রিজিক ও বরকত নিয়ে আসে যে ৪ আমল
রিজিক ও বরকত মানুষের জন্য খুই জরুরি বিষয়। মহান আল্লাহ মানুষের প্রতি দয়া করে কিছু আমলের কারণে রিজিক ও বরকত বাড়িয়ে দেন। অবহেলার কারণে অনেকেই সাধারণত এসব আমল থেকে বিরত থাকেন। কোরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত ৪ আমলে আল্লাহ রিজিক ও বরকত দান করেন। আমল ৪টি কী?
১. রাত জেগে ইবাদত করা
রাতে ইবাদত তথা নামাজে খুব বেশি মনোযোগী হওয়া। নিজে যেমন প্র্যত্যেক ওয়াক্তর নামাজ পড়তে হবে তেমনি পরিবারের লোকদের নামাজ পড়ার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। আর তাতে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেবেন বলে এভাবে ঘোষণা করেছেন-
وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلَاةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لَا نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَّحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى
‘আপনি আপনার পরিবারের লোকদেরকে নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমি আপনাকে রিজিক দেই এবং আল্লাহকে ভয় করার পরিণাম শুভ তথা কল্যাণকার।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১৩২)
২. শেষ রাতে ইসতেগফার করা;
হরজত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যারা বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার করে; তাদের সামনে যত সংকটই (অভাব) থাকুক না কেন, মহান আল্লাহ তাআলা তা সমাধান করে দেন।’ (মুসতাদরেকে হাকেম)
তাই রাত গভীর হলে মহান আল্লাহর কাছে নিজের অপারগতা ও চাহিদা পূরণে বেশি বেশি তাওবাহ-ইসেতগফার করার বিকল্প নেই। যে যত বেশি তাওবা-ইসতেগফার করবে; তার জন্য রিজিকের দরজা ততবেশি খুলে যাবে। তাই রাত জেগে এ ইসতেগফারগুলো করা যেতে পারে-
> أَستَغْفِرُ اللهَ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
> أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।‘
অর্থ : আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।
> رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ (أنْتَ) التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
উচ্চারণ : 'রাব্বিগ্ ফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা ইন্নাকা (আংতাত) তাওয়্যাবুর রাহিম।'
অর্থ : 'হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাহ কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।'
> أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ : 'আস্তাগফিরুল্লা হাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি।'
অর্থ : 'আমি ওই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছেই (তাওবাহ করে) ফিরে আসি।'
৩. সাদকা দেওয়া
আল্লাহর রাস্তায় দান বা সাদকা করা। যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করে, আল্লাহ তাআলা তাদের বেশুমার রিজিক দান করেন মর্মে কোরআনুল কারিমে এভাবে ঘোষণা করেন-
قُلۡ اِنَّ رَبِّیۡ یَبۡسُطُ الرِّزۡقَ لِمَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِهٖ وَ یَقۡدِرُ لَهٗ ؕ وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَهُوَ یُخۡلِفُهٗ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الرّٰزِقِیۡنَ
‘(হে রাসুল! আপনি)বলুন, নিশ্চয়ই আমার রব তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিক প্রশস্ত করেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় কর তিনি তার বিনিময় দেবেন এবং তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৯)
মনে রাখতে হবে
উত্তম সদাচরণেও সাদকার সওয়াব ও উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই যদি কেই সাদকা করার সক্ষমতা না রাখে, সে যেন উত্তম আচরণের মাধ্যমে সাদকার সওয়াব পাওয়ার এবং রিজিকি পাওয়ার চেষ্টা করে। কেননা দান ও সদাচরণে রিজিক বাড়ে। রিজিক বাড়াতে চাইলে অসহায়-অভাবিদের প্রতি সদয় আচরণ করা। অভাবিদের প্রতি দয়া করলে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেন। হাদিসে এসেছে-
‘দান করার কিছু যদি না থাকে তবে একটি খেজুরের অংশ দিয়ে হলেও দান করার মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা কর।’
৪. দিনের শুরু ও শেষে (সকাল-সন্ধ্যায়) জিকির করা
দিনের শুরুতে আল্লাহকে স্মরণ করে কাজ শুরু করা। কাজের শেষেও মহান আল্লাহকে স্মরণ করা। আল্লাহর স্মরণেই বাড়ে রিজিক। যদি কারো অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য একটু বেলা করে হয় তাতে কোনো অসুবিধা নেই। বরং নিজ ঘরের কাজ দিয়ে হলেও সকাল সকাল কাজ শুরু করা। কেননা সকালবেলার কাজে আল্লাহ তাআলা বরকত দান করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া করেছেন-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لِأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا
হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতকে সকালবেলা বরকত দান করবেন।
অন্য বর্ণনায় এসেছে- তিনি বলেছেন, আমার উম্মতের জন্য সকালবেলার সময়টাতে বরকত দেয়া হয়েছে।
অভাব থেকে মুক্ত থাকতে চাইলে, রিজিকে বরকত পেতে চাইলে আল্লাহর স্মরণ তথা তার কাছে বেশি বেশি দোয়ার বিকল্প নেই। যে কোনো বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার, তাকে ডাকার কথা এভাবে বলেছেন-
وَ قَالَ رَبُّکُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَکُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ
‘তোমাদের প্রতিপালক বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। যারা অহংকারে আমার উপাসনায় বিমুখ, ওরা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা গাফির/মুমিনুন : আয়াত ৬০)
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ যাজুল মাদ-এ উল্লেখিত ৪ আমলে রিজিক আসে বলে উল্লেখ করেছেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রিজিকে বরকত পেতে, রিজিক বাড়াতে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকতময় রিজিক পেতে উল্লেখিত আমলগুলো বেশি বেশি করা। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনার প্রতি আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রিজিকে বরকত পাওয়ার জন্য কোরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত ৪টি আমল বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস