মানুষের প্রতি দয়া করার ফজিলত
প্রতিটি সৎ কাজের বিনিময়েই মহান আল্লাহ মানুষের প্রতি অনুগ্রহ নাজিল করেন। মানুষের প্রতি দয়া করাও মহান আল্লাহর এক বড় অনুগ্রহ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে মানুষের প্রতি দয়া করার বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা ঘোষণা করেছেন। কী সেসব ফজিলত?
মানুষের প্রতি দয়া করায় রয়েছে মহান আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া অপার সম্ভাবনা। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নবিজী এমনই ঘোষণা দিয়েছেন। হাদিসের দিকনির্দেশনাগুলো হলো-
১. হজরত জারির ইবনু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ/দয়া করেন না; যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
বান্দার জন্য সবচেযে বড় পাওয়া হলো মহান আল্লাহ অনুগ্রহ বা দয়া। যে ব্যক্তি আল্লাহর দয়া তথা অনুগ্রহ পাবে, তার দুনিয়া ও পরকাল সফলতায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। অন্য হাদিসে এসেছে-
২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন একদিন এক বেদুঈন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসে দেখল সাহাবায়ে কেরাম নিজেদের শিশু সন্তানদের চুমু দিয়ে আদর করছেন। তখন সে বলল, তোমরা কি শিশুদের চুম্বন কর? আমরা তো শিশুদের চুম্বন করি না। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যদি আল্লাহ তাআলা তোমার অন্তর থেকে স্নেহ-মমতা/দয়া বের করে দেন তবে আমি কি তা বাধা দিতে সক্ষম হব?’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির প্রতি দয়া করে না; যে মানুষের প্রতি দয়া করে না। মানুষের জন্য এ দিকনির্দেশনা অনুসরণ ও অনুকরণেই রয়েছে দ্রুত আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার অন্যতম উপায়।
মানুষের প্রতি কেন দয়া দেখাবেন?
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন একদিন এক নারী তার দুটি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে আসে। ওই নারী আমার কাছে কিছু চায়। তখন আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি তাকে তা (ওই খেজুর) দিয়ে দেই। সে তা দুই ভাগ করে তার দুই মেয়েকে দেয় আর নিজে খাওয়া থেকে বিরত থাকে। তারপর সে উঠে চলে যায়। এমন সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাড়িতে প্রবেশ করেন। আমি তাঁকে ঘটনাটি বলি। তখন তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি মেয়েদের ব্যাপারে সমস্যার সম্মুখীন হয় এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে; ওই মেয়েরা তার জন্য জাহান্নামের অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।' (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
হাদিসটির মূল আলোচ্য বিষয়ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতা বা দয়ার কথা ফুটে ওঠেছে। তাদের বিপদে পাশে দাঁড়ানো। আর এতে মহান আল্লাহ ওই বান্দার ওপর খুশি হয়ে যান। ফলে ওই ব্যক্তির সার্বিক বিষয়ের উপর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ বা দয়া নাজিল হতে থাকে।
মনে রাখতে হবে
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে যেন সবার প্রতি দয়াশীল ও কোমল ছিলেন; তেমনি সব মানুষকে পরস্পরের প্রতি সহানভূতিশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যার ফলে তিনি বান্দার প্রতি অনুগ্রহ নাজিল হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘একজন মুমিন অপর মুমিনের জন্য এক ঘরের মতো, যার একাংশ অপরাংশকে সুদৃঢ় রাখে। অতপর তিনি এক হাতের আঙুল অন্য হাতের আঙুলের মধ্যে প্রবেশ করান।' (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
২. হজরত নুমান ইবনু বাশির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সব মুমিন এক ব্যক্তির (দেহের) মত, যদি তার চোখ অসুস্থ হয় তখন তার পুরো দেহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর যদি তার মাথায় ব্যথা হয় তখন তার পুরো শরীরই ব্যথিত হয়।’ (মুসলিম, মিশকাত)
৩. তিনি আরও বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তুমি ঈমানদারদের তাদের পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়া-অনুগ্রহের ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোনো অঙ্গ অসুস্থ হয় তখন পুরো শরীর তার জন্য বিনিদ্র ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
হাদিসের অসংখ্য বর্ণনায় বান্দার প্রতি উত্তম ব্যবহার ও দয়া-মায়া দেখানোর দিকনির্দেশনা এসেছে। কেননা বান্দার প্রতি দয়া-অনুগ্রহের মাধ্যমেই আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া সহজ হয়।
সুতরাং উম্মতে মুহাম্মাদিসহ বিশ্ববাসীর উচিত, হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুসরণ ও অনুকরণ করে পরস্পরের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ দেখানো। যার ফলে বান্দা পাবেন মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত হাদিসগুলোর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম