স্বাগতম মাহে রমজান
রহমত মাগফেরাত আর নাজাতের দশক নিয়ে দুয়ারে কড়া নাড়ছে ১৪৪৩ হিজরির রমজান মাস। ০২ এপ্রিল (শনিবার) দেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে ০৩ এপ্রিল শুরু হবে পবিত্র রমজান। ইনশাআল্লাহ, আমরা আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে রোজা রাখা শুরু করব।
পবিত্র মাহে রমজান আসে আমাদের জন্য অবারিত ইবাদত-বন্দেগির বাড়তি সুযোগ নিয়ে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আল্লাহর নেক বান্দারা অন্বেষণ করে কীভাবে আল্লাহ পাকের নৈকট্য অর্জন করা যায়। পবিত্র রমজান বড়ই কল্যাণমন্ডিত মাস, দোয়ার মাস।
পবিত্র এ রমজানে মুমিন মুত্তাকিদের আধ্যাত্মিক-বাগানে ঘটবে নব-বসন্তের সমারোহ। জান্নাতি আনন্দে মুমিন মুত্তাকির হৃদয়গুলো আলোকিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ পাকের পবিত্র বান্দারা জানে, রমজানের রহমতের প্রথম দশকে রহমতের বৃষ্টির পানি দ্বারা তাদেরকে সিক্ত করবেন এবং তাদের তৃষ্ণা মেটাবেন। এ কারণেই আল্লাহ পাকের নেক বান্দারা তার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হোন না এবং সামান্য অজুহাত দেখিয়ে রোজা ছেড়ে দেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মাহে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন-
‘হে যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের জন্য সেভাবে রোজা রাখা বিধিবদ্ধ করা হলো, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)
এ আয়াত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তাহলো- ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে রোজা অর্থাৎ উপবাসব্রত পালন করা কোনো না কোনো আকারে সব ধর্মেই ছিল, আছে। অধিকাংশ ধর্মগুলোতে এবং নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণীর কৃষ্টির মধ্যে, উপবাসব্রত একটি সাধারণভাবে নির্দেশিত ব্যাপার। আর যেখানে এই ধরণের নির্দেশ নেই, সেখানেও প্রাকৃতিক প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই উপবাস করে থাকেন।
জ্ঞানীগণের অভিজ্ঞতা থেকে যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মনের পবিত্রতা সাধনের জন্য শারীরিক সম্পর্কসমূহ কিছুটা ছিন্ন করা এবং সাংসারিক বন্ধন থেকে কিছুটা মুক্তিলাভ করা একান্তই প্রয়োজন। তবে ইসলাম এই উপবাসব্রতের মধ্যে নবরূপ, নব অর্থ ও নবতম আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আরোপ করেছে।
পবিত্র মাহে রমজানের এই রোজাকে অর্থাৎ উপবাস পালনকে ইসলাম পূর্ণমাত্রার আত্মোৎসর্গ মনে করে থাকে। যিনি রোজা পালন করেন, তিনি যে কেবল শরীর রক্ষাকারী খাদ্য পানীয় থেকেই বিরত থাকেন; তা নয় বরং তিনি সন্তানাদি জন্মদান তথা বংশবৃদ্ধির ক্রিয়াকলাপ থেকেও দূরে থাকেন এবং সব পাপ কাজ থেকেও বিরক থাকেন।
তাই যিনি রোজা রাখেন, তিনি তার অসাধারণ আত্মত্যাগের এবং তার প্রস্তুতির কথা আল্লাহ পাককে জানিয়ে দেন আর তার হৃদয় এই ঘোষণাও দেয় যে, আমি কেবলমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখছি।
এছাড়া তার হৃদয় এটাও বলে যে, যেহেতু আমি আল্লাহর জন্য রোজা রাখছি এবং সব প্রকারের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার অঙ্গিকার করছি তাই প্রয়োজনবোধে আমি আমার প্রভু ও সৃষ্টিকর্তার খাতিরে আমার সবকিছু, এমনকি আমার জীবন পর্যন্ত কোরবানি করে দিতে দ্বিধাবোধ করবো না।
তারপরও আমরা অনেকেই এই মাসের ইবাদত বন্দেগি থেকে গাফেল থাকি। অন্যান্য মাসের মতোই এই পবিত্র মাসটিকে অবহেলায় কাটিয়ে দেই। আমরা যারা পবিত্র এই মাস পেয়েছি তারা সৌভাগ্যবান। অনেকেই হয়তো রমজান পাওয়ার আশায় ছিল কিন্তু রমজান আসার আগেই না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
তাই আমাদের এ পবিত্র রমজান মাসের পুরো ফায়দা অর্জন করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝে রমজান থেকে কল্যাণ অর্জন করা। হাদিসে পাকে এসেছে-
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে এবং এমনিভাবে রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি)
রোজাদারের মর্যাদা ও সম্মান কত বেশি, তা নবিজীর এ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে-
‘জান্নাতে রাইয়ান নামক একটা দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি)
আমাদের সবার উচিত হবে, রমজানের কল্যাণ থেকে পুরোপুরি ফায়দা হাসিল করা, রমজানের কল্যাণসমূহ দ্বারা নিজেদের সুশোভিত করা। যেন এ রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠে আমাদের চারপাশ। যেন কোরআনের আলোয় আলোকিত হয় সমগ্র বিশ্ব।
মহান আল্লাহ পাকের দরবারে এই মিনতি, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ক্ষমা কর আর পবিত্র এই রমজানে তোমার রহমত, মাগফেরাত আর নাজাত পেয়ে ধন্য হই। আমিন।
এমএমএস/এমএস