হজের গুরুত্ব ও ফজিলত
ঘনিয়ে আসছে হজ। নির্ধারিত সময়ে আল্লাহর জন্য নবিজীর দেখানো পথে কাবা শরিফ তাওয়ায়, সাফা-মারওয়া সায়ী, আরাফা-মুজদালেফায় অবস্থান, মিনায় কংকর নিক্ষেপসহ কুরবানি ও মাথা মুন্ডন করার মতো নির্ধারিত কাজ সম্পাদন করার নাম হজ। কোরআন সুন্নায় হজের গুরুত্ব ও ফজিলত ওঠে এসেছে। কী সেসব গুরুত্ব ও ফজিলত?
হজ কী?
হজ মহান আল্লাহর নির্দেশ এবং একটি ইবাদত। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হজ। আরবি হজ শব্দের অর্থ সংকল্প করা বা ইচ্ছা করা। কোরআনুল কারিমে ১০২ বার হজ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। হজ আর্থিক এবং শারীরিক ইবাদত। তাই আল্লাহ তাআলা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক ব্যক্তিকে পরিপূর্ণভাবে হজ সম্পাদন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ফরজ হজের উদ্দেশ্য হলো মহান আল্লাহর তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ তাআলা হজের নির্দেশ দিয়ে বলেন-
اَلۡحَجُّ اَشۡهُرٌ مَّعۡلُوۡمٰتٌ ۚ فَمَنۡ فَرَضَ فِیۡهِنَّ الۡحَجَّ فَلَا رَفَثَ وَ لَا فُسُوۡقَ ۙ وَ لَا جِدَالَ فِی الۡحَجِّ ؕ وَ مَا تَفۡعَلُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یَّعۡلَمۡهُ اللّٰهُ ؕ وَ تَزَوَّدُوۡا فَاِنَّ خَیۡرَ الزَّادِ التَّقۡوٰی ۫ وَ اتَّقُوۡنِ یٰۤاُولِی الۡاَلۡبَابِ
‘হজের সময় নির্দিষ্ট মাসসমূহ। অতএব এই মাসসমূহে যে নিজের উপর হজ আরোপ করে নিল, তার জন্য হজে অশ্লীল ও পাপ কাজ এবং ঝগড়া-বিবাদ বৈধ নয়। আর তোমরা ভাল কাজের যা কর, আল্লাহ তা জানেন এবং পাথেয় গ্রহণ কর। নিশ্চয় উত্তম পাথেয় তাকওয়া। আর হে বিবেক সম্পন্নগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৯৭)
নির্ধারিত কয়েকদিন সুনির্দিষ্ট কিছু কাজ সম্পাদন করেই জান্নাত যাওয়ার ইবাদত হজ। যাবতীয় পাপ থেকে নিষ্পাপ শিশুর মতো হওয়ার মাধ্যমও হজ। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করলো এবং স্ত্রী সহবাস, যাবতীয় অশ্লীল কাজ ও গালমন্দ থেকে বিরত থাকলো; সে ওই দিনের মতো (নিষ্পাপ) হয়ে ফিরলো; যেদিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছিলো।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
২. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লক্ষ্য করে বলেছিলেন, ‘হে আমর! তুমি কি জানো না যে, ইসলাম তার আগের সব গুনাহ নষ্ট করে দেয়? হিজরত তার আগের সব গুনাহ ধ্বংস করে দেয়? আর হজ তার আগের সব গুনাহ মোচন করে দেয়?’ (মুসলিম, মিশকাত)
৩. হজ শুধু গুনাহ মোচনের উপায়ই নয় বরং হজের বিনিময় শুধু জান্নাত। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরার মধ্যবর্তী সময়ের ছগিরা গুনাহসমূহের কাফফারা স্বরূপ। আর মাবরূর (কবুল) হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া কিছুই নয়।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
৪. হজ ও ওমরা গুনাহ দূর করা এবং জান্নাত দেওয়ার পাশাপাশি দুনিয়ায় মানুষের দারিদ্রতাও দূর করে দেয়। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহজু আনহু বলেন, তোমরা হজ ও ওমরার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখ। কারণ এ দুটি দারিদ্রতা এবং গুনাহ উভয়টি দূর করে দেয়; যেমন হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। আর মাবরূর হজের প্রতিদান জান্নাত বৈ কিছুই নয়।’ (তিরমিজি, ইবনে খুজায়মা, নাসাঈ)
মনে রাখতে হবে
হজ প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। কারণ নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক সাহাবির জিজ্ঞাসাবাদে সর্বোত্তম তিনটি বিশেষ কাজের মধ্যে হজের কথাও বলেছিলেন। বিষয়টি হাদিসে এভাবে এসেছে-
৫. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সর্বোত্তম কাজ কোনটি? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এরপর কী? তিনি বলেছিলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। এরপর কী? তিনি বলেছিলেন, মাবরূর হজ।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর জন্য নবিজীর দেখানো নিয়েম হজ পালনের মাধ্যমে গুনাহ ও দারিদ্রমুক্ত জীবন পাওয়ার চেষ্টা করা। নিষ্পাপ হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করে পরকালে সুনিশ্চিত জান্নাতের অধিকারী হওয়া।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সামর্থ্যবান সবাইকে হজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম