আল্লাহর কাছে নবিজীর (সা.) দোয়া
দোয়া বা প্রার্থনা মহান আল্লাহর সেরা ইবাদত। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে দোয়া বা প্রার্থনা করা বৈধ নয়। কেননা দোয়ার মাধ্যমেই আল্লাহর কাছে নিজেদের মুখাপেক্ষীতা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। এ কারণেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
الدُّعَاءُ هوَ العبادةُ
‘দোয়াই হলো ইবাদাত।’ (তিরমিজি)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর কাছেই তাঁর সব আকুতি জানাতেন। যে কোনো বিষয়ে দোয়া, বিনয়, অভাব, চাহিদা শুধু আল্লাহর কাছেই প্রকাশ করতেন। তিনি আল্লাহর কাছে সব কথা সব বিষয় জানাতে পছন্দ করতেন। তাইতো তিনি বলেছেন-
‘দোয়া ব্যতীত অন্য কোনো কিছুই (মানুষের) ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না।’ (তিরমিজি)
নবিজী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। তাঁর দোয়াসমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল-
১. اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَاىَ الَّتِي فِيهَا مَعَاشِي وَأَصْلِحْ لِي آخِرَتِي الَّتِي فِيهَا مَعَادِي وَاجْعَلِ الْحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ وَاجْعَلِ الْمَوْتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আসলিহ-লি দ্বীনিয়াল্লাজি হুয়া ইসমাতু আমরি; ওয়া আসলিহ-লি দুনইয়ায়াল্লাতি ফিহা মাআশি; ওয়া আসলিহ-লি আখিরাতিল্লাতি ফিহা মাআদি ওয়াঝআলিল হায়াতা যিয়াদাতান লি ফি কুল্লি খাইরিন; ওয়াঝআলিল মাওতা রাহাতান লি মিন কুল্লি শাররিন।’
অর্থ : "হে আল্লাহ! আপনি আমার দ্বীনকে পরিশুদ্ধ করে দিন, এ দ্বীনই আমার সব কাজের নিরাপত্তা দানকারী; আপনি আমার দুনিয়াকে শুদ্ধ করে দিন, যেথায় আমার জীবনোপকরণ রয়েছে; আপনি আমার আয়ুষ্কালকে বাড়িয়ে দিন প্রত্যেকটি ভালো কাজের জন্য; আপনি আমার আখিরাতকে সুন্দর করে দিন, যেখানে আমাকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে এবং সব ধরনের খারাবি থেকে আমার মরণকে আরামদায়ক করে দিন।’ (মুসলিম)
২. اَللَّهُمَّ عَالِمُ الْغَيْبَ وَالشَّهَادَةِ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِيْ وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشَرِكِهَ وَأَنْ أَقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِيْ سُوْءاً أَوْ أَجِرْهُ إِلىَ مُسْلِمٍ .
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আলিমুল গাইবা ওয়াশ-শাহাদাতি ফাতিরাস-সামাওয়াতি ওয়াল আরদি; রাব্বা কুল্লি শাইয়িন; ওয়া মালিকাহু আশহাদু আন লা ইলাহা ইল্লা আন্তা আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া শাররিশ শায়ত্বানি ওয়া শারিকিহা ওয়া আন আকতারিফা আলা নাফসি সুআন আও আঝিরহু ইলা মুসলিমিন।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আকাশ-জমিনের সৃষ্টিকারী, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞাতা! আপনি প্রত্যেক বস্তুর রব; ফেরেশতারা সাক্ষ্য দিচ্ছে, আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আমরা আমাদের কু-প্রবৃত্তির অনিষ্টতা থেকে এবং অভিশপ্ত শয়তানের অনিষ্টতা ও শিরক থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি। আর আমাদের অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়া বা কোনো মুসলিমকে অপরাধের দিকে ধাবিত করা থেকেও আশ্রয় চাইছি।’ (আবু দাউদ)
৩. اَللَّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَاغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে হারাম থেকে মুক্ত রেখে আপনার দেওয়া হালাল বস্তুই আমার জন্য যথেষ্ট করে দিন। আপনার অনুগ্রহে আপনি ছাড়া অন্য সব কিছু থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী বানিয়ে দিন।’ (তিরমিজি)
৪. اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ وَأَلْحِقْنِيْ بِالرَّفِيْقِ الأَعْلَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ারহামনি ওয়া আলহিক্বনি বিররাফিকিল আ’লা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি দয়া করুন আর আমাকে আমার সর্বোচ্চ বন্ধুর সঙ্গে মিলিত করুন।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
উল্লেখিত প্রতিটি দোয়াতেই মহান আল্লাহর কাছে একান্ত চাওয়া-পাওয়ার আকুতি ওঠে এসেছে। জোরালোভাবে আল্লাহর কাছে খুব বেশি মুখাপেক্ষীতার বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়েছে। যে কাজগুলো আল্লাহ ছাড়া আর কারো দেওয়া সম্ভব নয়। যে অভাবগুলো পূরণ করার ক্ষমতাও কেউ রাখেন না।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বাচ্ছন্দে ও দুঃখের সময় আল্লাহর সমীপে এভাবে প্রার্থনা করতেন। এমনকি বদরের যুদ্ধের দিনও যুদ্ধের ময়দানে মুশরিক বাহিনীর ওপর মুসলিম বাহিনীর বিজয়ের জন্য দোয়া করতে করতে তাঁর কাঁধ থেকে চাদর পড়ে গিয়েছিল।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব সময় নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, সাহাবিদের জন্য ও সব মুসলমানদের জন্য দোয়া করতেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব সময় মহান আল্লাহর কাছে নিজেদের চাওয়াগুলো তুলে ধরা। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। মুমিনের প্রতিটি চাওয়া-পাওয়াই হোক ইবাদত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নবিজীর অনুসরণ ও অনুকরণে ছোট থেকে বড় সব বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করার মাধ্যমে ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম