দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় যাদের জন্য আলোময়
জুমা মুমিন মুসলমানের আমল-ইবাদতের বিশেষ দিন। ফরজ ও নফল ইবাদতের অন্যতম সেরা দিনও এটি। জুমার দিনের ছোট্ট একটি আমল আছে যা দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনগুলো আলোকময় করে দেয়। যেমনিভাবে জুমার নামাজ পড়লে দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসহ অতিরিক্ত আরও ৩ দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। নবিজী ঘোষিত এ আমলটি কী?
দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনগুলো জ্যোতির্ময় বা আলোকময় হওয়ার বিশেষ আমলটি বিভিন্ন কারণে মর্যাদার। আমলটি হলো- জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। এ আমলের আরও অনেক ফজিলত ওঠে এসেছে হাদিসের বিভিন্ন বর্ণনায়। তাহলো-
১. হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তীকাল (দিনগুলো) জ্যোতির্ময় হবে।’ (নাসাঈ, বায়হাকি, মুস্তাদরাকে হাকেম, তারগিব)
২. অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে; কাবা শরিফ ও তার মধ্যবর্তী স্থান জ্যোতির্ময় হবে।’ (বায়হাকি)
৩. এছাড়াও জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াতে রয়েছে অনেক ফজিলত ও মর্যাদা। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
> হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, পুর্ণাঙ্গ এ সুরাটি একসঙ্গে নাজিল হয়েছে এবং এর সঙ্গে ৭০ হাজার ফেরেস্তা দুনিয়াতে আগমন করেছেন।
> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, কেয়মাতের দিন তার পায়ের নিচ থেকে আসমানের মেঘমালা পর্যন্ত নূরে পরিণত হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী গোনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব)
> হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সব ধরনের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি (এ সময়) দাজ্জাল বের হয়; তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।’
> হজরত সাহল ইবনে মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম ও শেষ আয়াতগুলো পাঠ করে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একটি নূর হয়ে যায়। আর যে পূর্ণ সুরা তেলাওয়াত করে তার জন্য জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত নূর হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমদ)
> হজরত আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে নিরাপদ থাকবে। অন্য রেওয়ায়েতে তিনি বলেন, শেষ ১০ আয়াতের ব্যাপারেও উল্লেখিত ফজিলতের বর্ণনা রয়েছে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ ও মুসনাদে আহমদ)
> অন্য বর্ণনায় এসেছে, এক জুমা থেকে অপর জুমা পর্যন্ত তার সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। তবে উল্লিখিত গোনাহ মাফ হওয়ার দ্বারা সগিরা গোনাহ উদ্দেশ্য। কারণ ওলামায়ে কেরাম একমত যে, কবিরা গোনাহ তওবাহ ছাড়া মাফ হবে না।
মনে রাখতে হবে
জুমার সময় মসজিদে এই সুরা তেলাওয়াত করলে এমনভাবে তেলাওয়াত করতে হবে, যাতে জুমার নামাজ পড়তে আসা অন্য কারও আমল-ইবাদতে অসুবিধা না হয়।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। হাদিসের উপর যথাযথ আমল করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সুরা কাহফের তেলাওয়াত ও আমল যথাযথভাবে করার তাওফিক দান করুন। দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনগুলো আমলের নুর দিয়ে আলোকিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস