ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

রমজান হোক কোরআনময়

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০১:০৬ পিএম, ০৫ এপ্রিল ২০২২

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ

কোরআন কী?
কোরআন অর্থ পড়া, পাঠ করা, পাঠযোগ্য, যা বারবার পাঠ করা হয়। কোরআন শরিফ দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি পঠিত গ্রন্থ। কোরআন অর্থ—কাছে যাওয়া, নিকটবর্তী হওয়া। কোরআন পঠন ও অনুশীলনের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করে।

কোরআনের নির্দেশনা
পঠন-পাঠন ও বিদ্যার্জন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার নির্দেশ দিয়েই কোরআনের প্রথম আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়—‘পড়ো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন, সৃজন করেছেন জমাট রক্তপিণ্ড থেকে। পড়ো তোমার রব মহাসম্মানিত, যিনি লিপির মাধ্যমে শিক্ষাদান করেছেন; শিখিয়েছেন মানুষকে, যা তারা জানত না।’ (সুরা কলম : ১-৫)।

কোরআন পাঠের ফরজ
কোরআন শরিফ তেলাওয়াতে তিনটি ফরজ রয়েছে—
এক. হরফ বা বর্ণসমূহ সঠিকভাবে উচ্চারণ করা।
দুই. হরকত বা স্বরচিহ্ন তাড়াতাড়ি পড়া।
তিন. মদ বা দীর্ঘস্বর হলে টেনে পড়া।

কোরআন পাঠে যা করতে হয়
কোরআন শরিফ পড়তে তিনটি কাজ করতে হয়—
এক. পবিত্র হওয়া (ফরজ)।
দুই. আউজুবিল্লাহ পড়া (ওয়াজিব)।
তিন. বিসমিল্লাহ পড়া (সুন্নত)।

কোরআন শেখা ফরজ
কোরআন শিক্ষা করা ফরজ। শিখে ভুলে গেলে মারাত্মক গোনাহ। অশুদ্ধ বা ভুল পাঠ করলে কঠিন পাপের কারণ হতে পারে। তাই কোরআন বিশুদ্ধভাবে শেখা ও সুন্দরভাবে তেলাওয়াত করা জরুরি। যারা পড়তে জানেন না, তাদের শিখতে হবে। যারা শিখে ভুলে গেছেন, তাদের পুনরায় পড়তে হবে। যারা ভুল পড়েন, তাদের শুদ্ধ করতে হবে।

যাদের পাঠে ভুল মাফ
তিন ধরনের লোকের তেলাওয়াতের ভুল মাফ হবে—
এক. যারা সহিহ করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন।
দুই. যারা সহিহ করার চেষ্টায় রত আছেন।
তিন. যাদের সহিহ শিক্ষার সুযোগ নেই বা সহিহ ও ভুলের জ্ঞান নেই।

রাসুলকে প্রেরণের উদ্দেশ্য
কোরআন অধ্যয়ন, অনুশীলন ও প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দিয়েই পাঠানো হয়েছিল প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম দোয়া করেছিলেন, ‘হে আমাদের রব! আপনি তাদের মাঝে তাদের মধ্য থেকে এমন রাসুল পাঠান, যিনি আপনার আয়াত পাঠ করে শোনাবেন, কিতাব ও হিকমত শেখাবেন এবং তাদের পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই আপনি স্নেহশীল ও মহাকৌশলী।’ (সুরা বাকারা : ১২৯)।

কোরআন তেলাওয়াত শ্রেষ্ঠ ইবাদত
কোরআন তেলাওয়াত করাও ইবাদত, তেলাওয়াত শোনা এবং শোনানোও ইবাদত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পাঠ করে সাহাবিদের শোনাতেন এবং সাহাবিদের তেলাওয়াতও শুনতেন। প্রতি রমজান মাসের আগে যতটুকু কোরআন নাজিল হয়েছে, তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাইল আলাইহিস সালামকে শোনাতেন। জিবরাইল আলাইহিস সালামও তা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোনাতেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের শেষ রমজানে উভয়ে উভয়কে দু-দু’বার করে পূর্ণ কোরআন পাঠ করে শোনান। (তাফসিরে ইবনে কাসির)।

কোরআনের কারণে রমজান অনন্য
কোরআন নাজিলের কারণেই রমজান ও শবে কদরের ফজিলত। মক্কা-মদিনার ফজিলতও কোরআন নাজিলের কারণেই। কোরআনের পরশেই গিলাফ ও রেহালের সম্মান। যে মানুষ যত কোরআনের ধারক-বাহক হবে, তার সম্মানও তত বেশি হবে।

কোরআন পাঠকারীদের জন্য সুসংবাদ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোরআনওয়ালাই আল্লাহওয়ালা এবং আল্লাহর খাস পরিবারভুক্ত।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘যে অন্তরে কোরআন নেই, তা যেনো পরিত্যক্ত বিরান বাড়ি।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন, ‘হাশরে বিচারের দিনে কোরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে দলিল হবে।’ (মুসলিম)।

কোরআন বর্জনে ধমকি
যারা কোরআন তেলাওয়াত, চর্চা ও অনুশীলন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে রোজ কেয়ামতে আল্লাহর আদালতে প্রিয় রাসুল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিযোগ করবেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, ‘হে আমার রব! এই লোকেরা কোরআন পরিত্যাগ করেছিল।’ (সুরা ফোরকান : ৩০)।

ইহ-পরকালীন শান্তি ও মুক্তির পথ
কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ আসমানি কিতাব। যা সর্বশ্রেষ্ঠ ফেরেশতা জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সর্বশেষ নবী ও রাসুল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাজিল হয়েছে। এরপর কেয়ামত পর্যন্ত আর নতুন কোনো কিতাব ও নতুন কোনো নবী বা রাসুল আসবেন না। এটিই কেয়ামত পর্যন্ত সব মানুষের জন্য দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র পথ।

প্রয়োজন পরিমাণ কোরআন শেখা
কোরআনের অংশবিশেষ পাঠ ছাড়া প্রধান ইবাদত নামাজও আদায় হয় না। এ জন্যই সহিহভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিখতে হবে। কমপক্ষে নামাজ পড়তে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু শেখা ফরজে আইন।

মাহে রমজান ও কোরআন
কোরআন নাজিলের মাস রমজান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘রমজান মাস, যে মাসে নাজিল করা হয়েছে আল কোরআন, মানুষের জন্য হেদায়াতরূপে এবং পথনির্দেশনার প্রমাণ ও সত্য-মিথ্যা পার্থক্য নির্ণয়কারী হিসেবে।’ (সুরা বাকারা : ২৮৫)।

রমজানে কোরআন পাঠ
আল্লাহতায়ালা রমজানের পরিচয় দিয়েছেন কোরআনের মাধ্যমে। তাই স্পষ্টত কোরআন শরিফ অবতীর্ণের মাধ্যমেই মাহে রমজানের ফজিলত বেড়েছে বহুগুণ। হাদিসে এসেছে, ‘অন্যান্য মাসসমূহে যে আয়াতসমূহ অবতীর্ণ হতো, রমজান মাসে সব একসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাইল আলাইহিস সালামকে শোনাতেন। আবার জিবরাইল আলাইহিস সালাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শোনাতেন। এভাবে পরস্পর কোরআন তেলাওয়াত করতেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

রমজানে কোরআন পাঠে সওয়াব বেশি
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অত্যধিক সাওয়াব লাভ করার জন্য রমজানই মোক্ষম সময়। কোরআন শরিফের বিশেষত্ব হচ্ছে, একটি হরফ তেলাওয়াতে দশটি নেকি হাসিল হয়। রমজানের বিশেষত্ব হচ্ছে, একটি নেকি দশ থেকে সাতশত পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তাই মাহে রমজানে কোরআনের একটি হরফ তেলাওয়াত করলে দশ থেকে সাতশত পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

রমজান ও কোরআন একই সুতোয় গাঁথা
রমজানের কারণেই এই নফল ইবাদতটি আল্লাহর দরবারে ফরজের মর্যাদায় গণ্য হচ্ছে। সুতরাং যারা মাহে রমজানে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করেন, নিঃসন্দেহে তারা অফুরন্ত-অগণনীয় সওয়াবের অধিকারী হয়ে থাকেন। রমজান ও কোরআন দুইয়ের বিশেষত্বকে এক সুতোয় গাঁথা যায় একটি মাধ্যমে। তা হলো, রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত করা।

রমজানে পূর্বসূরিদের কোরআন পাঠ
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পূর্বসূরি বুজুর্গানে দ্বীন রমজান মাসেই অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। যেমন—
১. ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসে কোরআন শরিফ মোট ৬১ (একষট্টি) বার খতম দিতেন। প্রতি রমজানের দিনে এক খতম করতেন। আবার রাতে এক খতম করতেন। বাকি এক খতম পুরো রমজানের তারাবির নামাজে আদায় করতেন। (তারিখে বাগদাদ)।

২. ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসের প্রতি রাতে ১ খতম কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করতেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।

৩. আবু কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি রমজান মাসে প্রতি ৩ দিনে এক খতম কোরআন তেলাওয়াত করতেন। শেষ দশকে প্রতি রাতে ১ খতম দিতেন। (সিয়ারু আলামিন নুবালা)।

রমজানে তেলাওয়াতকারীর সোনায় সোহাগা
কোরআন মানবজীবনের অকাট্য সংবিধান, বিশেষত মুসলমানদের জন্য। নাজিল হয়েছে পবিত্র রমজান মাসে। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এ বিশেষ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে হলেও রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। আর রমজানে কোরআন তেলাওয়াত করলে যে তেলাওয়াতকারীর জন্য সোনায় সোহাগা হবে, সেটাও সহজেই অনুমেয়। রমজানের বিশেষত্বই কোরআন। প্রতি রজনীতে কোরআন খতম দিয়ে যেনো আমাদেরকে এ মহান শিক্ষাই দিয়েছেন ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম বোখারি রহমাতুল্লাহি আলাইহিমা। তাই কোরআন নাজিলের মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার চেষ্টা করি।

মুনশি/এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন