রুকু-সেজদায় যেসব দোয়া পড়তেন নবিজী (সা.)
রুকু ও সেজদায় বান্দা আল্লাহর খুব কাছাকাছি হন। এ কারণেই রুকু সেজদায় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করার বিকল্প নেই। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও রুক-সেজদায় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করতেন। রুকু-সেজদার নির্ধারিত তাসবিহ ছাড়াও হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসব দোয়াগুলো ওঠে এসেছে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘কোরআনের (সুরা নসরের) নির্দেশ (فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ وَ اسۡتَغۡفِرۡهُ) অনুযায়ী আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু ও সেজদায় গিয়ে বেশি বেশি বলতেন-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي
উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলি।’
অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু, আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি আর আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন।’ (বুখারি)
২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকু ও সেজদায় গিয়ে বলতেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ
উচ্চারণ : ‘সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার-রুহ।’
অর্থ : ‘(আল্লাহ তাআলা) পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত; (তিনি) সব ফেরেশতা ও জিবরিলের প্রভু।’
৩. হজরত আলি ইবনু আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রুকুতে গিয়ে বলতেন-
اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي وَعِظَامِي وَمُخِّي وَعَصَبِي
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা লাকা রাকাতু ওয়া লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু খাশাআ লাকা সাময়ি ওয়া বাসারি ওয়া ইজামি ওয়া মুখখি ওয়া আসাবি।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার উদ্দেশে রুকু করেছি, তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি এবং আমার শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, হাড়সমূহ, স্মৃতিশক্তি ও শিরা তোমার প্রতি বিনয়ী।’ (ইবনে মাজাহ, মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ)
৪. হজরত আউফ ইবনু মালিক আশজাঈ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, আমি (একবার) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে রাতের নামাজ দাঁড়িয়ে যাই। তিনি (নামাজে) দাঁড়িয়ে সুরা আল-বাকারাহ পড়েন। যখন রহমতের আয়াতে পৌঁছেন, তখন তিনি তথায় থেমে রহমত কামনা করেন এবং যখন কোনো আজাবের আয়াতে পৌঁছেন, তখন তিনি তথায় থেমে আজাব থেকে মাগফেরাত কামনা করতেন। এরপর তিনি দাঁড়ানোর সমপরিমাণ সময় রুকুতে অতিবাহিত করেন এবং সেখানে তিনি বলেন-
سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوتِ وَالْمَلَكُوتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানা জিল ঝাবারূতি ওয়াল মালাকুতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল আজমাতি।’
অর্থ : ‘পবিত্র ওই সত্তা, যিনি সর্বময় ক্ষমতা, সার্বভৌমত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী।’
এরপর তিনি সেজদায় গিয়ে ততক্ষণ থাকতেন; যতক্ষণ তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেজদায় তিনি একই দোয়া পড়েন। এরপর (সেজদা থেকে) ওঠে সুরা আল-ইমরান ও অন্যান্য সুরা পাঠ করেন।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি)
৫. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদায় গিয়ে বলতেন-
اللهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ سَجَدَ وَجْهِي لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ فَأَحْسَنَ صُورَتَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ وَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ
উচ্চারন : ‘আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়া লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু। সাজাদা ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ফা-আহসানা সুরাতাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু ওয়া তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিক্বিন।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার উদ্দেশে সেজদা দিয়েছি। তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। তোমার প্রতি ঈমান এনেছি, আমার চেহারা তাঁর উদ্দেশে সেজদায় অবনত; যিনি একে সৃষ্টি করে আকৃতি দিয়েছেন, এর আকৃতিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন এবং তার কান ও চোখ খুলে দিয়েছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ অতি বরকতময়।’ (আবু দাউদ, মুসলিম, তিরমিজি)
৬. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদায় গিয়ে বলতেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي ذَنْبِي كُلَّهُ: دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি কুল্লাহু; দিক্কাহু ওয়াঝিল্লাহু ওয়া আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু ওয়া আলানিয়াতাহু ওয়া সিররাহু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার সব গুনাহ ক্ষমা করে দাও। সুক্ষ্ম ও স্থূল, শুরুর দিকের ও শেষের দিকে (গুনাহ ক্ষমা করে দাও); প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (গুনাহও ক্ষমা করে দাও)।’
৭. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, এক রাতে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না পেয়ে আমি তাঁকে খুঁজতে থাকি। এক পর্যায়ে আমার হাত তাঁর দু’পায়ের তালুতে লাগে। তখন তিনি ছিলেন মসজিদে। তাঁর পায়ের পাতা দুটি ছিল খাড়া। (সিজদায়) তিনি বলছিলেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ وَأَعُوذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিরিদাকা মিন সাখাত্বিকা ওয়া আউজু বিমুআফাতিকা মিন উকুবাতিকা ওয়া আউজুবিকা মিনকা লা আহসা ছানাআন আলাইকা আংতা কামা আছনাইতা আলা নাফসিকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার খুশির জন্য তোমার অখুশি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি, তোমার ক্ষমা ও অনুকম্পার জন্য তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং তোমার সত্বা হতে তোমার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পরি না, তুমি তেমনি যেমন তুমি নিজের প্রশংসা করেছ।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)
মনে রাখতে হবে
নামাজের রুকু ও সেজদায় মহান আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন। তাই নিজেদের মনে সব আকুতি নবিজীর শেখানো ভাষায় আল্লাহর কাছে প্রকাশ করাই উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের শেখানো দোয়াগুলো রুকু ও সেজদায় পড়ার মাধ্যমে যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম