ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

মুমিনদের প্রতি হতাশ না হওয়ার উপদেশ

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:১১ পিএম, ২০ জুলাই ২০২২

মুমিনরা কখনো হতাশ হয় না, সুখে-দুঃখে আল্লাহর প্রতি ভরসা করে। তারা সব সময় আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে। মহান কোরআনুল কারিমের মুমিনদের হতাশ না হওয়ার উপদেশ দেন, দুঃশ্চিন্তা না করার উপদেশ। এ উপদেশেই মুমিনরা কঠিন বিপদেও যেমন মনোবল হরারায় না তেমনি হতাশও হয় না। কোরআনুল কারিমের মহান আল্লাহ মুমিনদের প্রতি উপদেশগুলো এভাবে তুলে ধরেছেন-

وَ لَا تَهِنُوۡا وَ لَا تَحۡزَنُوۡا وَ اَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ

আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, আর তোমরাই বিজয়ী যদি মুমিন হয়ে থাকো।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৯))

আয়াতের সার-সংক্ষেপ

আলোচ্য আয়াতে মুমিনদের হতাশ না হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্রটি-বিচ্যুতি ও ভুল বুঝাবুঝির কারণে ওহুদের যুদ্ধে প্রথম পর্যায়ে জয়লাভ করার পর কিছুক্ষণের জন্য মুসলিমরা পরাজয় বরণ করে। যার ফলশ্রুতিতে মুসলিমদের সত্তরজন সাহাবি শাহাদাতবরণ করেন। স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আহত হন। কিন্তু এ সবের পরও আল্লাহ তাআলা যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেন এবং শত্রুরা পিছু হটে যায়। এ সাময়িক বিপর্যয়ের কারণ ছিল তিনটি-

এক. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তীরন্দাজ বাহিনীর প্রতি যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, পারস্পরিক মতভেদের কারণে তা শেষ পর্যন্ত পালিত হয়নি।

দুই. খোদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিহত হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মুসলিমরা নিরাশ হয়ে পড়ে। হতাশা হয়ে যায়। ফলে সবাই হীনমনোবল ও হতোদ্যম হয়ে পড়ে।

তিন. মদিনা শহরে অবস্থান গ্রহণ করে শক্ৰদের মোকাবেলা করার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ পালনে যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল, সেটাই ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিমদের এ তিনটি ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণেই তারা সাময়িকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিলেন।

তবে এ সাময়িক পরাজয় অবশেষে বিজয়ের রূপ ধারণ করেছিল সত্য; কিন্তু মুসলিম যোদ্ধারা আঘাতে জর্জরিত ছিলেন। মুসলিম বীরদের মৃতদেহ ছিল চোখের সামনে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও হতভাগারা আহত করে দিয়েছিলো। সর্বত্র ঘোর বিপদ ও নিরাশার ছায়া বিস্তার করেছিল।

মুসলিম মুজাহিদগণ নিজেদের ক্রটি-বিচ্যুতির জন্যেও বেদনায় মুষড়ে পড়েছিলেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে দুটি বিষয় প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছিল-

এক. অতীত ঘটনার জন্য দুঃখ ও বিষাদ।

দুই. এই আশঙ্কা যে, ভবিষ্যতের জন্য মুসলিমগণ যেন দুর্বল ও হতাশ না হয়ে পড়ে এবং বিশ্ব-নেতৃত্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ জাতি অঙ্কুরেই মনোবল হারিয়ে না ফেলে।

তাই আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানদের উপদেম দিচ্ছেন। এ দুইটি ছিদ্রপথ বন্ধ করার জন্যই আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের এ আয়াত নাজিল করেছেন। বলেছেন, তোমরা ভবিষ্যতের জন্য নিজেদের মধ্যে দূর্বল ও শিথিলতা আসতে দিয়ো না এবং অতীতের জন্যও বিমর্ষ হয়ে যেয়ো না। যদি তোমরা ঈমান ও বিশ্বাসের পথে সোজা হয়ে থাক এবং আল্লাহ্ তাআলার ওয়াদার উপর ভরসা রেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য ও আল্লাহর পথে জেহাদে অনড় থাক; তবে তোমরাই জয়ী হবে।

অতীতে যে সব ক্রটি-বিচূতি হয়ে গেছে, তার জন্য দুঃখ ও শোক প্রকাশে সময় ও শক্তি নষ্ট না করে ভবিষ্যতে সংশোধনের চিন্তা করা দরকার। ঈমান, বিশ্বাস ও রাসুলের আনুগত্য উজ্জল ভবিষ্যতের দিশারী। এগুলো হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। তবেই তোমরা জয়ী হবে। পরের আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

اِنۡ یَّمۡسَسۡکُمۡ قَرۡحٌ فَقَدۡ مَسَّ الۡقَوۡمَ قَرۡحٌ مِّثۡلُهٗ ؕ وَ تِلۡکَ الۡاَیَّامُ نُدَاوِلُهَا بَیۡنَ النَّاسِ ۚ وَ لِیَعۡلَمَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ یَتَّخِذَ مِنۡکُمۡ شُهَدَآءَ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ الظّٰلِمِیۡنَ

যদি তোমাদেরকে কোন আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তার অনুরূপ আঘাত উক্ত কওমকেও স্পর্শ করেছে। আর এইসব দিন আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন করি এবং যাতে আল্লাহ ঈমানদারদেরকে জেনে নেন এবং তোমাদের মধ্য থেকে শহীদদেরকে গ্রহণ করেন। আর আল্লাহ যালিমদেরকে ভালবাসেন না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪০)

এ আয়াতেও অন্য এক ভঙ্গিমায় মহান আল্লাহ মুসলিমদেরকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন যে, ওহুদ যুদ্ধে তোমাদের কিছু লোক আহত হয়েছে তো কি হয়েছে? তোমাদের বিরোধী দলও তো বদরের যুদ্ধে এবং ওহুদ যুদ্ধের প্রথম দিকে এইভাবেই আহত হয়েছিল। আর মহান আল্লাহ তাঁর হিকমতের দাবিতে হার-জিতের পালা পরিবর্তন করতে থাকেন। কখনো বিজয়ীকে পরাজিত করেন, আবার কখনো পরাজিতকে করেন বিজয়ী। পরের আয়াতে মহান রব সুসংবাদ ঘোষণা করেন যে-

وَ لِیُمَحِّصَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ یَمۡحَقَ الۡکٰفِرِیۡنَ

আর যাতে আল্লাহ পরিশুদ্ধ করেন ঈমানদারদেরকে এবং ধ্বংস করে দেন কাফিরদেরকে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪১)

ওহুদ যুদ্ধে মুসলিমরা তাঁদের অবহেলার কারণে সাময়িকভাবে যে পরাজয়ের শিকার হন, তাতেও ভবিষ্যতের জন্য এমন কয়েকটি যৌক্তিকতা নিহিত রয়েছে, যা মহান আল্লাহ পরের আয়াতে বর্ণনা করেছেন।

প্রথমত : মহান আল্লাহ ঈমানদারদেরকে অন্যদের থেকে পৃথক করে দেখিয়ে দেন। (কারণ, ধৈর্য ও সুদৃঢ় থাকা ঈমানের দাবি।) যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে এবং মুসিবতের সময় যাঁরা ধৈর্য ও সুদৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছেন, অবশ্যই তাঁরা সকলেই মুমিন।

দ্বিতীয়ত : কিছু লোককে শাহাদতের মর্যাদা দানে ধন্য করেন

তৃতীয়ত : ঈমানদারদেরকে তাঁদের সমস্ত পাপ থেকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ বা বিশুদ্ধ করেন। করা। আর পবিত্র ও পরিশুদ্ধ বলতে, পাপ থেকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। (ফাতহুল কাদির)

চতুর্থত : কাফেরদের ধ্বংস সাধন। কারণ, সাময়িকভাবে জয়লাভে তাদের অবাধ্যতা ও দাম্ভিকতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে এই জিনিসই তাদের ধ্বংস ও বিনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে হতাশা, দুবলতা ও হীনমনোবল থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে তাঁর উপদেশাবলী গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

আরও পড়ুন