গহনার জাকাতে নারীদের উদাসীনতা
বিন ইয়ামিন সানিম
জাকাত ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলোর অন্যতম। ঈমানের পর আল্লাহতায়ালা নামাজ ও জাকাতের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করেছেন। জাকাত আদায়ের ব্যাপারে কোরআনে যেমন অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, তেমনি জাকাত আদায় না করার ব্যাপারেও অগণিত সতর্কবাণী এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা সোনা-রুপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদের কঠোর আজাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। সেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে। তা দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে। (তাদের বলা হবে), এগুলো তা, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে৷ কাজেই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছিলে, তার স্বাদ ভোগ করো।’ (সুরা তওবা : ৩৪-৩৫)। জাকাত আদায় না করলে পরকালের শাস্তি তো অবধারিত; দুনিয়াতেও বিভিন্ন মসিবতের সম্মুখীন হতে হয়।
গহনাগাট্টির জাকাত আদায়ে উদাসীনতা
আজকাল স্বর্ণালংকারের জাকাত আদায়ে স্বামী-স্ত্রীর অনেকেই উদাসীন। পুরুষ মনে করে, গহনা হলো মহিলার। আর মহিলা মনে করে, গহনা পুরুষের। দুজনই জাকাত ফরজ হওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের হিলা করে বেঁচে যেতে চায়। কিন্তু এসব বাহানা করে কেউই জাকাত আদায় করা থেকে বেঁচে থাকতে পারে না। সোনা-রুপার অলংকার যার মালিকানাই থাক না কেন, তার জাকাত আদায় করতে হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পদের প্রতি নারীদের মোহ এবং অলঙ্কারের জাকাত না দেওয়ার প্রবণতার কথা বিশেষভাবে আলোচনা করেছেন। অতএব, নারীদের সম্পদের মোহ এবং অলংকারের প্রতি লিপ্সা না রাখা চাই। বেশি বেশি জাকাত-সদকা করা দরকার৷
গহনাগাট্টির জাকাত কে দেবেন?
মেয়েপক্ষের দেওয়া উপহার-গহনাপত্র (ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় আমাদের সমাজে যেটাকে যৌতুক বলে) তার মালিকানাধীন। তাই সেগুলোর জাকাত মেয়ের ওপরই ওয়াজিব হবে৷ আর স্বামীর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত-অলংকার যদি স্ত্রীর মালিকানাধীন করে দেওয়া হয়, তাহলে সেগুলোর জাকাত দেওয়াও স্ত্রীর ওপর বর্তাবে। আর যদি মালিক বানিয়ে না দেয়; বরং শুধু পরতে দেয়, তাহলে সেগুলোর জাকাত পুরুষের জিম্মায়৷ সে প্রতি বছর নিজের সোনা-রুপা হিসেব করে যত টাকা জাকাত আসে, আদায় করে দেবে৷ এতে অলসতাবশত বিলম্ব করলে গোনাহগার হবে।
দুটি ভুল ধারণা
১. অনেক মহিলা মনে করেন, সোনা-রুপা যদি ব্যবহৃত হয়, তাহলে তার জাকাত দেওয়া লাগে না। আর যদি ব্যবহৃত না হয়, তাহলে তার জাকাত আদায় করতে হয়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘একবার ইয়ামেনবাসী জনৈকা মহিলা তার কন্যাসহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। তার কন্যার হাতে মোটা দুটি স্বর্ণের বালা ছিল। তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কি এর জাকাত দাও?’ মহিলাটি বলল, ‘না।’ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি পছন্দ করো যে, কেয়ামতের দিন আল্লাহতায়ালা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের বালা পরিয়ে দেন?’ বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে সেই মহিলা তার হাত থেকে বালাদুটি খুলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে রেখে দিয়ে বলল, ‘এ দুটি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য।’ (নাসাঈ : ২৪৭৯, সুনানে আবি দাউদ : ১৫৬৩)।
২. আবার অনেক মহিলা মনে করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত স্বর্ণের পরিমাণ সাড়ে সাত তোলা ও রুপার পরিমাণ সাড়ে বায়ান্ন তোলা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই জাকাত ফরজ হবে না। অথচ এই হিসাব তখন হবে, যখন কারও মালিকানায় শুধু স্বর্ণ বা শুধু রুপা থাকে; ব্যবসায়িক কোনো পণ্য বা সামান্য পরিমাণ টাকাও তার কাছে না থাকে। (কিন্তু আজকাল তো প্রত্যেকের কাছে কিছু না কিছু টাকা থাকেই)।
যদি কোনো পুরুষ বা নারীর কাছে দুই বা ততধিক কিসিমের সম্পদ থাকে, তাহলে প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন নেসাব পূর্ণ হওয়া জরুরি নয়; বরং যেহেতু রুপার মূল্য স্বর্ণের চেয়ে কম, তাই উল্লিখিত দুই বা ততধিক সম্পদের মূল্যমান (ভ্যালু) মিলিয়ে লক্ষ্য করা হবে, যদি সবকিছুর মূল্যমান সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমান বা বেশি হয়, তাহলে সেই সম্পদের জাকাত ওয়াজিব হবে। যেহেতু নারীদের কাছে অল্প পরিমাণে স্বর্ণ থাকে, পাশাপাশি কিছু না কিছু টাকা নিশ্চয়ই থাকে। তাই রুপার নেসাব হিসাব করে তার জাকাত আদায় করতে হবে৷
লেখক : শিক্ষক, মাদরাসাতুল হিকমাহ আল ইসলামিয়াহ, উত্তরা, ঢাকা
মুনশি/এসইউ/জিকেএস