ভুক্ত নয়, বরং বিশুদ্ধ ঈমানের সঙ্গে আল্লাহর হুকুমগুলো পালন করা, সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা, আইয়ামে বিজ তথা আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা, সর্বোপরি সব সময় আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকার মধ্য দিয়ে এ মাসও হয়ে উঠতে পারে অনেক মূল্যবান ও বরকতপূর্ণ। তাই নিত্য নফল ও অন্যান্য মাসের আমলের মতো এ মাসেও আমল করতে কোনো বাধা নেই।

প্রতিটি দিন ও মাসই ফজিলতপূর্ণ। মানুষের জীবন হলো সময়েরই সমষ্টি। সফর মাসও জীবনেরই অংশবিশেষ। সুতরাং সফর মাসও ফজিলতময় ও বরকতপূর্ণ। অতএব আল্লাহ তাআলার রহমত ও বরকত পেতে হলে এ মাসেও বেশি বেশি আমল করতে হবে। ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত যথাযথভাবে আদায় করার পাশাপাশি নফল ইবাদতে মশগুল হতে হবে। কোরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল ইবাদত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা এ মাসেও খুবই পুণ্যের কাজ।

তবে ইসলামপূর্ব জাহেলি যুগে সফর মাসকে ঘিরে ছিল নানা ধরনের কুসংস্কারের ছড়াছড়ি। মানুষ মনে করতো, যত অশুভ, অকল্যাণ, বিপদাপদ সব নেমে আসে এ মাসে। এ মাসে বিয়ে শুভ হয় না। ব্যবসা মন্দা যায়। অন্যত্র যাত্রা অমঙ্গল হয়। এ ছাড়াও শিষ্ট-অনিষ্ট, সৎ-অসৎ, রোগ সংক্রমণ এবং আঞ্চলিক ভাষায় ছাঁৎ-কুছাঁৎ যাবতীয় বহু কুধারণার শিকার ছিল তারা।

ইসলাম এসব কুসংস্কারের অবসান ঘটিয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরপর যখন শুভদিন ফিরে আসে, তখন তারা বলতে আরম্ভ করে যে, এটাই আমাদের জন্য উপযোগী। আর যদি অকল্যাণ এসে উপস্থিত হয় তবে তাতে মুসার এবং তার সঙ্গীদের অলক্ষণ বলে অভিহিত করে...।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৩১)
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে কুলক্ষণ,অশুভ সব বিষয়ের নিন্দা করেছেন এবং এসব অসার ধারণা যে সব যুগেই ছিল; তারও প্রমাণ মিলে আয়াত থেকে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সংক্রমক ব্যাধি, কুলক্ষণ, অনাহারে পেট কামড়ানো পোকা ও হামাহ- এসবের কোনো অস্তিত্ব নেই।’ (মুসলিম)

প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য হলো, শিরক-বিদআত বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান লাভ করা এবং খুব সতর্কতার সঙ্গে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। মনে রাখতে হবে, মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষণ অমূল্য রত্ন। দিন, মাস ও বছরের পিঠে চড়ে যা এগিয়ে চলছে অবিরত। সময়কে কাজে লাগিয়ে প্রতিটি মানুষ তার ঠিকানা করে নেয় জান্নাত বা জাহান্নাম।

সুতরাং সময়ের ভেতর শুভ-অশুভের দেয়াল তুলে কখনও ইবাদতে মগ্ন হওয়া, কখনও ছেড়ে দেওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। প্রতিটি দিন ও মাসই ফজিলতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সফর মাসের শেষ দিকে প্রচন্ড অসুস্থ ছিলেন। সফর মাসের শেষ বুধবার তিনি অনকেটাই সুস্থতা লাভ করেন এবং এ দিনে সাত মশক পানি দ্বারা গোসল করেন। মসজিদে নববীতে হাজির হয়ে ইমামতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ খুশিতে অনেক সাহাবি বিভিন্নভাবে দান-সাদকা করছেন। এ দান-সাদকা নিঃসন্দেহে উত্তম কাজ।

সুতরাং এই দিনে অধিকহারে দরূদ ও সালাম পেশ করা এবং সামর্থ অনুপাতে দান খয়রাত করা বড়ই পুণ্যের কাজ। আমাদের দেশসহ কোনো কোনো দেশে মুসলমানগণ এই দিবসটি আখেরি চাহার শোম্বার হিসেবে পালন করে থাকেন। সফর মাসের শেষ বুধবারটি আখেরি চাহার শোম্বার নামে খ্যাত।

তাজকেরাতুল আওরাত কিতাবে আরও উল্লেখ আছে, সফর মাসের শেষ বুধবার বা আখেরি চাহার শোম্বার দিন ফজর থেকে বা জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষে অর্থাৎ নিচের সাতটি আয়াত পড়ে শরীরে ফুঁ দিয়ে একটি পান পাতায় মিশক জাফরান দিয়ে এই আয়াত সাতটি লিখে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে সেই পানি কাউকে পান করালে সর্বপ্রকার বিপদ মুসিবত রোগবালাই থেকে নিরাপদ থাকবে।
আয়াত সাতটি হলো-
১. سَلٰمٌ ۟ قَوۡلًا مِّنۡ رَّبٍّ رَّحِیۡمٍ
সালামুন ক্বাওলাম মির রাব্বির রাহিম। (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৫৮)
২. سَلٰمٌ عَلٰی نُوۡحٍ فِی الۡعٰلَمِیۡنَ
সালামুন আলা নূহিন ফিল আলামিন। (সুরা সফফাত : আয়াত ৭৯)
৩. سَلٰمٌ عَلٰۤی اِبۡرٰهِیۡمَ
সালামুন আলা ইবরাহিম। (সুরা সফফাত : আয়াত ১০৯)
৪. سَلٰمٌ عَلٰی مُوۡسٰی وَ هٰرُوۡنَ
সালামুন আলা মুসা ওয়া হারুন। (সুরা সফফাত : আয়াত ১২০)
৫. سَلٰمٌ عَلٰۤی اِلۡ یَاسِیۡنَ
সালামুন আলা ইলইয়াসীন। (সুরা সফফাত : আয়াত ১৩০)
৬. سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ طِبۡتُمۡ فَادۡخُلُوۡهَا خٰلِدِیۡنَ
সালামুন আলাইকুম ত্বিবতুম ফাদখুলহা খালিদুন। (সুরা যুমার : আয়াত ৭৩)
৭. سَلٰمٌ هِیَ حَتّٰی مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ
সালামুন হিয়া হাত্তা মাত্বলাইল ফাজ্রি। (সুরা কদর : আয়াত ৫)

আল্লাহ তাআলার কাছে এই প্রার্থনা করি, হে দয়াময় সৃষ্টিকর্তা! তুমি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ নবির উম্মত হবার কল্যাণে আমাদের দোষত্রুটি ক্ষমা করে তোমার রহমতের বারিধারায় আমাদেরকে সিক্ত করো। আল্লাহপাক আমাদেরও এই ফজিলতময় ও বরকতপূর্ণ সফর মাসে বেশি করে নেক আমল করার তাওফিকে রাফিক এনায়েত করুন ও সবাইকে প্রিয়নবি হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পাঠানোর তাওফিক দিন। সবাই পড়ি-

‘আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা সাইয়েদিনা মুহাম্মদ, ওয়ালা আলেহি ওয়া আসহাবিহি ওয়া সাল্লাম।’
লেখক : ইসলামি চিন্তক ও গবেষক।

এমএমএস/এমএস

আরও পড়ুন