ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ কি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ জিকির?

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:১৯ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০২২

মহান আল্লাহ মানুষকে এ মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমাদের প্রতি যে কিতাব নাজিল করা হয়েছে, তা থেকে তেলাওয়াত করো এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করো। যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, এ নামাজ তাদের অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। চমৎকার এ ঘোষণায় হাফেজে কোরআনগণ ১৮ তারাবির নামাজ শুরু করবেন। ধারাবাহিকভাবে সুরা আনকাবুতের বাকি অংশসহ সুরা রূম, সুরা লোকমান, সুরা সাজদাহ এবং সুরা আহযাবের ৩০তম আয়াত পর্যন্ত পড়বেন। শেষ হবে ২১তম পাড়ার তেলাওয়াত। তারাবির প্রথম রাকাতে হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে শুরুতেই ধ্বনিত হয়-

 اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ

'তোমার প্রতি যে কিতাব অহি করা হয়েছে, তা থেকে তেলাওয়াত করো এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করো। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা করো।' (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

আল্লাহ ছাড়া এমন সুন্দর ঘোষণা ও উপদেশ মানুষকে আর কে দিতে পারে? তিনিই মহান; তিনিই মানুষের একমাত্র মুক্তিদাতা। সঠিক পথ তিনিই মানুষকে দেখাতে পারেন। কত চমৎকার উপদেশ তিনি দিলেন। এ উপদেশে তিনি কী বুঝিয়েছেন?

এ আয়াতে যদিও দেখা যায় যে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে সব মুসলিমদেরকেই উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এতে দুটি অংশ আছে। এক : কোরআন তেলাওয়াত; দুই : নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।

কারণ এ দুইটি জিনিসই মুমিনকে এমন সুগঠিত সুন্দর অনুপম চরিত্র ও উন্নত তুলাহীন যোগ্যতার অধিকারী করে দেবে; যার সাহায্যে সে অন্যায়ের প্রবল বন্যা এবং দুস্কৃতির ভয়াবহ মহামারির মোকাবিলায় সঠিক পথে থাকতে পারবে।

প্রথম কাজ  : কোরআন তেলাওয়াত

আল্লাহর প্রকৃত বান্দারাই কোরআন তেলাওয়াতের শক্তি ও হিম্মত পেয়ে থাকে। কোরআন তেলাওয়াতের এ শক্তি মানুষ তখনই অর্জন করতে পারে যখন সে কোরআনের শুধুমাত্র শব্দগুলো পাঠ করেই থেকে যায় না বরং তার শিক্ষাগুলোও সঠিকভাবে অনুধাবন করে হৃদয়ের প্রতিটি স্থানে সেগুলোকে সঞ্চারিত করে যেতে থাকে।

আবার যে তেলাওয়াতের পরে মানুষের মন-মানসিকতা, চিন্তা-চেতনা ও চরিত্র-কর্মনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসে না বরং কোরআন পড়ার পরও কোরআন যা নিষেধ করে মানুষ তা সব করে যেতে থাকে; তাহলে বুঝতে হবে এটি কোনো মুমিনের কোরআন তেলাওয়াত হতে পারে না।

মূলতঃ কোরআনের হারামকৃত জিনিসকে যে হালাল করে নিয়েছে; যে কোরআনের প্রতি ঈমানই আনেনি। এ অবস্থাটিকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি ছোট্ট বাক্যের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত চমৎকারভাবে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, 'কোরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ।' (মুসলিম)

দ্বিতীয় কাজ : নামাজ প্রতিষ্ঠা করা

কোরআন তেলাওয়াতের পর দ্বিতীয় যে কাজটির প্রতি উম্মতকে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ এখানে দেওয়া হয়েছে তাহলো- 'নামাজ প্রতিষ্ঠা করা'৷ নামাজকে অন্যান্য ফরজ কাজ থেকে পৃথক করার এই রহস্যও বর্ণিত হয়েছে এভাবে- নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং দ্বীনের স্তম্ভ। এর উপকারিতা এই যে, 'যে ব্যক্তি নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, নামাজ তাকে অশ্লীল ও গৰ্হিত কাজ থেকে বিরত রাখবে।' (ইবনে কাসির)

এ আয়াতে উল্লেখিত 'ফাহশা’ শব্দের অর্থ এমন সুস্পষ্ট মন্দ কাজ, যাকে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তিই মন্দ মনে করে; যেমন- ব্যভিচার, অন্যায় হত্যা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি। পক্ষান্তরে ‘মুনকার’ এমন কথা ও কাজকে বলা হয়, যার হারাম ও অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে শরিয়ত বিশারদগণ একমত।' (বাগভি, ফাতহুল কাদির)

এই ‘ফাহশা’ ও ‘মুনকার’ শব্দ দুটির মধ্যে যাবতীয় অপরাধ এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ প্রবেশ করেছে। আর এগুলো অবশ্যই মন্দ এবং সৎকর্মের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। নামাজই এ সব বাধা দূরীভূত করে দেয়।

প্রশ্ন আসতে পারে

অনেক মানুষকে নামাজি দেখা যাওয়া সত্বেও তারা বড় বড় গুনাহে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। এটা আলোচ্য আয়াতের পরিপন্থী নয় কি? এরও কয়েকটি উত্তর দেওয়া হয়েছে। তাহলো-

১. প্রকৃত নামাজ আদায়কারীকে এ নামাজ অবশ্যই অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখবে। হজরত হাসান ও কাতাদাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যার নামাজ তাকে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে দূরে রাখল না সে নামাজ দ্বারা আল্লাহ থেকে দূরেই রয়ে গেল।' (তাবারি)

২. যারা নিয়মিত নামাজ আদায় করবে, তাদের এ অবস্থাটি তৈরি হবে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'এক লোক নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললো, এক লোক রাতে নামাজ আদায় করে, আর সকাল হলে চুরি করে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অচিরেই তার নামাজ তাকে তা থেকে নিষেধ করবে।' (মুসনাদে আহমাদ) 

মনে রাখতে হবে

আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ। তা হোক কোরআন তেলাওয়াত আর হোক নামাজ। আল্লাহর স্মরণ যে সর্বশ্রেষ্ঠ হাদিসের অনেক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে। তাছাড়া জিকিরের গুরুত্বও অনেক বেশি। যেমন-

এক. আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ইবাদত। আর নামাজ বড় ইবাদাত হওয়ার কারণ হচ্ছে, এতে আল্লাহর জিকির থাকে। সুতরাং যে নামাজে জিকির বেশি সে নামাজ বেশি উত্তম।' (ইবনে কাসির)

দুই. আল্লাহর স্মরণ অনেক বড় জিনিস, সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। মানুষের কোনো কাজ এর চেয়ে বেশি বড় নয়।' (তাবারি)

তিন. তোমার আল্লাহকে স্মরণ করার চেয়ে আল্লাহ কর্তৃক তোমাকে স্মরণ করা অনেক বেশি বড় জিনিস।' (তাবারি)

এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে এ মর্মে ঘোষণা করেছেন, 'তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমি তোমাদের স্মরণ করবো।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২)

কাজেই বান্দা যখন নামাজে আল্লাহকে স্মরণ করবে। তখন অবশ্যই আল্লাহও তাকে স্মরণ করবেন। আর বান্দার আল্লাহকে স্মরণ করার তুলনায় আল্লাহর বান্দাকে স্মরণ করা অনেক বেশি মর্যাদা ও সম্মানের। বান্দা যখন আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন আল্লাহ ওয়াদা অনুযায়ী স্মরণকারী বান্দাকে ফেরেশতাদের সমাবেশেও স্মরণ করেন। আল্লাহর এ স্মরণ ইবাদতকারী বান্দার সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত।

সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫-৬৯

আজকের তারাবিতে সুরা আনকাবুতের শেষাংশ তেলাওয়াত করা হবে। প্রথম আয়াতে কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ তথা তার জিকির করার নির্দেশ রয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শ্রেষ্ঠ মুজিজার বর্ণনাও দিয়েছেন। তাহলো- নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিরক্ষর হওয়া। অথচ তাঁর প্রতি নাজিল হয়েছে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব- কোরআনুল কারিম। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَا کُنۡتَ تَتۡلُوۡا مِنۡ قَبۡلِهٖ مِنۡ کِتٰبٍ وَّ لَا تَخُطُّهٗ بِیَمِیۡنِکَ اِذًا لَّارۡتَابَ الۡمُبۡطِلُوۡنَ -  بَلۡ هُوَ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ فِیۡ صُدُوۡرِ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ ؕ وَ مَا یَجۡحَدُ بِاٰیٰتِنَاۤ اِلَّا الظّٰلِمُوۡنَ

‘আপনি তো এর আগে কোনো কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় হাত দ্বারা কোনো কিতাব লেখেননি; তাহলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত। বরং যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে ইহা (কোরআন) তো সুস্পষ্ট আয়াত। কেবল বে-ইনসাফরাই আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৮-৪৯)

নবিজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো লেখাই দেখে দেখে পড়তে পারতেন না। কোনো লেখা লিখতেও সক্ষম ছিলেন। আর এ নিরক্ষর অবস্থায়ই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনের প্রথম ৪০টি বছর পণ্ডিত মক্কাবাসীর সামনে আল্লাহর কোরআন নিয়ে দাপটের সঙ্গে দ্বীনের দাওয়াত ও সংগ্রাম করেই অতিবাহিত করেন।

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো আসমানি কিতাবের অনুসারীদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখেননি। তাদের কাছ থেকে আসমানি কিতাবের কোনো বর্ণনাও শোনেননি। আর তৎকালীন সময়ে মক্কায় কোনো আসমানি কিতাবের অনুসারী পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গও ছিল না।

অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ বছরে উপনীত হওয়ার পর তাঁর মুখ থেকে এমন শব্দমালা উচ্চারিত হতে লাগলো, যা বিষয়বস্তু ও অর্থের দিক থেকে যেমন ছিল মুজেজাস্বরূপ এবং ভাষাগত শাব্দিক বিশুদ্ধতা ও ভাষার সৌন্দর্য ছিল অতুলনীয়।

নবিজীর শ্রেষ্ঠ মুজেজা

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিরক্ষরতাই ছিল তৎকালীন সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজেজা। যা মক্কার পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের জন্য ছিল এক মহা চিন্তা ও শিক্ষার বিষয়। আর এটা ছিল তাওহিদ, রেসালাত ও আখেরাতের সত্যতার ওপর বিশ্বাস স্থাপনের এক মহা প্রমাণ। এ কুরআনই বিশ্ববাসীর জন্য রহমত। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَوَ لَمۡ یَکۡفِهِمۡ اَنَّاۤ اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ یُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَرَحۡمَۃً وَّ ذِکۡرٰی لِقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ

'এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাজিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্য রয়েছে রহমত ও উপদেশ।' (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫১)

আবার ঈমানদারদের প্রতি ইবাদত করার ঘোষণা ও সুনিশ্চিত মৃত্যুর ঘোষণা এসেছে। যেন তারা আল্লাহকে রব বলে স্বীকার করে। কেননা তাদের সবাইকে একদিন ফিরে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন-

 یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ اَرۡضِیۡ وَاسِعَۃٌ فَاِیَّایَ فَاعۡبُدُوۡنِ -  کُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَۃُ الۡمَوۡتِ ۟ ثُمَّ اِلَیۡنَا تُرۡجَعُوۡنَ

'হে আমার ঈমানদার বান্দাগণ, আমার পৃথিবী প্রশস্ত। অতএব তোমরা আমারই এবাদত কর। জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। অতঃপর তোমরা আমারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।' (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৫৬-৫৭)

সুরা রূম : আয়াত ০১-৬০

মক্কায় অবতীর্ণ ৬০ আয়াত বিশিষ্ট সুরায় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তকেন্দ্রিক আলোচনা ওঠে এসেছে। যাতে নবুয়তের সত্যতার দলিল প্রমাণ উপস্থাপিত হয়েছে।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোমানদের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং এ সম্পর্কে কুরআনের আয়াতও নাজিল হয়েছিল। অবশেষে এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়েছে এ সুরায়। সুরাটিতে দুনিয়ার জীবনের ব্যাপ্তি নিতান্ত ক্ষণস্থায়ী উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন- ‘তিনি যাকে ইচ্ছা বিজয় দান করেন আবার সেই বিজয়ীকে পরাজিতও করেন।’ এতেই প্রমাণিত হয় যে, কারো বিজয় তার সত্যতার প্রমাণ নয়।

দুনিয়ার জীবনের সম্মান-মর্যাদা, অপমান সবাই আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন। এরপরও অবিশ্বাসী সম্প্রদায় মুসলমানদের সাময়িক সময়ের দারিদ্র্যতার জন্য হেয় প্রতিপন্ন করে। যা সবিস্তার আলোচিত হয়েছে সুরা রূমে। এ সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

বৈবাহিক জীবনে শান্তির জন্য পারস্পরিক সম্প্রীতি জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 وَ مِنۡ اٰیٰتِهٖۤ اَنۡ خَلَقَ لَکُمۡ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ اَزۡوَاجًا لِّتَسۡکُنُوۡۤا اِلَیۡهَا وَ جَعَلَ بَیۡنَکُمۡ مَّوَدَّۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوۡمٍ یَّتَفَکَّرُوۡنَ

'আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। তাঁর আর ও এক নিদর্শন হচ্ছে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।' ' (সুরা রূম : আয়াত ২১)

ফিতরাত সম্পর্কিত আলোচনা। আল্লাহ বলেন-

فَاَقِمۡ وَجۡهَکَ لِلدِّیۡنِ حَنِیۡفًا ؕ فِطۡرَتَ اللّٰهِ الَّتِیۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیۡهَا ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِخَلۡقِ اللّٰهِ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ٭ۙ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ مُنِیۡبِیۡنَ اِلَیۡهِ وَ اتَّقُوۡهُ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ

'তুমি একনিষ্ঠ ভাবে নিজেকে ধর্মের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটাই আল্লাহর ফিতরাত বা প্রকৃতি, যার উপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোনো পরিবর্তন নেই। এটাই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না। সবাই তাঁর অভিমুখী হও এবং ভয় কর, নামায কায়েম কর এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।' (সুরা রূম : আয়াত ৩০-৩১)

বাতিলপন্থিদের ভ্রান্ত পরিবেশ থেকে দূরে থাকা প্রসঙ্গ। আল্লাহ বলেন-

 فَاِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی وَ لَا تُسۡمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوۡا مُدۡبِرِیۡنَ -  وَ مَاۤ اَنۡتَ بِهٰدِ الۡعُمۡیِ عَنۡ ضَلٰلَتِهِمۡ ؕ اِنۡ تُسۡمِعُ اِلَّا مَنۡ یُّؤۡمِنُ بِاٰیٰتِنَا فَهُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ

'অতএব, আপনি মৃতদেরকে শোনাতে পারবেন না এবং বধিরকেও আহবান শোনাতে পারবেন না, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। আপনি অন্ধদেরও তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে পথ দেখাতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরই শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। কারণ তারা মুসলমান।' (সুরা রূম : আয়াত ৫২-৫৩)

আয়াতে এমন সব লোককে মৃত বলা হয়েছে, যাদের বিবেক মরে গেছে, যাদের মধ্যে নৈতিক জীবনের ছিটেফোটাও নেই এবং যাদের আপন প্রবৃত্তির দাসত্ব, জিদ ও একগুয়েমি সেই মানবীয় গুণাবলীর অবসান ঘটিয়েছে; যা মানুষকে হক কথা বুঝার ও গ্রহণ করার যোগ্য করে তোলে।

হজরত কাতাদাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, এ উদাহরণটি আল্লাহ তাআলা কাফেরদের উদ্দেশ্য করে পেশ করেছেন। যেভাবে মৃতরা আহবান শুনতে পায় না, তেমনি কাফেররাও শুনতে পায় না। অনুরূপভাবে যেভাবে কোনো বধির ব্যক্তি পেছনে ফিরে চলে গেলে তাকে পেছন থেকে ডাকলে শুনতে পায় না, তেমনি কাফের কিছুই শুনতে পায় না, আর শুনলেও সেটা দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। (তাবারি)

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদর যুদ্ধের পর বদরের কুপের পাশে যেখানে কাফেরদের লাশ রাখা ছিল সেখানে দাঁড়িয়ে কাফেরদের সম্বোধন করে বললেন, তোমাদের মাবুদরা তোমাদেরকে যা দেওয়ার ওয়াদা করেছে তা কি তোমরা পেয়েছ? তারপর তিনি বললেন, তারা এখন আমি যা বলছি তা শুনছে। তারপর এ হাদিসটি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জানানো হলে তিনি বললেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো এটাই বলেছেন যে, তারা এখন অবশ্যই জানছে যে, আমি তাদেরকে যা বলেছি তা-ই যথাযথ। তারপর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন৷' (বুখারি)

> পরকালের (হাশরে) আল্লাহর সামনে মিথ্যা বলা প্রসঙ্গ। আল্লাহ বলেন-

 وَ یَوۡمَ تَقُوۡمُ السَّاعَۃُ یُقۡسِمُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ۬ۙ مَا لَبِثُوۡا غَیۡرَ سَاعَۃٍ ؕ کَذٰلِکَ کَانُوۡا یُؤۡفَکُوۡنَ -  وَ قَالَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ وَ الۡاِیۡمَانَ لَقَدۡ لَبِثۡتُمۡ فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ اِلٰی یَوۡمِ الۡبَعۡثِ ۫ فَهٰذَا یَوۡمُ الۡبَعۡثِ وَ لٰکِنَّکُمۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ

'যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা কসম খেয়ে বলবে যে, এক মুহুর্তেরও বেশী অবস্থান করিনি। এমনিভাবে তারা সত্যবিমুখ হত। যাদের জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে, তারা বলবে আমরা আল্লাহর কিতাব মতে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছি। এটাই পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা তা জানতে না।' (সুরা রূম : আয়াত ৫৫-৫৬)

হাশরে ময়দানে কাফেররা কসম খেয়ে এই মিথ্যা কথা বলবে, 'আমরা দুনিয়াতে অথবা কবরে এক মুহুর্তের বেশি থাকিনি। অন্য এক আয়াতে মুশরিকদের এই উক্তি বর্ণিত আছে, 'তারা কসম খেয়ে বলবে আমরা মুশরিক ছিলাম না।' (সুরা আনআম : আয়াত ২৩)

হাশরের ময়দানে রাব্বুল আলমিনের আদালত কায়েম হবে। তিনি সবাইকে স্বাধীনতা দেবেন। তারা সত্য কিংবা মিথ্যা যে কোনো বিবৃতি দিতে পারবে। কেননা, রাব্বুল আলমিনের ব্যক্তিগত জ্ঞানও পূর্ণমাত্রায় আছে এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের জন্যে তিনি তাদের স্বীকারোক্তি করা না করার মুখাপেক্ষী নন।

মানুষ যখন মিথ্যা বলবে, তখন তার মুখ মোহরাঙ্কিত করে দেয়া হবে এবং তার হাত-পা ও চামড়া থেকে সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পূর্ণ সত্য ঘটনা বিবৃত করে দেবে। এরপর আর কোনো প্রমাণ আবশ্যক হবে না। আলোচ্য আয়াতের অর্থ তাই।

কোরআনের অন্যান্য আয়াত থেকে জানা যায় যে, হাশরের মাঠে বিভিন্ন অবস্থানস্থল হবে এবং প্রত্যেক অবস্থানস্থলের অবস্থা ভিন্নরূপ হবে। এক অবস্থানস্থলে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারও কথা বলার অধিকার থাকবে না। যাকে অনুমতি দেওয়া হবে, সে কেবল সত্য ও নির্ভুল কথা বলতে পারবে মিথ্যা বলার সামৰ্থ্য থাকবে না। যেমন এরশাদ হয়েছে- 'যখন সেদিন আসবে তখন আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কথা বলতে পারবে না।' (সুরা হুদ : আয়াত ১০৫)

এর বিপরীতে হাদিসের বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে, 'কবরে যখন কাফেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমার পালনকর্তা কে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে? তখন সে বলবে, ‘হায়, হায়, আমি কিছুই জানি না।' (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ)

এরপর সুরাটির শেষে আল্লাহ তাআলা নবিজীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন-

 فَاصۡبِرۡ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ وَّ لَا یَسۡتَخِفَّنَّکَ الَّذِیۡنَ لَا یُوۡقِنُوۡنَ

'অতএব, আপনি সবর করুন। আল্লাহর ওয়াদা সত্য। যারা বিশ্বাসী নয়, তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।' (সুরা রূম : আয়াত ৬০)

সুতরাং আপনাকে যে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাতে ধৈর্য ধারণ করুন এবং আল্লাহর পথে দাওয়াতেও লেগে থাকুন, তাদের কাছ থেকে বিমুখ হওয়া দেখলেও তা যেন আপনাকে আপনার কাজ থেকে বিমুখ না করে। আর বিশ্বাস করুন যে, আল্লাহর ওয়াদা হক। এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটা বিশ্বাস থাকলে আপনার পক্ষে ধৈর্য ধারণ করা সহজ হবে। কারণ, বান্দা যখন জানতে পারে যে, তার কাজ নষ্ট হচ্ছে না, বরং সে সেটাকে পূর্ণমাত্রায় পাবে, তখন এ পথে যত কষ্টের মুখোমুখিই সে হোক না কেন, সে সেটাকে ভ্ৰক্ষেপ করবে না, কঠিন কাজও তার জন্য সহজ হয়ে যায়, বেশি কাজও তার কাছে অল্প মনে হয়, আর তার পক্ষে ধৈর্য ধারণ করা সহজ হয়ে যায়।

সুরা লোকমান : আয়াত ০১-৩৪

মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপদেশের সুরা হিসেবে পরিচিত সুরা লোকমান। যেখানে বাবা তার সন্তানকে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে উপদেশ দিচ্ছেন। সুরাটিতে ৩৪ আয়াত ও ৪টি রুকু রয়েছে। সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ।

অনেক জ্ঞানের অধিকারী লোকমান হাকিমের বিস্তারিত ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য অনেক বিধান নির্ধারণ করেছেন। তাছাড়া একজন পিতা তার সন্তানকে যে উপদেশ দেয়া উচিত; তাও বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এ সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

১. আল্লাহর নাফরমানি থেকে বিরত থাকা জরুরি। নাফরমানির শাস্তি শুধুমাত্র আখিরাতে নয়, দুনিয়াতেও হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَهۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ٭ۖ وَّ یَتَّخِذَهَا هُزُوًا ؕ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ مُّهِیۡنٌ -  وَ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِ اٰیٰتُنَا وَلّٰی مُسۡتَکۡبِرًا کَاَنۡ لَّمۡ یَسۡمَعۡهَا کَاَنَّ فِیۡۤ اُذُنَیۡهِ وَقۡرًا ۚ فَبَشِّرۡهُ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ

'একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্ রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি। যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দু'কান বধির। সুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।' (সুরা লুকমান : আয়াত ৬-৭)

২. হজরত লোকমানকে প্রদত্ত হিকমতের বর্ণনা ও হজরত লোকমান কর্তৃক উপদেশ। আল্লাহ বলেন-

وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا لُقۡمٰنَ الۡحِکۡمَۃَ اَنِ اشۡکُرۡ لِلّٰهِ ؕ وَ مَنۡ یَّشۡکُرۡ فَاِنَّمَا یَشۡکُرُ لِنَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ -  وَ اِذۡ قَالَ لُقۡمٰنُ لِابۡنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِکۡ بِاللّٰهِ ؕؔ اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ

'আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত। আমি লোকমানকে প্রজ্ঞা দান করেছি এই মর্মে যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হও। যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল নিজ কল্যানের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর যে অকৃতজ্ঞ হয়, আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।' (সুরা লোকমান : ১‌২-১৩)

 وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡهِ ۚ حَمَلَتۡهُ اُمُّهٗ وَهۡنًا عَلٰی وَهۡنٍ وَّ فِصٰلُهٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیۡکَ ؕ اِلَیَّ الۡمَصِیۡرُ

'আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই নিকট ফিরে আসতে হবে।' (সুরা লোকমান : আয়াত ১৪)

وَ اِنۡ جَاهَدٰکَ عَلٰۤی اَنۡ تُشۡرِکَ بِیۡ مَا لَیۡسَ لَکَ بِهٖ عِلۡمٌ ۙ فَلَا تُطِعۡهُمَا وَ صَاحِبۡهُمَا فِی الدُّنۡیَا مَعۡرُوۡفًا ۫ وَّ اتَّبِعۡ سَبِیۡلَ مَنۡ اَنَابَ اِلَیَّ ۚ ثُمَّ اِلَیَّ مَرۡجِعُکُمۡ فَاُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ

'পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরিক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে, যার জ্ঞান তোমার নেই; তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে সহঅবস্থান করবে। যে আমার অভিমুখী হয়, তার পথ অনুসরণ করবে। অতপর তোমাদের প্রত্যাবর্তন আমারই দিকে এবং তোমরা যা করতে, আমি সে বিষয়ে তোমাদেরকে জ্ঞাত করবো।' (সুরা লোকমান : আয়াত ১৫)

 یٰبُنَیَّ اِنَّهَاۤ اِنۡ تَکُ مِثۡقَالَ حَبَّۃٍ مِّنۡ خَرۡدَلٍ فَتَکُنۡ فِیۡ صَخۡرَۃٍ اَوۡ فِی السَّمٰوٰتِ اَوۡ فِی الۡاَرۡضِ یَاۡتِ بِهَا اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَطِیۡفٌ خَبِیۡرٌ

'হে ছেলে, কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় অতপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, তবে আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন।' (সুরা লোকমান : আয়াত ১৬)

 یٰبُنَیَّ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ وَ اۡمُرۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ انۡهَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ اصۡبِرۡ عَلٰی مَاۤ اَصَابَکَ ؕ اِنَّ ذٰلِکَ مِنۡ عَزۡمِ الۡاُمُوۡرِ -  وَ لَا تُصَعِّرۡ خَدَّکَ لِلنَّاسِ وَ لَا تَمۡشِ فِی الۡاَرۡضِ مَرَحًا ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ کُلَّ مُخۡتَالٍ فَخُوۡرٍ -  وَ اقۡصِدۡ فِیۡ مَشۡیِکَ وَ اغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِکَ ؕ اِنَّ اَنۡکَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ

'হে বৎস, নামাজ প্রতিষ্ঠা কর, সৎকাজে আদেশ দাও, মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। পদচারণায় মধ্যবর্তিতা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।' (সুরা লুকমান : আয়াত ১৭-১৯)

৩. ইসলামের অন্যান্য নীতি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-

یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمۡ وَ اخۡشَوۡا یَوۡمًا لَّا یَجۡزِیۡ وَالِدٌ عَنۡ وَّلَدِهٖ ۫ وَ لَا مَوۡلُوۡدٌ هُوَ جَازٍ عَنۡ وَّالِدِهٖ شَیۡئًا ؕ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّکُمُ الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَا ٝ وَ لَا یَغُرَّنَّکُمۡ بِاللّٰهِ الۡغَرُوۡرُ  -

'হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে।' সুরা লুকমান : আয়াত ৩৩)

 اِنَّ اللّٰهَ عِنۡدَهٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَ یُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ ۚ وَ یَعۡلَمُ مَا فِی الۡاَرۡحَامِ ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌ مَّاذَا تَکۡسِبُ غَدًا ؕ وَ مَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ

'নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।' (সুরা লুকমান : আয়াত ৩৩)

সুরা আস-সাজদাহ (০১-৩০)

মক্কায় নাজিল হওয়া ৩০ আয়াত বিশিষ্ট সুরা 'আস-সাজদাহ'। পবিত্র কুরআনের সত্যতার বিবরণ স্থান লাভ করেছে এ সুরায়। তাছাড়া আল্লাহর একত্ববাদ, পরকাল ও পরকালীন জীবন সম্পর্কিত আলোচনাও স্থান পেয়েছে। সুরা লোকমানে আসমান-জমিন সৃষ্টির বর্ণনা করা হয়েছে। আর এ সুরায় বিশ্বসৃষ্টির ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। এ সুরার আলোচ্য বিষয়গুলো হলো-

১. কেয়ামত দিনের দৈর্ঘ্য সম্পর্কিত আলোচনা। আল্লাহ বলেন-

'আল্লাহ যিনি নভোমন্ডল, ভুমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতপর তিনি আরশে বিরাজমান হয়েছেন। তিনি ব্যতিত তোমাদের কোনো অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না? তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতপর তা তাঁর কাছে পৌছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।' (সুরা আস-সাজদাহ : আয়াত ৪-৫)

২. মালাকুল মাউত সম্পর্কিত আলোচনা। আল্লাহ বলেন-

'যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা করেছেন। অতপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে। অতপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ। তোমরা সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তারা বলে, আমরা মৃত্তিকায় মিশ্রিত হয়ে গেলেও পুনরায় নতুন করে সৃজিত হব কি? বরং তারা তাদের পালনকর্তার সাক্ষাতকে অস্বীকার করে। বলুন, তোমাদের প্রাণ হরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অতপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।' (সুরা আস-সাজদাহ : আয়াত ৭-১১)

৩. মুমিনের গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা। আল্লাহ বলেন-

'কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, যারা আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং অহংকারমুক্ত হয়ে তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে। তাদের পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা থাকে। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। কেউ জানে না তার জন্যে কৃতকর্মের কি কি নয়ন-প্রীতি কর প্রতিদান লুক্কায়িত আছে। ঈমানদার ব্যক্তি কি অবাধ্যের অনুরূপ? তারা সমান নয়। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যে রয়েছে তাদের কৃতকর্মের আপ্যায়নস্বরূপ বসবাসের জান্নাত।' (সুরা আস-সাজদাহ : আয়াত ১৫-১৯)

৪. ভূমিতে পানিপ্রবাহ সম্পর্কিত আলোচনা। আল্লাহ বলেন-

اَوَ لَمۡ یَرَوۡا اَنَّا نَسُوۡقُ الۡمَآءَ اِلَی الۡاَرۡضِ الۡجُرُزِ فَنُخۡرِجُ بِهٖ زَرۡعًا تَاۡکُلُ مِنۡهُ اَنۡعَامُهُمۡ وَ اَنۡفُسُهُمۡ ؕ اَفَلَا یُبۡصِرُوۡنَ

'তারা কি লক্ষ্য করে না যে, আমি উষর ভূমিতে পানি প্রবাহিত করে শস্য উদগত করি, যা থেকে ভক্ষণ করে তাদের জন্তুরা এবং তারা কি দেখে না?' (সুরা আস-সাজদাহ : আয়াত ২৭)

সুরা আহযাব (০১-৩০)

সুরা আহযাব মদিনায় অবতীর্ণ। আহযাব মানে দল, যেহেতু কাফেররা পঞ্চম হিজরিতে যুক্তফ্রন্ট করে ঐক্যবদ্ধভাবে মুসলমানদের হৃদয়ে স্পন্দন মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রকে সমূলে বিনষ্ট করার মানসে আক্রমণ করেছিল। এ সুরায় সেই যুদ্ধের আলোচনাই বর্ণনা করা হয়েছে।

১. তাকওয়া ও পরহেজগারির গুণ অর্জন করা। সুরার শুরুতেই আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার এবং তাকে অনুসরণ করার কথা তুলে ধরে বলেন-

 یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اتَّقِ اللّٰهَ وَ لَا تُطِعِ الۡکٰفِرِیۡنَ وَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلِیۡمًا حَکِیۡمًا ۙ- وَّ اتَّبِعۡ مَا یُوۡحٰۤی اِلَیۡکَ مِنۡ رَّبِّکَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرًا ۙ -  وَّ تَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰهِ وَکِیۡلًا

'হে নবি! আল্লাহকে ভয় করুন এবং কাফের ও কপট বিশ্বাসীদের কথা মানবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়, আপনি তার অনুসরণ করুন। নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন। আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। কার্যনির্বাহীরূপে আল্লাহই যথেষ্ট।' (সুরা আহযাব : আয়াত ১-৩)

২. আল্লাহ তাআলা মানুষকে পিতৃ পরিচয়ে ডাকার কথা তুলে ধরে বলেন-

'আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। তোমাদের স্ত্রীগণ যাদের সাথে তোমরা যিহার কর, তাদেরকে তোমাদের জননী করেননি এবং তোমাদের পোষ্যপুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন। তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।' (সুরা আহযাব : আয়াত ৪-৫)

৩. আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় না করা। আল্লাহ বলেন-

'বলুন! কে তোমাদেরকে আল্লাহ থেকে রক্ষা করবে যদি তিনি তোমাদের অমঙ্গল ইচ্ছা করেন অথবা তোমাদের প্রতি অনুকম্পার ইচ্ছা? তারা আল্লাহ ব্যতীত নিজেদের কোন অভিভাবক ও সাহায্যদাতা পাবে না।' (সুরা আহযাব : আয়াত ১৭)

৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম উম্মাহর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। যে আদর্শ পালনে মানুষ থাকবে দুনিয়া ও পরকালে নিরাপদ। আল্লাহ বলেন-

 لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰهِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ لِّمَنۡ کَانَ یَرۡجُوا اللّٰهَ وَ الۡیَوۡمَ الۡاٰخِرَ وَ ذَکَرَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا -  وَ لَمَّا رَاَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الۡاَحۡزَابَ ۙ قَالُوۡا هٰذَا مَا وَعَدَنَا اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗ وَ صَدَقَ اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗ ۫ وَ مَا زَادَهُمۡ اِلَّاۤ اِیۡمَانًا وَّ تَسۡلِیۡمًا  -  مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ رِجَالٌ صَدَقُوۡا مَا عَاهَدُوا اللّٰهَ عَلَیۡهِ ۚ فَمِنۡهُمۡ مَّنۡ قَضٰی نَحۡبَهٗ وَ مِنۡهُمۡ مَّنۡ یَّنۡتَظِرُ ۫ۖ وَ مَا بَدَّلُوۡا تَبۡدِیۡلًا

'যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। যখন মুমিনরা শক্রবাহিনীকে দেখল, তখন বলল, আল্লাহ ও তাঁর রসূল এরই ওয়াদা আমাদেরকে দিয়েছিলেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূল সত্য বলেছেন। এতে তাদের ঈমান ও আত্নসমর্পণই বৃদ্ধি পেল। মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি।' (সুরা আহযাব : আয়াত ২১-২৩)

৫. আল্লাহ মুমিনদের সহযোগিতা করেন আর অবিশ্বাসীরা হয় বঞ্চিত। আল্লাহ বলেন-

 لِّیَجۡزِیَ اللّٰهُ الصّٰدِقِیۡنَ بِصِدۡقِهِمۡ وَ یُعَذِّبَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ اِنۡ شَآءَ اَوۡ یَتُوۡبَ عَلَیۡهِمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا -  وَ رَدَّ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِغَیۡظِهِمۡ لَمۡ یَنَالُوۡا خَیۡرًا ؕ وَ کَفَی اللّٰهُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ الۡقِتَالَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ قَوِیًّا عَزِیۡزًا

'এটা এজন্য যাতে আল্লাহ, সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতার কারণে প্রতিদান দেন এবং ইচ্ছা করলে মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন অথবা ক্ষমা করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ কাফেরদেরকে ক্রুদ্ধাবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। তারা কোন কল্যাণ পায়নি। যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেন। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।' (সুরা আহযাব : আয়াত ২৪-২৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তার ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। তাওহিদ রেসালাত ও আখেরাতের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপনে মাধ্যমে প্রকৃত মুমিন হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

আরও পড়ুন