দুনিয়া ও পরকালের সফলতাই হজের আনুষ্ঠানিকতা
আট জুলাই পালিত হবে পবিত্র হজ। এমনটিই ঘোষণা করেছে সৌদি আরব। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম পুরুষ ও নারীরা এদিন হজ সম্পাদন করবেন। পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে তারা। হজের মাধ্যমেই তারা পাবে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসের বর্ণনায় এমনটিই ঘোষণা করেছেন।
মানুষ হজ পালনের মাধ্যমে নৈতিক ও আত্মিক আনুগত্যের সর্বোত্তম শিক্ষা পায়। দুনিয়ায় যেমন বিশ্ব মুসলিমের মধ্যে তৈরি হয় অনুপম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। আবার পরকালের কঠিন সময়ে আল্লাহর রহমত পাওয়ার রসদও পাওয়া যায় হজের এ আনুষ্ঠানিকতায়। তাই তো হজ দুনিয়া ও পরকালের সফলতার গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা। সফলতার এ পথে হাটতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ هُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ - فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ مَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا ؕ وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا ؕ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ
‘নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর; মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত এবং সারা বিশ্বের মানুষের জন্য হেদায়েত ও বরকতময়। এতে রয়েছে মকামে ইবরাহিমের মত সুস্পষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ রয়েছে এ পর্যন্ত পৌছার। আর যে লোক তা মানে না। আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই পরোয়া করেন না।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৬ ও ৯৭)
আল্লাহর এ নির্দেশ পালনে মুসলিম উম্মাহ জিলহজের ৮ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পবিত্র নগরী মক্কা, আরাফা, মিনা, মুজদালিফায় মহান আল্লাহর নির্ধারিত কাজগুলো সম্পাদনের মাধ্যমে হজ করে থাকেন। হজের এ সফরে মুসলিম উম্মাহ ৩টি ফরজ, বেশ কিছু ওয়াজিব এবং সুনির্দিষ্ট কিছু সুন্নাত কাজ পালনের মাধ্যমে হজ সম্পাদন করে থাকে। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে তৈরি হয় বান্দার একান্ত সুসম্পর্ক। দুনিয়া ও পরকালের সফলতায় হাদিসে রয়েছে হজ পালনকারীর জন্য কিছু সুসংবাদ-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমন অবস্থায় ফিরে আসে, যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রুপই হয়ে যায়।’ (বুখারি)
২. হজের অর্জন সম্পর্কে নিজেদের মনে রাখতে হবে যে, আরাফাতের দিনই আল্লাহ তাআলা নিজ বান্দার প্রতি (এত পরিমাণ) অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা (বড়) গুনাহ ক্ষমা করে দেন, (যা দেখে) ‘শয়তান আরাফার দিন অপেক্ষা অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না।’
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, ‘একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেশত ছাড়া অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।’
যাদের নিয়ত খালেস থাকে এবং যথাযথভাবে হজ সম্পাদন করে তারা সেখান থেকে হজের নৈতিক ও আত্মিক সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে শান্তি ও সৌহার্দ্যের বাণী নিয়ে আল্লাহ প্রেমিক মুমিন বান্দা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। জীবনের বাকী দিনগুলো পাপ-পংকিলতা ও অনাচারমুক্তভাবে বেচে থাকার সমাজ গড়ে তোলে। চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাত পেতে নিজেদের তৈরিতে ব্যস্ত থাকে।
মনে রাখতে হবে
মুমিন বান্দা যখন হজ পালনের নিয়ত করে; তখন থেকেই ওই বান্দা আল্লাহ তাআলার সম্মানিত মেহমানে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কেননা সে দুনিয়ার সব লোভ-লালসা থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরকালের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিসহ হজে গমনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে যায়।
হজ আদায়ের মাধ্যমে নিজেকে সব পাপ থেকে মুক্ত করতে, নিষ্পাপ মাছুম হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে সে বদ্ধপরিকর। গুনাহ মাফের মাধ্যমে সে নিজেকে উন্নত ও পবিত্র চরিত্রের আলোয় আলোকিত করতে নেয় দীপ্ত শপথ।
হজের জন্য দুনিয়ার যাবতীয় মোহ ও মায়া ত্যাগ করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব হজ পালনেচ্ছু ব্যক্তিকে যথাযথভাবে হজের সব আনুষ্ঠানিকতা সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস