ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

ইফতারে খেজুর রাখবেন কেন?

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ০৯ এপ্রিল ২০২২

খেজুরের কদর
রোজা রেখে খেজুর খেয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত। খেজুর হলো সর্বোত্তম খাদ্য। খেজুরবিহীন বাড়ির পরিবার যেন ক্ষুধার্ত পরিবার। খেজুর হলো জাদু ও বিষ প্রতিরোধক। মদিনার খেজুর হলো, সবচেয়ে উত্তম খেজুর। বিশেষ করে, সর্বোত্তম খেজুর হলো ‘আজওয়া খেজুর’। তা ছাড়া আমাদের প্রতিদিনের নিয়মিত খাবারের সঙ্গে সঙ্গে খেজুর খাওয়া যেমন একদিকে সুন্নত, অপরদিকে দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পরিপূরক। তাই রমজানে খেজুরের কদর বেড়ে যায়। খেজুর না থাকলে আমাদের ইফতার যেন পরিপূর্ণ হয় না।

কী আছে এই খেজুরে?
আমরা কেন এত গুরুত্বের সঙ্গে খেজুর খাই? আমরা হয়তো অনেকেই জানি, মিষ্টি মধুর ছোট এই ফলটির গুণের কথা। সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে, বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।' (বোখারি ও মুসলিম)। সুতরাং পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং হাদিসের নির্দেশনায় খেজুর মানুষের জন্য অনেক উপকারী।

খেজুরের যত গুণ
বলা হয়ে থাকে, বছরে যতগুলো দিন, খেজুরে তার চেয়েও বেশি গুণ। খেজুর যেমনি সুস্বাদু, তেমনি পুষ্টিকর ফল। খেজুর খাওয়ার বৈজ্ঞানিক কারণ অনেক। যেমন—খেজুরের পুষ্টিগুণ প্রচুর। খেজুরে সুগারের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, এক কামড়েই অনেকটা এনার্জি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আয়রন, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফাইবার, গ্লুকোজ, ম্যাগনেশিয়াম ও সুক্রোজ থাকে। যে কারণে খেজুর খাওয়ার মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে শরীরে এনার্জি বেড়ে যায়। সারাদিন উপোস করে শরীরে ক্লান্তি আসে, তা দূর করে এনার্জি জোগাতে সাহায্য করে খেজুর।

খেজুরে ভালো হজম
রোজা রাখলে সাধারণত অ্যাসিডিটি হয়। যার থেকে অস্বস্তি হতে থাকে। খেজুর শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বশে রেখে অস্বস্তি কমায়। সারাদিন না খেয়ে থাকলে খাওয়ার সময় বেশি খেয়ে ফেলার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙলে এর মধ্যে থাকা জটিল কার্বোহাইড্রেট হজম হতে বেশি সময় নেয়। ফাইবার থাকার কারণে পেট ভরা লাগে। তাই বেশি খাওয়ার আগেই পেট ভরে যায়। অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকলে তা পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও হতে পারে। খেজুর শরীরে উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে। ফলে হজম ভালো হয়।

খেজুর প্রাণকে সতেজ করে
সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীরে যে খারাপ কোলেস্টেরল জমা হয়, তা ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে খেজুর। সারাদিন রোজা রাখার পর খাদ্য তালিকায় কয়েকটি খেজুর প্রাণকে সতেজ করে তোলে। ক্লান্ত শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে। সারাদিন উপবাস থেকে কয়েকটি খেজুর খাওয়া শরীরের জন্য অনেক উপকারী। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে খালি পেটে যেকোনো মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পাকস্থলীর জন্য উপকার বয়ে আনে।

ইফতারের বিশেষ অনুষঙ্গ
খেজুরের পুষ্টিগুণের কারণে এ ফলটি অনেক জনপ্রিয়। এটি স্বাস্থ্যসম্মত ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি খাবার। হাদিস শরিফেও খেজুর দিয়ে ইফতার করার নির্দেশ রয়েছে। সালমান ইবনে আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ ইফতার করে, সে যেন খেজুর দ্বারা ইফতার করে। কেননা, তাতে বরকত ও কল্যাণ রয়েছে।’ (মেশকাত : ১৮৯৩)। আরেকটি হাদিসে রয়েছে, আনাস বিন মালেক (রা.)রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত; রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (তিরমিজি : ৬৩২)।

খেজুর দিয়ে ইফতারির উপকারিতা
খেজুর শুধু রোজার ইফতারে নয়, সারা বছরই আমাদের পছন্দের খাদ্য তালিকায় থাকতে পারে। প্রথমত হাদিসের অনুসরণে খেজুর দিয়ে ইফতার করা। দ্বিতীয়ত খেজুরের ভেষজগুণকেও উপেক্ষা করা যায় না। তাই খেজুর হতে পারে ইফতারের প্রধান উপাদান। সুতরাং খেজুর দিয়ে ইফতার করার উপকারিতা হলো—

১. কয়েকটি খেজুরই সাময়িক ক্ষুধা নিবারণে সহায়তা করে।
২. খেজুরে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকায় দুর্বল স্বাস্থ্যের অধিকারী, সামান্য পরিশ্রমেই যারা পেরেশান হয়ে যান, ইফতারে খেজুর খেলে তাদের দুর্বলতা কেটে যায় এবং রোজা রাখা সহজ হয়।
৩. শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফলে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের স্বাভাবিকভাবে রোজা রাখা সহজ হয়।
৪. খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ওষুধ হিসেবে কাজ করে। ক্ষুধামন্দা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খেজুর বিশেষ উপকারী।
৫. খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী। গ্যাসের জন্যও উপকার।
৬. রোজাদারের পেট খালি থাকায় শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।

মোটকথা, নানাবিধ উপকার সমৃদ্ধ খেজুর আমাদের জীবন প্রবাহে স্বাভাবিক গতি আনতে সহায়তা করে। অল্পতেই মুটিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের শরীরে প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর করে তোলে। বহু রোগ-বালাইয়ের প্রতিরোধে খেজুর অগ্রণী ভূমিকা রাখে। পবিত্র মাহে রমজানে রোজাদারদের জন্য তাই খেজুরের বিকল্প নেই।

মুনশি/এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন