খুবই বিপদ; বাঁচার উপায় কী?
অনেককেই বলতে শোনা যায়, খুব বিপদে পড়েছি; এ থেকে উত্তরণের উপায় কী? আবার অনেক সময় নিজেরাও আপনজন কিংবা শুভাকাঙ্খীকে বলে থাকি, খুব বিপদে আছি! কি-যে করি; এ বিপদ থেকে বাঁচার উপায় কী? অস্থির চিন্তা; চিন্তার কোনো শেষ নেই। সতিই কি খুব বিপদ থেকে বাঁচার কোনো উপায় আছে?
হ্যাঁ, মানুষ যত বিপদেই পড়ুক না কেন; বিপদ থেকে উত্তরণের উপায় আছে। আর এ বিপদ থেকে একজনই নিষ্কৃতি দিতে পারে। তিনি হলেন মহান আল্লাহ। কোন উপায়ে তিনি বিপদ দূর করবেন। আবার বিপদের সময় মানুষ কোন উপায়ে তা থেকে মুক্ত হতে পারবেন; সে দিকনির্দেশনা তথা ফর্মূলা দিয়েছেন তিনি। তাইতো কোরআনে পাকে তিনি ঘোষণা করেন-
وَ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ
‘তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৫)
ছোট্ট দুইটি উপদেশ। একটি সবর বা ধৈর্য আর অন্যটি হলো নামাজ পড়া। এ দুইটি উপায়ে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলে বিপদ যত বড়ই হোক না কেন, তিনি সাহায্য করে থাকেন। আর আল্লাহ সাহায্য করলে কারো কোনো বিপদই থাকে না।
ছোট্ট এ আয়াতাংশের তাফসিরে আল্লামা শানকিতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘ধৈৰ্য্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা সুস্পষ্ট বিষয়। ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলে এক সময় তার উপর আল্লাহর রহমত নাজিল হবে এবং সে সফলকাম হবে। কিন্তু নামাজের মাধ্যমে কিভাবে সাহায্য প্রার্থনা করবে?
এর উত্তর হচ্ছে- নামাজের মাধ্যমে অন্যায়-অশ্লীল কাজ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘নিশ্চয়ই নামাজ অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)
অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে রাখা নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিরাট সাহায্যও বটে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো সমস্যায় পড়তেন, তখনই তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আল্লাহর কাছে নামাজ পড়ে সাহায্য চাইতেন। এ নামাজের মাধ্যমেই আসে মানুষের রিজিকের প্রশান্তি। এ কারণেই মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
وَ اۡمُرۡ اَهۡلَکَ بِالصَّلٰوۃِ وَ اصۡطَبِرۡ عَلَیۡهَا ؕ لَا نَسۡـَٔلُکَ رِزۡقًا ؕ نَحۡنُ نَرۡزُقُکَ ؕ وَ الۡعَاقِبَۃُ لِلتَّقۡوٰی
আপনি আপনার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দিন ্দএবং তাতে অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো জীবনোপকরণ চাই না। আমিই আপনাকে জীবনোপকরণ দিয়ে থাকি। আর তাকওয়াবানদের জন্য শুভ পরিণাম।’ (সুরা ত্বাহা : আয়াত ১৩২)
এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো বিষয়ে সমস্যায় পড়তেন বা চিন্তাগ্রস্ত হতেন তখনই তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সুতরাং মুমিন মুসলমান যখনই কোনো বিপদে পড়বে; তাদের উচিত, মহান আল্লাহর কাছে সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কটা তাজা করে নেওয়া। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া। এমনটিই করতে স্বয়ং প্রিয় নবি, সাহাবি, তাবেঈ ও পরবর্তী সত্যের পথের অনুসারীগণ।
একবার হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কাছে তার ভাই ‘কুছাম' এর মৃত্যুর খবর পৌছে; তখন তিনি তিনি তখন সফর অবস্থায় ছিলেন। তিনি তার বাহন থেকে নেমে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন।
ঠিক এভাবেই হজরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু অসুস্থ অবস্থায় পড়লে একবার এমনভাবে বেহুশ হয়ে যান যে সবাই ধারণা করে বসেছিল যে, তিনি বুঝি মারাই গেছেন। তখন তার স্ত্রী উম্মে কুলসুম মসজিদে গিয়ে আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে সবর ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করলেন।’ (মুসতাদরাকে হাকেম)
এগুলো বিপদে মুক্তি পাওয়ার উপায় ও উদাহরণ। আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী সবর ও নামাজের মাধ্যমে বিপদ থেকে মুক্তির চেষ্টা করলে তিনিই মানুষকে বিপদ থেকে মুক্তি করেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চরম বিপদেও ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বিপদ থেকে সাহায্য প্রার্থনার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস