ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

আখেরাতের জন্য দুনিয়ার প্রস্তুতি কেমন হওয়া জরুরি

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ০৬ মার্চ ২০২২

পরকাল। সীমাহীন প্রাপ্তির স্থান। যার শুরু আছে কিন্তু শেষ বলে কিছু নেই। পরকালের সব জিনিসের প্রাপ্তি দুনিয়ার তুলনায় সীমাহীন। নেয়ামত যেমন সীমাহীন; দুঃখ-কষ্টও সীমাহীন। যারা যেমন কাজ করবে; তারা তেমন ফলাফল ভোগ করবে। কিন্তু মানুষ কি জানে দুনিয়ার তুলনায় পরকালের প্রাপ্তি কেমন?

হজরত মুসতাওরিদ ইবনে সাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

ما الدنيا في الآخرة إلا مِثْل ما يجعل أحدكم أُصْبُعَهُ في اليَمِّ، فلينظر بِمَ يَرْجع 

‘আখেরাত তথা পরকালের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এরপর দেখে তা কতটুকু পানি নিয়ে ফিরে এসেছে।’ (মুসলিম)

জীবনের কাজ এবং এর সফলতা ও ব্যর্থতার হিসাব করতে গেলে দুনিয়া ও আখেরাতের বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। মানুষ দুনিয়ার এ সামান্য সময়ের জীবন-যাপনকে যতবেশি গুরুত্ব দেয় এর চেয়ে তুলনাহীন গুরুত্বপূর্ণ পরকাল। কেননা পরকাল হবে সীমাহীন। যেখানে জীবনের শুরু আছে শেষ বলে কোনো কিছু নেই। এ হাদিসে দুনিয়ার তুলনায় সব বিষয়ে পরকালের বাস্তবতা বা দৃষ্টান্ত পেশ করা হয়েছে। চিন্তাশীল মানুষের জন্য বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

হাদিসের ব্যাখ্যা

মানুষ যদি আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার বাস্তবতা জানতে চায়, তবে তাদের জন্য এ হাদিসটি সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। তাহলো-

যদি তুমি আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার বাস্তবতা জানতে চাও, তবে তোমার একটি আঙ্গুল সমুদ্রে রাখ তারপর উঠাও। তারপর চেয়ে দেখ কতটুকু পানি নিয়ে তোমার আঙ্গুল ফিরে আসে?! সমূদ্রের তুলনায় কিছুই নিয়ে ফিরে না। আর এটিই হলো আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার হাকিকত বাস্তবতা।

বস্তুত দুনিয়ার সামান্য জীবন ও ক্ষণস্থায়ী স্বাদের সঙ্গে আখেরাতের দীর্ঘ জীবন, স্থায়ী স্বাদ এবং নেয়ামতের তুলনা অথৈই সমুদ্র থেকে আঙ্গুলে লেগে আসা সামান্য পানির মতো। মহান আল্লাহ তাআলা কোরআনেও বিষয়টি তুলে ধরেছেন-

اَرَضِیۡتُمۡ بِالۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا مِنَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا فِی الۡاٰخِرَۃِ اِلَّا قَلِیۡلٌ

‘তবে কি তোমরা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? বস্তুত পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস তো পরকালের তুলনায় অতি সামান্য।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৮)

দুনিয়ার যেসব নেয়ামত ও ভোগসামগ্রী সব সৃষ্টি জীবকে দেওয়া হয়েছে তা সে সামান্য সময় ভোগ করে, তাও ত্রুটি ও বিষাদ মিশ্রিতভাবে। মানুষ ক্ষণিকের জন্যে লৌকিকতা ও অহংকারের সঙ্গে তা দিয়ে সজ্জিত হয়। তারপর এ সবই খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। মানুষের মাঝে থেকে যায় আফসোস আর হতাশা। তাইতো মানুষকে চিন্তা করার লক্ষ্যে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-

وَ مَاۤ اُوۡتِیۡتُمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَمَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتُهَا ۚ وَ مَا عِنۡدَ اللّٰهِ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ

‘আর তোমাদের যা কিছু দেওয়া হয়েছে তা দুনিয়ার জীবনের ভোগ ও সৌন্দর্য মাত্র। আর আল্লাহর কাছে যা আছে তা-ই উত্তম ও স্থায়ী। তোমরা কি বুঝবে না?’

সুতরাং আল্লাহর কাছে যেসব স্থায়ী (পরকালের) নেয়ামত, সুখময় জীবন, প্রাসাদ এবং আনন্দ রয়েছে তা গুণে ও সংখ্যায় অধিক উত্তম এবং স্থায়ী। আর তা সদা সর্বদা থাকবে।

মানুষ যখন দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। দুনিয়ার মোহগ্রস্ত হয়। তখন মানুষের উচিত, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস অধ্যয়ন করা। কোরআনের উপদেশ গ্রহণ করা। যাতে মানুষ দুনিয়ার মোহ থেকে নিরাপদ থাকে। কোরআন-সুন্নাহয় দুনিয়ার তুলনায় পরকালকে এভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে-

১. یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَا لَکُمۡ اِذَا قِیۡلَ لَکُمُ انۡفِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ اثَّاقَلۡتُمۡ اِلَی الۡاَرۡضِ ؕ اَرَضِیۡتُمۡ بِالۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا مِنَ الۡاٰخِرَۃِ ۚ فَمَا مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا فِی الۡاٰخِرَۃِ اِلَّا قَلِیۡلٌ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কী হল, যখন তোমাদের বলা হয়- আল্লাহর রাস্তায় (যুদ্ধে) বের হও, তখন তোমরা জমিনের (দুনিয়ার) প্রতি প্রবলভাবে ঝুঁকে পড়? তবে কি তোমরা আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে সন্তুষ্ট হলে? অথচ দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী আখেরাতের তুলনায় একেবারেই নগণ্য।’ (সুরা তাওবাহ : আয়াত ৩৮)

হজরত মুসতাওরিদ ইবনে সাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন-

ما الدنيا في الآخرة إلا مِثْل ما يجعل أحدكم أُصْبُعَهُ في اليَمِّ، فلينظر بِمَ يَرْجع 

‘আখেরাত তথা পরকালের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এরপর দেখে তা কতটুকু পানি নিয়ে ফিরে এসেছে।’ (মুসলিম)

মনে রাখা উচিত, দুনিয়ার চাকচিক্য মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে চমৎকার একটি দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। যা মানুষকে দুনিয়ার অনর্থক জীবন থেকে পরকালের নেয়ামতে ভরপুর জীবনের দিকে ফিরিয়ে নিতে সাহায্য করবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার কোন এক উচু স্থান দিয়ে বাজারে প্রবেশ করলেন। বাজার লোকে লোকারণ্য। তিনি একটি কানকাটা মরা ছাগলের পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি সেটির কানের বাকী অংশে ধরলেন। তারপর বললেন- কে এটিকে এক দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করতে রাজী আছ?

লোকরা বললো- আমরা কেউ এটিকে কোনো কিছুর বিনিময়ে গ্রহণ করব না। আর আমরা এটাকে নিয়ে কি করবো?

নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা কি চাও যে, এটা তোমাদের হোক?

তারা বললো- যদি জীবিতও থাকতো তারপরও সেটা দোষযুক্ত ছিল; কেননা তার কান নেই। তার ওপর এটা মৃত।

তখন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আল্লাহর শপথ করে বলছি! দুনিয়া আল্লাহর কাছে এর চেয়েও বেশি মূল্যহীন।’ (মুসলিম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ার তুলনায় পরকালকে প্রাধান্য দেওয়া। পরকালের সীমাহীন জীবনের প্রস্তুতি নিজেদের তৈরি করা। দুনিয়াকে পরকালের শস্যক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করা। বস্তুত আখেরাতের চিন্তা-চেতনাই সব রোগ ও সমস্যার একমাত্র প্রতিকার এবং অপরাধ দমনের সার্থক উপায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরকালে সম্বল উপার্জনে দুনিয়াকে ব্যবহার করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার জীবনে পরকালের সম্পদ অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

আরও পড়ুন