ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

অসহায়ের প্রকৃত অভিভাবক ‘আল্লাহ’

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:০৩ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২২

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সবচেয়ে বড় অসহায় ছিলেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। মহান আল্লাহ অত্যাচারী ফেরাউনের ঘরেই তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন। মুসা আলাইহিস সালাম যৌবনে পৌঁছলে ঘটনাক্রমে ফেরাউনের আক্রমণের শিকার হন। তিনি মিসর থেকে হিজরত করেন মাদায়েনে। সেখানে আল্লাহ ছাড়া তাঁর কোনো সহায় নেই। আল্লাহই তাঁর প্রকৃত অভিভাবক। তিনি আল্লাহর কাছে এভাবে আশ্রয় প্রার্থনা করেন-

رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিং ফাক্বির।’

অর্থ : ‘হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাজিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ২৪)

রমজনের ১৭ রোজার প্রস্তুতির তারাবি আজ। মহান রব যে,অসহায়র প্রকৃত সহায় তার দৃষ্টান্ত ওঠে এসেছে ছোট্ট একটি দোয়ায়। আজকের তেলাওয়াতকৃত সুরাগুলোতে দাওয়াত ও তাবলিগের নীতি-পদ্ধতির কথাও তেলাওয়াত করবেন হাফেজে কোরআনগণ। ২০ পারায় পড়া হবে- সুরা নমল-এর কিছু অংশ, সুরা কাসাস এবং সুরা আনকাবুত-এর ৪৪ আয়াত পর্যন্ত।

আজকের তারাবির প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহর পরিচয় তুলে ধরেছেন। তিনি সৃষ্টিজগতের কর্তৃত্ব ও পৃথিবীর সুসজ্জিত করার কারিগর। আল্লাহ তাআলা প্রশ্ন রেখে বলেন-

اَمَّنۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ وَ اَنۡزَلَ لَکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ مَآءً ۚ فَاَنۡۢبَتۡنَا بِهٖ حَدَآئِقَ ذَاتَ بَهۡجَۃٍ ۚ مَا کَانَ لَکُمۡ اَنۡ تُنۡۢبِتُوۡا شَجَرَهَا ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ بَلۡ هُمۡ قَوۡمٌ یَّعۡدِلُوۡنَ

‘বলুন তো কে সৃষ্টি করেছেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল? এবং আকাশ থেকে তোমাদের জন্যে বর্ষণ করেছেন পানি; অতপর তা দ্বারা আমি মনোরম বাগান সৃষ্টি করেছি। তার বৃক্ষাদি উৎপন্ন করার শক্তিই তোমাদের নেই। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বরং তারা (অবিশ্বাসীরা) সত্যবিচ্যুত সম্প্রদায়।’ (সুরা নমল : আয়াত ৬০)

সুরা নমল : আয়াত ৬০-৯৩

সুরা নমল মক্কায় অবতীর্ণ। নমল দ্বারা আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে ক্ষুদ্র প্রাণী পিপীলিকাকে বুঝিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা এ সুরায় পিপীলিকার কথা বর্ণনা করেছেন। তাই এ সুরার নাম দিয়েছেন নমল। পিপীলিকার ঘটনা হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের নবুয়তের প্রমাণ বহন করে। আর এ ঘটনার বর্ণনা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের প্রমাণের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। সুরা নমল-এ তাওহিদ ও নবুয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

সৃষ্টিজগতের পরিচালনায় মহান আল্লাহ চূড়ান্ত কৌশলী। তিনি তার সে সব রহস্যগুলো সুবিন্যস্ত করে বলেন-

 اَمَّنۡ جَعَلَ الۡاَرۡضَ قَرَارًا وَّ جَعَلَ خِلٰلَهَاۤ اَنۡهٰرًا وَّ جَعَلَ لَهَا رَوَاسِیَ وَ جَعَلَ بَیۡنَ الۡبَحۡرَیۡنِ حَاجِزًا ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ

বলুন, তো কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে মাঝে নদ-নদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থিত রাখার জন্যে পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন। অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।’ (সুরা নমল : আয়াত ৬১)

পানির বর্ণনায় তাফসিরে ইবনে কাসিরে এসেছে, 'মিঠা ও নোনা পানির ভাণ্ডার। এ ভাণ্ডার পৃথিবীতেই রয়েছে কিন্তু তারা কখনো পরস্পর মিশে যায় না। ভূ-গর্ভের পানির স্রোতও কখনো একই এলাকায় মিঠা পানির স্রোত আলাদা এবং নোনা পানির স্রোত আলাদা দেখা যায়। নোনা পানির সাগরেও দেখা যায় কোথাও মিঠা পানির স্রোত আলাদা প্রবাহিত হচ্ছে।' (ফাতহুল কাদির)

 اَمَّنۡ یُّجِیۡبُ الۡمُضۡطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَ یَکۡشِفُ السُّوۡٓءَ وَ یَجۡعَلُکُمۡ خُلَفَآءَ الۡاَرۡضِ ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَذَکَّرُوۡنَ

‘বল তো কে তোমাদের জলে ও স্থলে অন্ধকারে পথ দেখান এবং যিনি তাঁর অনুগ্রহে আগে সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন? অতএব, আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? তারা যাকে শরিক করে, আল্লাহ তা থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।’ (সুরা নমল : আয়াত ৬৩)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অসহায় অবস্থায় যে দোয়া করতে বলেছেন তা হলো-

اللَّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو فَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : 'আল্লাহুম্মা রাহমাতিকা আরঝু, ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি ত্বারফাতা আইনিন ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লুহু লা ইলাহা ইল্লা আংতা।'

অর্থ : 'হে আল্লাহ্‌ আমি আপনার রহমতের আশা করি। 'অতএব, মুহুর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজের কাছে সমৰ্পণ করবেন না। আর আপনি আমার সবকিছু ঠিক-ঠাক করে দিন। আপনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই।' (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

অসহায়ের দোয়া কবুল হওয়ার মূল উপাদান হলো- 'আন্তরিকতা। কারণ, দুনিয়ার সব সহায় থেকে নিরাশ এবং সম্পর্কাদি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই কাজ উদ্ধারকারী মনে করে দোয়ার মাধ্যমে একনিষ্ঠতা প্রকাশ করাই জরুরি। আল্লাহ তাআলার কাছে ইখলাসের গুরুত্ব ও মর্যাদাই আলাদা। মুমিন, কাফের, পরহেযগার ও পাপিষ্ঠ নির্বিশেষে যার কাছ থেকেই ইখলাস পাওয়া যায় তার প্রতিই দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলার করুণা হয়।' (ফাতহুল কাদির)

এ প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-

'তিনিই তোমাদের জলে-স্থলে ভ্রমণ করান। এমনকি তোমরা যখন নৌযানে আরোহন কর এবং সেগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বেরিয়ে যায় এবং তারা তাতে আনন্দিত হয়, এরপর যখন দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে এবং চারদিক থেকে উত্তাল তরঙ্গমালা ধেয়ে আসে, আর তারা নিশ্চিত ধারণা করে যে, এবার তারা ঘেরাও হয়ে পড়েছে, তখন তারা আল্লাহকে তাঁর জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে ডেকে বলে-

 لَئِنۡ اَنۡجَیۡتَنَا مِنۡ هٰذِهٖ لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰکِرِیۡنَ -  فَلَمَّاۤ اَنۡجٰهُمۡ اِذَا هُمۡ یَبۡغُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ

আপনি আমাদেরকে এ থেকে বাঁচালে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো। এরপর তিনি যখন তাদেরকে বিপদমুক্ত করেন তখন তারা জমিনে অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করতে থাকে।’ (সুরা ইউনুস : আয়াত ২২ ২৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন তারা আনুগত্যে বিশুদ্ধ হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। তারপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখন তারা শিরকে লিপ্ত হয়।' (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৬৫)

এভাবে বিভিন্ন হাদিসে যাদের দোয়া কবুল হয় বলে ঘোষণা এসেছে, সেটার নিগুঢ় রহস্যও এ ইখলাস নিহিত। যেমন, জুলুমের শিকার ব্যক্তির দোয়া; মুসাফিরের দোয়া।' আবার সন্তানের জন্য দোয়া বা বদ-দোয়া। এসব ওই সময়ই হয় যখন তাদের আর করার কিছু থাকে না। তারা একান্তভাবেই আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। তখনকার অবস্থা অনুযায়ী আল্লাহ তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেন। যদিও তিনি জানেন যে, তারা অচিরেই শিরকের দিকে ফিরে যাবে।' (কুরতুবি, ফাতহুল কাদির)

 اَمَّنۡ یَّبۡدَؤُا الۡخَلۡقَ ثُمَّ یُعِیۡدُهٗ وَ مَنۡ یَّرۡزُقُکُمۡ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ ءَ اِلٰهٌ مَّعَ اللّٰهِ ؕ قُلۡ هَاتُوۡا بُرۡهَانَکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ

'বল তো কে প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অতপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন এবং কে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন থেকে রিজিক দান করেন। সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বলুন, তোমরা যদি সত্যবাদী হও তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।’ (সুরা নমল : আয়াত ৬৪)

আল্লাহ তাআলা অবিশ্বাসীদেরকে মৃতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ মর্মে আয়াত নাজিল করে বলেন-

‘অতএব, আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন। নিশ্চয় আপনি সত্য ও স্পষ্ট পথে আছেন। আপনি আহবান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে এবং বধিরকেও নয়, যখন তারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যায় ।’ (সুরা নমল : আয়াত ৭৯-৮০)

‘আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। অতএব, তারাই আজ্ঞাবহ।’ (সুরা নমল : আয়াত ৮১)

তাওহিদের বর্ণনায় শেষ হবে সুরা নমল। যেখানে আল্লাহ তাআলা সৎকর্মশীল বান্দার সতর্ককারী হিসেবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাঠিয়েছেন। আর যারা কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করবে না, নবির সতর্কতা মানবে তারাই মুর্খ। আল্লাহ তাআলা বলেন-

'আর যেন আমি কোরআন পাঠ করে শোনাই। পর যে ব্যক্তি সৎপথে চলে, সে নিজের কল্যাণার্থেই সৎপথে চলে এবং কেউ পথভ্রষ্ট হলে আপনি বলে দিন, আমি তো কেবল একজন ভীতি প্রদর্শনকারী। আর আরও বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। সত্বরই তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহ তোমাদেরকে দেখাবেন। তখন তোমরা তা চিনতে পারবে। আর তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আপনার পালনকর্তা গাফেল নন।’ (সুরা নমল : আয়াত ৯২-৯৩)

সুরা কাসাস : আয়াত ০১-৮৮

মক্কায় অবতীর্ণ সুরাসমূহের মধ্যে সুরা কাসাস হলো সর্বশেষ সুরা। হিজরতের সময় মক্কা এবং জুহফার মধ্যবর্তী স্থান রাবেগ-এ সুরাটি নাজিল হয়। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে-

‘হিজরতের সময় বিশ্বনবি যখন জুহফা অর্থাৎ রাবেগ অঞ্চলে পৌছেন, তখন জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে তাঁকে বলেন- ‘হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার কি মাতৃভূমির কথা মনে পড়ে? তিনি উত্তরে বলেন, ‘হ্যাঁ’, মনে পড়বে বৈ কি। অতপর জিবরিল আলাইহিস সালাম তাকে এ সুরাটি শুনান। এ সুরার শেষাংশে মক্কা বিজয়ের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।

সুরা কাসাসেও হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণের পাশাপাশি বিপুল সম্পদের মালিক কারুনের কথাও আলোচিত হয়েছে। মুসা আলাইহিস সালামের দেশত্যাগ, দুশমনের আক্রমণ থেকে রক্ষা, তার সম্মান-মর্যাদা রক্ষা, পুনরায় মিসর প্রত্যাবর্তন এবং নবুয়ত ও রিসালাত প্রদাণে ধন্য করেছেন তার বিবরণ ওঠে এসেছে এ সুরায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘এগুলো সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত। আমি আপনার কাছে মুসা ও ফেরাউনের বৃত্তান্ত সত্যসহ বর্ণনা করছি, ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ২-৩)

সুরা নমলের প্রথমাংশে বর্ণিত হয়েছে রাণী বিলকিসের আলোচনা। আর এ সুরায় মুসা ও ফেরাউনের বিষয়ে আলোচিত হয়েছে। তবে সুরা নমল ও সুরা কাসাসের মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। রাণী বিলকিস হজরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের মুজিজা দেখে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল। কিন্তু ফেরাউন মুসা আলাইহিস সালামের মুজিজা দেখেও তাঁর প্রতি ঈমান আনেনি। অথচ ফেরাউনের রাজত্ব ছিল রাণী বিলকিসের রাজত্ব থেকে অনেক ছোট।

সুতরাং এ দুটি সুরা থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট যে, হেদায়েত সবার জন্য নয়। হেদায়েত ও পথভ্রষ্টতা মহান আল্লাহরই হাতে। সে আলোকে হেদায়েত লাভ মহান আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত দান করতে পারেন। আবার যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করতে পারেন।

সুরা কাসাসের সংক্ষিপ্ত আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-

> হজরত মুসা আলাইহিস সালামের লাঠির বিবরণ;

> হজরত মুসা আলাইহিস সালামের নবুয়ত লাভ;

> বিশ্বনবির নবুয়তের প্রমাণ পেশ;

> দাওয়াত ও তাবলীগের কতিপয় নীতি;

> এক বস্তুর ওপর অপর বস্তু, এক ব্যক্তির ওপর অপর ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্ব দানের মাপকাঠি প্রসঙ্গ;

> কারুনের প্রোথিত সম্পদের বিবরণ;

> গোনাহের সংকল্পও গোনাহ;

> কুরআন শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় ও উদ্দেশ্য হাসিলের উপায়।

মানুষের প্রকৃত অভিভাবক কে?

আল্লাহ অনেক মহান। মুসা আলাইহিস সালাম জন্মের পর তার মা ফেরাউনের ভয়ে ছিলেন। কখন ফেরাউনের সৈন্যবাহিনী খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যায়। মহান আল্লাহ ফেরাউনের ঘরেই মুসা আলাইহিস সালামকে তার মায়ের বুকের দুধ খাইয়ে লালন পালনের ব্যবস্থা করেছিলেন। সে সময় আল্লাহ তার মাকে এ মর্মে নির্দেশ দেন-

 وَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلٰۤی اُمِّ مُوۡسٰۤی اَنۡ اَرۡضِعِیۡهِ ۚ فَاِذَا خِفۡتِ عَلَیۡهِ فَاَلۡقِیۡهِ فِی الۡیَمِّ وَ لَا تَخَافِیۡ وَ لَا تَحۡزَنِیۡ ۚ اِنَّا رَآدُّوۡهُ اِلَیۡکِ وَ جَاعِلُوۡهُ مِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ

আমি মুসা-জননীকে আদেশ পাঠালাম যে, তাকে দুধ পান করতে থাক। অতপর যখন তুমি তার সম্পর্কে বিপদের আশংকা কর, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ কর এবং ভয় করো না, দুঃখও করো না। আমি অবশ্যই তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে পয়গম্বরগণের একজন করব।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৭)

‘অতঃপর ফেরাউন পরিবার মূসাকে কুড়িয়ে নিল, যাতে তিনি তাদের শত্রু ও দুঃখের কারণ হয়ে যান। নিশ্চয় ফেরাউন, হামান, ও তাদের সৈন্যবাহিনী অপরাধী ছিল। ফেরাউনের স্ত্রী বলল, এ শিশু আমার ও তোমার নয়নমণি, তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে পুত্র করে নিতে পারি। প্রকৃতপক্ষে পরিণাম সম্পর্কে তাদের কোন খবর ছিল না।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ৮-৯)

‘সকালে মুসা জননীর অন্তর অস্থির হয়ে পড়ল। যদি আমি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করে না দিতাম, তবে তিনি মুসাজনিত অস্থিরতা প্রকাশ করেই দিতেন। দৃঢ় করলাম, যাতে তিনি থাকেন বিশ্ববাসীগণের মধ্যে। তিনি মুসার বোনকে বললেন, তার পেছন পেছন যাও। সে তাদের অজ্ঞাতসারে অপরিচিতা হয়ে তাকে দেখে যেতে লাগল।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১০-১১)

‘আগে থেকেই আমি ধাত্রীদের মুসা থেকে বিরত রেখেছিলাম। মুসার বোন বলল, আমি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের কথা বলব কি, যারা তোমাদের জন্যে একে লালন-পালন করবে এবং তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী? অতপর আমি তাকে জননীর কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চক্ষু জুড়ায় এবং তিনি দুঃখ না করেন এবং যাতে তিনি জানেন যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য, কিন্তু অনেক মানুষ তা জানে না। যখন মূসা যৌবনে পদার্পন করলেন এবং পরিণত বয়স্ক হয়ে গেলেন, তখন আমি তাঁকে প্রজ্ঞা ও জ্ঞানদান করলাম। এমনিভাবে আমি সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১২০১৪)

হজরত মুসা আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহর কাছে মানুষ মারার অপরাধে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। অপরাধের জন্য মানুষের প্রার্থনা কেমন হবে তা তুলে ধরে আল্লাহ বলেন-

‘তিনি শহরে প্রবেশ করলেন, যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবর। তথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেন। এদের একজন ছিল তাঁর নিজ দলের এবং অন্য জন তাঁর শত্রু দলের। অতপর যে তাঁর নিজ দলের সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। তখন মুসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং এতেই তার মৃত্যু হয়ে গেল। মসা বললেন, এটা শয়তানের কাজ। নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী। তিনি (মুসা আলাইহিস সালাম) বললেন-

رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي فَغَفَرَ لَهُ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

উচ্চারণ : রাব্বি ইন্নি জ্বালামতু নাফসি ফাগফিরলি ফাগাফারা লাহু ইন্নাহু হুয়াল গাফুরুর রাহিম।’

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি তো নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা কাসাস : ১৫-১৬)

মুসা আলাইহিস সালাম আরও বললেন-

رَبِّ بِمَا أَنْعَمْتَ عَلَيَّ فَلَنْ أَكُونَ ظَهِيرًا لِّلْمُجْرِمِينَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি বিমা আনআমতা আলাইয়্যা ফালান আকুনা জ্বাহিরাল লিলমুঝরিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন, এরপর আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ১৭)

সে ঘটনায় হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয় ফেরাউনের রাজ দরবার। সে সময় মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর সাহায্য লাভে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ বলেন-

‘অতপর তিনি সেখান থেকে ভীত অবস্থায় বের হয়ে পড়লেন পথ দেখতে দেখতে। তিনি বললেন-

رَبِّ نَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি নাঝঝিনি মিনাল ক্বাওমিজ জ্বালিমিন।’

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে জালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ২১)

رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ

উচ্চারণ : ‘রাব্বি ইন্নি লিমা আংযালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিং ফাক্বির।’

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা, তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।’ (সুরা কাসাস : আয়াত ২৪)

এর পর মুসা আলাইহিস সালাম মাদাইন চলে যান। সেখানে এক চুক্তির মাধ্যমে তিনি আশ্রয়, অবস্থান এবং বিয়ে শাদি করেন। তার পর মেয়াদ শেষ হলে তিনি নিজ দেশে ফিরে আসেন। পথে তুর পর্বতে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন। সেখানে কিতাব ও মুজিজা লাভ করেন। অতঃপর ফেরাউনের কাছে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত ও বনি ইসরাঈলকে মুক্ত করার দাবি জানান।

সুরা আনকাবুত : আয়াত ০১-৪৪

মক্কায় অবতীর্ণ সুরা আনকাবুত মুশরিকদের প্রতিছিল এক বিশেষ চ্যালেঞ্জ। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা মাকড়শার দৃষ্টান্ত দিয়ে শিরকের বাতুলতা প্রকাশ করেছেন। সংক্ষেপে এ সুরা আলোচ্যসূচি তুলে ধরা হলো-

> পাপের প্রতি দাওয়াত দেয়াও পাপ;

> কাফেরদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী;

> আল্লাহর অসীম রহমতের বিবরণ;

> পৃথিবীর প্রথম হিজরত প্রসঙ্গ;

> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের প্রতি বিশেষ নিয়ামাত;

> আল্লাহর নিকট প্রকৃত জ্ঞানী।

এ সুরায় আল্লাহ তাআলা হজরত নুহ আলাইহিস সালাম, ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, হজরত লুত আলাইহিস সালাম, হজরত শোয়াইব আলাইহিস সালামের ঘটনার উল্লেখ করেন।

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের এ গুরুত্বপূর্ণ সুরাগুলো বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

আরও পড়ুন