বাবা-মার অবাধ্যতার পরিণতি
বাবা-মা দুনিয়াতেই সন্তানের জন্য জান্নাত ও জাহান্নাম। যারা দুনিয়াতে বাবা-মাকে সন্তুষ্ট করতে পারবে; উভয় জাহানের সফলতার তাদের জন্য। আর যারা দুনিয়াতে বাবা-মার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ তাদের দুনিয়া ও পরকাল দুটিই ব্যর্থ। নবিজির হাদিসের দিকনির্দেশনাই এর জলন্ত প্রমাণ। কী এসেছে হাদিসে?
১. নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাআলা তোমাদের ওপর মায়ের অবাধ্যতাকে হারাম করেছেন। কন্যা-সন্তানদিগকে জীবন্ত কবর দেয়া; দানের ব্যাপারে নিজে দান না করে অন্যের কাছে পাওয়ার মনোভাষণা চিন্তা করা; অযথা বাদানুবাদ তথা তর্ক-বিতর্ক করা; অধিক যাঞ্চা ও সম্পদের অপচয়কেও হারাম করেছেন।’ (বুখারি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য অনেক সতর্কবার্তা প্রদান করেছেন। অথচ প্রতিটি সতর্কবার্তাতেই বাবা-মার সঙ্গে অবাধ্যতার কুফল বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে।
২. নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওমর ইবনে হাজামকে ইয়েমেনবাসীর কাছে এ মর্মে পত্র লিখে পাঠান যে, ‘কেয়ামতের দিন যে সব ব্যাপারে কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে জঘন্যতর প্রতিপন্ন হবে; তাহলো- আল্লাহর সঙ্গে শরিক সাব্যস্ত করা; কোনো মুমিনকে হত্যা করা; আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সময় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা; বাবা-মার অবাধ্যতা; বিবাহিত নারীর বিরুদ্ধে অপবাদ রটানো; যাদু বিদ্যা শিক্ষা করা, সুদ খাওয়া এবং ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করা। (ইবনে হিব্বান)
৩. হজরত ইবনে ওমর বর্ণনা করেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন- যাদের প্রতি কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা অপ্রসন্ন থাকবেন; তারা হলো- বাবা-মার অবাধ্য ব্যক্তি; মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি; উপকার করে খোঁটা দানকারী।’ অতঃপর বললেন, ৩ ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না; তারা হলো বাবা-মার অবাধ্য ব্যক্তি; দাইয়ুস অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি যার স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথচ সে তাতে বাধা দান করেনি বা তার প্রতিকার করেনি এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী। (ইবনে হিব্বান)
৪. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু বর্ণনা করেন নবিজি বলেছেন, ‘জান্নাতের হাওয়া পাঁচশত বছরের পথ অতিক্রম করে আসে। কিন্তু উপকার করার পর যে খোটা দেয়; বাবা-মার অবাধ্য ব্যক্তি এবং মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি এ হাওয়ার পরশটুকুও পাবে না। (তাবারানি, জামে সগির)
৫. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, ৪ ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান না করলেও তা সঙ্গত হবে। তারা হলো- মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি; সুদখোর, ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাসকারী এবং বাবা-মার অবাধ্য ব্যক্তি। (মুসতাদরেকে হাকেম)
৬. হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজি থেকে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর ইচ্ছামাফিক অনেক গোনাহের শাস্তি কেয়ামতের দিন দেয়ার জন্য রেখে দেবেন; কিন্তু বাবা-মার অবাধ্যতা এমনই একটি গোনাহ যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই দিয়ে দেন।
৭. হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদের ফরজ ও নফল কোনো ইবাদতই আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। তারা হলো- বাবা-মার অবাধ্য ব্যক্তি; উপকার করে খোঁটা দানকারী এবং তাকদিরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। (কিতাবুসসুন্নাহ)
৮. হজরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘তিনটি ব্যাপার এমন; বর্তমানে যেগুলোর কোনো আমলই ফলদায়ক নয়। আর তাহলো- আল্লাহর সঙ্গে কাউক শরিক করা; বাবা-মার অবাধ্যতা ও জিহাদ চলাকালে যুদ্ধক্ষেত্রে পৃষ্ঠপ্রদর্শন। (তাবারানি)
৯. হজরত ইবন আবু আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হজরত আলকামার মৃত্যু সম্পর্কে একটি দীর্ঘ হাদিস রয়েছে। মৃত্যুকালে সে কোনো ভাবেই মুখে তাওহিদের কালেমা উচ্চারণ করতে পারছিল না। এ সাহাবীর প্রতি তাঁর মা অসন্তুষ্ট ছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশে তাঁর মা তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং তখনই তাঁর মুখে তাওহিদের কালেমা নিঃসৃত হয়।
বাবা-মার অবাধ্যতার কুফল সম্পর্কিত একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা রয়েছে। যা মানুষকে বাবা-মার অবাধ্যতা থেকে মুক্ত রাখবে। আর তাহলো-
হজরত শাহর ইবনে হাওশাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি আসরের নামাজের পর লক্ষ্য করলেন যে, এমন এক ব্যক্তি- যার মাথার অংশ ছিল গাধার এবং অবশিষ্ট দেহ মানুষের। সে কবর হতে বের হয়ে তিনবার গাধার মতো বিকট আওয়াজ দিয়ে পুনরায় কবরে চলে যায়। তার মাতাকে জিজ্ঞাসা করে জানা গেল যে, ঐ ব্যক্তি মদপান করত। তার মা তাকে এ (মদপানের) জন্য তিরস্কার করলে সে বলত, তুমিতো গাধার মতো চিৎকারই করতে থাক।’ অতঃপর একদিন আসরের সময় তাঁর মৃত্যু হয় এবং এখন প্রতিদিনই আসরের পর কবর ফাঁক হয়। তখন সে বের হয়ে গাধার মতো বিকট শব্দে তিনবার চিৎকার দিয়ে আবার কবরে আবদ্ধ হয়। (ইসফাহানি)
সুতরাং বাবা-মার সঙ্গে অবাধ্যতা নয়। দুনিয়া ও পরকালের শান্তি-মুক্তি ও সফলতায় বাবা-মার খেদমতের বিকল্প নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বাবা-মার অবাধ্যতা থেকে হেফাজত করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে বাবা-মার খেদমতে নিয়োজিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম