জুমার প্রথম খুতবা : শিরকের ভয়াবহতা
আজ শুক্রবার। জুমার দিন। ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইংরেজি, ২৫ ভাদ্র ১৪২৯ বাংলা, ১২ সফর ১৪৪৪ হিজরি। সফর মাসের দ্বিতীয় জুমা আজ। আজকের জুমার আলোচ্য বিষয়- শিরক প্রসঙ্গে। মহান আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার বিধিনিষেধ ও ভয়াবহতা ওঠে এসেছে। শিরকের পরিণতি সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। যার পরে আর কোনো নবি নেই। এরপর শিরকের গুনাহর কোনো ক্ষমা নেই উল্লেখ করে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیۡدًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হলো।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১৬)
শিরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতির সামনে ঘোষণা করেন-
اِنَّهٗ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىهُ النَّارُ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ
‘নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭২)
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- সবচেয়ে বড় গুনাহ কী? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার বা সমকক্ষ বানানো; যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
বড় শিরক মানুষের সব আমলকে নষ্ট করে দেয়। কারণ মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَ لَقَدۡ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ وَ اِلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکَ ۚ لَئِنۡ اَشۡرَکۡتَ لَیَحۡبَطَنَّ عَمَلُکَ وَ لَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে অহি পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শিরক করলে তোমার আমল নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৬৫)
শিরকের প্রকারভেদ
এ শিরক তিন প্রকার। বড় শিরক, ছোট শিরক ও গুপ্ত শিরক।
আল্লাহ তাআলা বড় শিরক ক্ষমা করবেন না। শুধু তা-ই নয়, তিনি শিরক মিশ্রিত কোনো নেক আমলও কবুল করবেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدِ افۡتَرٰۤی اِثۡمًا عَظِیۡمًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৪৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغۡفِرُ اَنۡ یُّشۡرَکَ بِهٖ وَ یَغۡفِرُ مَا دُوۡنَ ذٰلِکَ لِمَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیۡدًا
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হলো।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন
وَ قَالَ الۡمَسِیۡحُ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اعۡبُدُوا اللّٰهَ رَبِّیۡ وَ رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰهِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىهُ النَّارُ ؕ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ
‘আর মাসীহ বলেছে, ‘হে বনি ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর। নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর জালিমদের কোনো সাহায্যকারী নেই।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৭২)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন
لَئِنۡ اَشۡرَکۡتَ لَیَحۡبَطَنَّ عَمَلُکَ وَ لَتَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡخٰسِرِیۡنَ
‘তুমি শিরক করলে তোমার আমল নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৬৫)
আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন-
وَ لَوۡ اَشۡرَکُوۡا لَحَبِطَ عَنۡهُمۡ مَّا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ
‘আর যদি তারা শির্ক করতো, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেতো।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৮৮)
শিরকের প্রথম প্রকার : বড় শিরক আবার ৪ প্রকার
প্রথম প্রকার : দাওয়াত বা আহ্বানের শিরক। এ শিরক সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
فَاِذَا رَکِبُوۡا فِی الۡفُلۡکِ دَعَوُا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ فَلَمَّا نَجّٰهُمۡ اِلَی الۡبَرِّ اِذَا هُمۡ یُشۡرِکُوۡنَ
‘তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে, তখন তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে স্থলে পৌঁছে দেন, তখনই তারা শিরকে লিপ্ত হয়।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৬৫)
দ্বিতীয় প্রকার : নিয়ত, ইচ্ছা ও সংকল্পের শিরক। এর প্রমাণে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
مَنۡ کَانَ یُرِیۡدُ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتَهَا نُوَفِّ اِلَیۡهِمۡ اَعۡمَالَهُمۡ فِیۡهَا وَ هُمۡ فِیۡهَا لَا یُبۡخَسُوۡنَ - اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ لَیۡسَ لَهُمۡ فِی الۡاٰخِرَۃِ اِلَّا النَّارُ وَ حَبِطَ مَا صَنَعُوۡا فِیۡهَا وَ بٰطِلٌ مَّا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ
‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করতো, তা সম্পূর্ণ বাতিল।’ (সুরা হুদ : আয়াত ১৫-১৬)
তৃতীয় প্রকার : আনুগত্যে শিরক। আল্লাহ তাআলা বলেন-
اِتَّخَذُوۡۤا اَحۡبَارَهُمۡ وَ رُهۡبَانَهُمۡ اَرۡبَابًا مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ الۡمَسِیۡحَ ابۡنَ مَرۡیَمَ ۚ وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡۤا اِلٰـهًا وَّاحِدًا ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ سُبۡحٰنَهٗ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ
‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদের রব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং মারইয়ামপুত্র মাসীহকেও। অথচ তারা এক ইলাহের ইবাদত করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছে, তিনি ছাড়া কোনো (হক) ইলাহ নেই। তারা যে শরিক করে তিনি তা থেকে পবিত্র।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩১)
এ আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে, নাফরমানি ও অবাধ্যতার কাজে আলিম ও আবিদদের (ইবাদতকারীদের) আনুগত্য করা, তাদের ডাকা উদ্দেশ্য নয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদি ইবনে হাতিম কর্তৃক জিজ্ঞাসিত হলে বলেন, ‘আমরা তাদের ইবাদত করিনা। তিনি তাকে আরও বললেন যে, তাদের ইবাদত হচ্ছে অবাধ্যতার কাজে তাদের আনুগত্য করা।
চতুর্থ প্রকার : মহব্বত বা ভালাবাসায় শিরক। প্রমাণ হিসেবে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اَنۡدَادًا یُّحِبُّوۡنَهُمۡ کَحُبِّ اللّٰهِ
‘আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালবাসার মত ভালবাসে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৬৫)
শিরকের দ্বিতীয় প্রকার : ছোট শিরক
এটি হচ্ছে রিয়া বা লোক দেখানোর ইচ্ছা। এর প্রমাণ হচ্ছে, মহান আল্লাহ বলেন-
فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّهٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّهٖۤ اَحَدًا
‘সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)
শিরকের তৃতীয় প্রকার : গুপ্ত বা সুক্ষ্ম শিরক
গুপ্ত বা সুক্ষ্ম শিরক সম্পর্কে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট করেছেন এভাবে-
‘এ উম্মতের শিরক রাতের আঁধারের কালো পাথরের উপর কালো পিপড়াদের পদধ্বনির চেয়েও গুপ্ত ও সুক্ষ্ম।’
শিরক থেকে বেঁচে থাকার দোয়া
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে শিরক থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। শিরকের কাফফারা স্বরূপ একটি দোয়া পড়ার উপদেশ দিয়েছেন। তাহলো-
أَللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُبِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئاً وَ أَنَا أَعْلَمُ وَاسْتَغْفِرُكَ مِنَ الذَّنْبِ الَّذِىْ لَا أَعْلَمُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকাবিকা শাইয়ান ওয়া আনা আলামু ওয়াসতাগফিরুকা মিনাজ জাম্বিল্লাজি লা আলামু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি জ্ঞাতসারে তোমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং না জেনে করা পাপের জন্য তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরক থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস