তওবায় ক্ষমা পাবেন মুমিন
মুনাফিকের আলোচনায় শুরু হবে ৪র্থ তারাবি। যুদ্ধে মুনাফিকদের অংশগ্রহণ ও ফিরে যাওয়া। ইসলামের জন্য হিজরত প্রসঙ্গ হাফেজে কোরআনগণ ধারাবাহিকভাবে তেলাওয়াত করবেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে আসবে তওবা ও ক্ষমার বর্ণনা। আল্লাহ তাআলা মুমিনের তওবায় গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। পাপ যেমনই হোক তওবাই মুমিনের ক্ষমা পাওয়ার উপায়। আল্লাহ তাআলা মুমিনের ক্ষমা প্রসঙ্গে ঘোষণা করবেন-
فَاُولٰٓئِکَ عَسَی اللّٰهُ اَنۡ یَّعۡفُوَ عَنۡهُمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ عَفُوًّا غَفُوۡرًا
'এরপর আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।' (সুরা নিসা : আয়াত ৯৯)
আজ (৫ এপ্রিল) মঙ্গলবার। তৃতীয় রমজান অতিবাহিত হলো। সন্ধ্যায় পড়া হবে রমজানের চতুর্থ তারাবি। ৫ম পারায় সুরা নিসার ৮৮ আয়াত থেকে তেলাওয়াত শুরু হবে। সুরা মায়েদার ৮২নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে। সে সঙ্গে ৬ পারার তেলাওয়াত শেষ হবে।
৪র্থ তারাবির তেলাওয়াতের প্রথম আয়াতেই মুনাফিকের আলোচনায় শুরু হবে। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَمَا لَکُمۡ فِی الۡمُنٰفِقِیۡنَ فِئَتَیۡنِ وَ اللّٰهُ اَرۡکَسَهُمۡ بِمَا کَسَبُوۡا ؕ اَتُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ تَهۡدُوۡا مَنۡ اَضَلَّ اللّٰهُ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَلَنۡ تَجِدَ لَهٗ سَبِیۡلًا
'এরপর তোমাদের কি হল যে, তোমরা মুনাফেকদের ব্যাপারে দুই দল হয়ে গেলে? যখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তোমরা কি তাকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাও? আর আল্লাহ কাউকে পথভ্রষ্ট করলে আপনি তার জন্য কখনো কোনো পথ পাবেন না।
এ প্রসঙ্গে হজরত যায়েদ ইবন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ওহুদের যুদ্ধে বের হলেন তখন তার সাথীদের মধ্য থেকে কিছু লোক ফিরে চলে আসলেন। তাদের ব্যাপারে সাহাবাগণ দ্বিমত পোষণ করলেন। কেউ বললেন (তাদের) হত্যা করবো, কেউ বললেন হত্যা করবো না। তখন এ আয়াত নাজিল হয় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এই মদিনা নগরী কিছু মানুষকে দেশান্তর করে যেমনিভাবে আগুন দূর করে লোহার ময়লাকে।' (বুখারি, মুসলিম)
এরপর আল্লাহ তাআলা মুমিন মুসলমানকে মুনাফিকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। এ মুনাফিকরাই কামনা করতো যে- মুমিন-মুসলিমরা যেন কাফেরদের মতো কাফের হয়ে যায়। কত নিকৃষ্ট চিন্তাভাবনা ছিল তাদের। এ কারণেই আল্লাহ তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَدُّوۡا لَوۡ تَکۡفُرُوۡنَ کَمَا کَفَرُوۡا فَتَکُوۡنُوۡنَ سَوَآءً فَلَا تَتَّخِذُوۡا مِنۡهُمۡ اَوۡلِیَآءَ حَتّٰی یُهَاجِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ؕ فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَخُذُوۡهُمۡ وَ اقۡتُلُوۡهُمۡ حَیۡثُ وَجَدۡتُّمُوۡهُمۡ ۪ وَ لَا تَتَّخِذُوۡا مِنۡهُمۡ وَلِیًّا وَّ لَا نَصِیۡرًا
‘তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।' (সুরা নিসা : আয়াত ৮৯)
এরপর আল্লাহ তাআলা তওবা-ইসতেগফার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। পাপ যেমনই হোক তওবাই মুমিনের গুনা মাফের উপায়। তওবা-ইসতেগফার আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম মাধ্যম। গুনাহ বা অন্যায় করার পর আবার তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ব্যক্তির ওপর আল্লাহ তাআলা খুব খুশি হন। আজকের তারাবিতে আল্লাহ তাআলার এ ঘোষণাও পড়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللّهَ يَجِدِ اللّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘যে গুনাহ, করে কিংবা নিজের অনিষ্ট করে, এরপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, করুণাময় পায়।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)
এ আয়াতে ‘সুআন’ এবং ‘জুল্ম’ শব্দ দুইটি দ্বারা ছোট এবং বড় পাপ বোঝানো হয়েছে। ‘সুআন’ হলো সেই পাপ বা অন্যায়; যা দ্বারা মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়। যেমন কারও প্রতি অপবাদ দেওয়া বা কারও বদনাম করা। আবার জুল্ম দ্বারা ওই পাপকে বোঝানো হয়েছে, যা নিজের প্রতি করা হয়। যে পাপের অনিষ্টতা নিজের ওপর আসে।
সুতরাং পাপ বা গুনাহ ছোট কিংবা বড় হোক; এর থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে তওবা-ইসতেগফার। তওবা করলে মহান আল্লাহ বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
কোনো দোষী বা অন্যায়কারীকে যদি কেউ জেনেশুনে ছলচাতুরী করে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করে, তাতে ওই অন্যায়কারীর পাপ মোটেও ক্ষমা হবে না। বরং ক্ষমা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর কাছে তওবা করা। যে পাপ বা অন্যায় করে সে জানে যে, সে অপরাধী। আর এ অপরাধের জন্য তার তাওবা করার বিকল্প নেই। শুধু তওবা করলেই রয়েছে ক্ষমার সুযোগ।
এছাড়াও সুরা নিসার বাকি অংশে মুনাফিকদের ঘৃণ্য আলোচনা ছাড়াও রয়েছে রক্তপণ (দিয়ত), নারী ও শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠা, হিজরত ফজিলত ও সাওয়াব, সত্য সাক্ষ্য, ন্যায়বিচার, ওজু ও তায়াম্মুমের বিধানসহ, হারাম মাসে কোনো প্রাণী শিকার সম্পর্কিত বিধান, বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন শান্তিময় করে তোলার কৌশলসহ এতিমের অধিকার সম্পর্কিত আয়াত। আজকের তারাবিতে যা হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে।
সুরা নিসা (৮৮-১৭৬)
> মুনাফিকদের ব্যাপারে কোরআনের নীতি : ওহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য রওয়ানা হয়ে যারা পিছু হটেছিল, তাদের ব্যাপারে আলোচিত হয়েছে।
> দিয়ত বা রক্তপণের বিধান। এক মুসলিম আরেক মুসলিমকে হত্যা করলে তার দিয়ত বা রক্তপণ কি হবে এ সম্পর্কিত বিষয়াদি ওঠে এসেছে সুরা নিসার ৯২নং আয়াতে।
> হিজরত প্রসঙ্গ। দ্বীন এবং ঈমান বাঁচানোর লক্ষ্যে হিজরত করা ইসলামে ফরজ। হিজরতের বিধান, পরিচয়, উপকারিতা, বরকত ও ফজিলত আলোচিত হয়েছে। সুরা নিসার ১০০নং আয়াতে ইসলামের জন্য মুমিন মুসলমানের হিজরতকারীর উপকারিতা ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হিজরত করতে গিয়ে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কারের ঘোষণা। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যে কেউ আল্লাহর পথে দেশত্যাগ করে, সে এর বিনিময়ে অনেক স্থান ও সচ্ছলতা প্রাপ্ত হবে। যে কেউ নিজ গৃহ থেকে বের হয় আল্লাহ ও রসুলের প্রতি হিজরত করার উদ্দেশে, অতঃপর মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তবে তার সওয়াব আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে যায়। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।' (সুরা নিসা : আয়াত ১০০)
> নামাজে কসরের বিধান, কখন কসর করা যাবে। আবার শত্রুর আক্রমণে নামাজের বিধান কেমন হবে বা ভয়কালনি নামাজের পদ্ধতিই বা কেমন হবে এ প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে সুরা নিসার ১০১ থেকে ১০৪নং আয়াতে।
> ক্ষমা লাভে তাওবার গুরুত্ব, তওবার জরুরি বিষয়াবলি, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ইজমার গুরুত্ব, তা অস্বীকারের পরিণতি এবং জুলুম-অত্যাচারের ধরন ও আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার সাব্যস্তের শাস্তি, মানুষের প্রকাশ্য দুশমন শয়তানের কর্মফল নির্ধারণের মূলনীতি আলোচিত হয়েছে ১১০ নং আয়াত থেকে ১২৬নং আয়াতে।
> সুরা নিসার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নারী ও শিশু অধিকার, দাম্পত্য জীবনে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ ও ভারসাম্য রক্ষা করার নীতি আলোচিত হয়েছে ১২৭ ও ১২৮নং আয়াতে।
> দুনিয়ায় মানুষের কর্মফল নির্ধারণের মূলনীতি আলোচিত হয়েছে ১৩৪নং আয়াতে।
> কোনো ঈমানদারের কুফরি করার পরিণতি ও মুনাফিকের পরিচয় ও তা থেকে বেঁচে থাকার উপায় আলোচিত হয়েছে ১৩৭-১৪৭নং আয়াতে।
> ইয়াহুদিদের অঙ্গীকার ভঙ্গ, হঠকারিতা, ঈসা আলাইহিস সালামের আগমন এবং ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদানের বিষয়সহ প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান গ্রহণের শর্ত ও তাঁর মুজিযা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে ১৫৩ থেকে শেষ পর্যন্ত আয়াতে।
সুরা নিসার শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ ওয়ারিশের সম্পদ বণ্টন সম্পর্কে ঘোষণা করেন-
یَسۡتَفۡتُوۡنَکَ ؕ قُلِ اللّٰهُ یُفۡتِیۡکُمۡ فِی الۡکَلٰلَۃِ ؕ اِنِ امۡرُؤٌا هَلَکَ لَیۡسَ لَهٗ وَلَدٌ وَّ لَهٗۤ اُخۡتٌ فَلَهَا نِصۡفُ مَا تَرَکَ ۚ وَ هُوَ یَرِثُهَاۤ اِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّهَا وَلَدٌ ؕ فَاِنۡ کَانَتَا اثۡنَتَیۡنِ فَلَهُمَا الثُّلُثٰنِ مِمَّا تَرَکَ ؕ وَ اِنۡ کَانُوۡۤا اِخۡوَۃً رِّجَالًا وَّ نِسَآءً فَلِلذَّکَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ ؕ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمۡ اَنۡ تَضِلُّوۡا ؕ وَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ
'লোকেরা আপনার কাছে ব্যবস্থা জানতে চায়। বলুন, পিতা-মাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমাদেরকে আল্লাহ ব্যবস্থা জানাচ্ছেন, কোনো পুরুষ মারা গেলে সে যদি সন্তানহীন হয় এবং তার এক বোন থাকে তবে তার জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক। আর সে (নারী) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। এরপর যদি দুই বোন থাকে তবে তাদের জন্য তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ। আর যদি ভাইবোন উভয়ে থাকে তবে এক পুরুষের অংশ দুই নারীর অংশের সমান। তোমরা পথভ্রষ্ট হবে এ আশংকায় আল্লাহ তোমাদেরকে পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছেন এবং আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।' (সুরা নিসা : আয়াত ১৭৬)
সুরা মায়েদা
সুরা মায়েদা কোরআনুল কারিমের ৫ম সুরা। এর আয়াত সংখ্যা ১২০ রুকু সংখ্যা ১৬। সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। হুদায়বিয়ার সন্ধির পর ৬ হিজরির শেষের দিকে অথবা ৭ হিজরির প্রথম দিকে এ সুরাটি নাজিল হয়।
সুরাটিতে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধান তুলে ধরা হয়েঝে। ওজু ও তায়াম্মুমের ফরজগুলো ওঠে এসেছে এ সুরায়। মমিন মুসলমানের ইবাদতের জন্য ওজু করা ফরজ। আবার অপবিত্র হলে কীভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে মুমিন সে বিষয়টিও তুলে ধরেছেন। আর যদি পানি পাওয়া না যায় তবে কীভাবে তায়াম্মুম করবে তাও তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
یَسۡتَفۡتُوۡنَکَ ؕ قُلِ اللّٰهُ یُفۡتِیۡکُمۡ فِی الۡکَلٰلَۃِ ؕ اِنِ امۡرُؤٌا هَلَکَ لَیۡسَ لَهٗ وَلَدٌ وَّ لَهٗۤ اُخۡتٌ فَلَهَا نِصۡفُ مَا تَرَکَ ۚ وَ هُوَ یَرِثُهَاۤ اِنۡ لَّمۡ یَکُنۡ لَّهَا وَلَدٌ ؕ فَاِنۡ کَانَتَا اثۡنَتَیۡنِ فَلَهُمَا الثُّلُثٰنِ مِمَّا تَرَکَ ؕ وَ اِنۡ کَانُوۡۤا اِخۡوَۃً رِّجَالًا وَّ نِسَآءً فَلِلذَّکَرِ مِثۡلُ حَظِّ الۡاُنۡثَیَیۡنِ ؕ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمۡ اَنۡ تَضِلُّوۡا ؕ وَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ
‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্যে দাঁড়াতে চাও, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং উভয় পা টাখনুসহ। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায় খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ৬)
আজকের সুরায় ওহুদ যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মদিনা ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চলে অবস্থা এবং হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়কার উল্লেখ যোগ্য বিষয়াবলি নিয়ে নাজিল হয়েছে সুরা মায়িদা। আজ এ সুরার ১ থেকে ৮২নং আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। আয়াতগুলোর সংক্ষিপ্ত বিষয়গুলো হলো-
সুরা মায়েদা : আয়াত ১ থেকে ৮২
> ইহরাম অবস্থায় শিকারের বিধান, যুদ্ধ বিগ্রহ নিষিদ্ধ বছরর ৪টি সন্মানিত মাসে আলোচনা, ঈদ আনন্দ উদযাপনের ইসলামি নীতিমালাসহ প্রাণী বা জন্তু শিকার ও তার বিধান ওঠে এসেছে এ সুরায়।
> আহলে কিতাব (ইয়াহুদি-খ্রিস্টান) নারীদের বিয়ে করার বিধানের পাশাপাশি মুশরিক নারীদের বিয়ে করার বিধানও আলেচিত হয়েছে এখানে।
> নামাজের জন্য ওজু ও তায়াম্মুমের বিধান, দুনিয়ার যাবতীয় কাজে সাক্ষ্য দানের রীতিনীতি, আহলে কিতাবের অঙ্গীকার ভঙ্গে বিস্তারিত বিবরণ ওঠে এসেছে।
> লেনদেন তথা করজে হাসানার বিধান, বনি ইসরাইলের প্রতি আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের বর্ণনা, হাবিল কাবিলের ঘটনা ও আনুষাঙ্গিক তাৎপর্য, মানুষ হত্যার পরিণতি, কোরআনি আইন বাস্তবায়নের অভিনব ও বৈপ্লবিক পদ্ধতি এবং ইসলামি শরিয়তের শাস্তির ধরন আলোচিত হয়েছে।
> চোরের শাস্তি, ইসলামি রাষ্ট্রে অমুসলিমের মামলা-মোকাদ্দমা বিধান, আল্লাহ তাআলা সম্পর্কে আহলে কিতাবদের ধৃষ্ঠতাপূর্ণ উক্তি ও তার পরিণতির ঘোষণা, বনি ইসরাইলের কুপরিনাম ও নাসারাদের মানসিকতা আলোচিত হয়েছে আজকের পঠিত তারাবি অংশে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআনের উল্লেখিত বিষয়গুলো বুঝে বাস্তব জীবনে আমল করার তাওফিক দান করুন। পাপ বা অন্যায় যেমনই হোক আল্লাহর কাছে নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস