আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসীদের জন্য বিশেষ ৩ আমল
ইসলামের দরজা সবার জন্য উন্মুক্ত। এ দরজায় যারাই প্রবেশ করে তারাই সম্মানিত হয়। কারণ ইসলামের প্রতিটি কথাই যে সুন্দর। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুনিয়ার জীবনে শুধু মানুষের কল্যাণেই কাজ করে গেছেন। পথ দেখিয়েছেন কিভাবে সাজাতে হবে নিজেদের জীবন। তাঁর প্রতিটি হাদিসই যেন মুক্তামালা। তেমনি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী বান্দার জন্য ৩টি আমলের কথা বলেছেন তিনি। দুনিয়া ও পরকালের শ্রেষ্ঠত্ব লাভে আমলগুলো সত্যিই অসাধারণ। আমল তিনটি কী?
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখেরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তিনটি দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। এ দায়িত্বগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। হাদিসে পাকে এসেছে-
হজরত আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবংপরকালে বিশ্বাস রাখে-
১, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।
২. সে যেন তার প্রতিবেশিকে জ্বালাতন না করে।
৩. সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহামদ)
মেহমানদারি
কত চমৎকার উপদেশ! প্রতিটি মানুষের জন্য মেহমান আল্লাহর রহমত। আর মেহমানকে সম্মান করলে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি রহমত নাজিল করেন। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে মেহমানদারির কারণেই আল্লাহ তাআলা বন্ধু বানিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আতিয়্যা আওফি রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে যে কারণে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন; তাহলো-
১. তিনি মানুষকে (মেহমানদারি) খানা খাওয়াতেন;
২. বেশি বেশি সালাম দিতেন; আর
৩. মানুষ রাতে ঘুমিয়ে পড়লে তিনি নামাজ আদায় করতেন।’
প্রতিবেশির প্রতি সচেতন থাকা
অনেকেই প্রতিবেশির অধিকারে সচেতন নয়। অথচ আত্মীয়-স্বজনের চেয়ে প্রতিবেশির হক বেশি। প্রতিবেশির প্রতি সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখতে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ-
‘কাছের প্রতিবেশি, দূর প্রতিবেশি এবং সঙ্গী-সাথীদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার কর।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৬)
তাই প্রতিবেশি যে-ই হোক; তার অধিকারে সচেতন হতে হবে। কেননা নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি হক বা অধিকার হিসেবে প্রতিবেশিকে ৩ ভাগে বিভক্ত করেছেন-
> এক হক বিশিষ্ট প্রতিবেশি। যারা আত্মীয় নয় আবার মুসলিমও নয়।
> দুই হক বিশিষ্ট প্রতিবেশি। যারা আত্মীয় নয়, তবে মুসলিম।
> তিন হক বিশিষ্ট প্রতিবেশি। যারা আত্মীয় এবং মুসলিম।
প্রতিবেশির অধিকারের ব্যাপারে আরও বলেছেন- ‘আল্লাহর শপথ! সে ব্যক্তি ঈমানদার নয় (৩ বার এ শপথ করার পর সাহাবায়ে কেরাম) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! কে সেই ব্যক্তি? জবাবে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যার প্রতিবেশি তার অনিষ্ট বা ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে পারে না।’ (মিশকাত)
ভালো কথা বলা নতুবা চুপ থাকা
ভালো কথা বলার অসংখ্য পুরস্কারের কথা এসেছে হাদিসের বর্ণনায়। আবার কোরআনে পাকে মহান আল্লাহ মানুষকে উত্তম কথা বলার নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
‘তোমরা মানুষের সঙ্গে উত্তম ভাষায় কথা বল।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮৩)
ভালো কথা বললে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে জান্নাতের উঁচু মর্যাদা দান করবেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জান্নাতের মধ্যে একটি বালাখানা রয়েছে, যার ভেতর থেকে বাইরের এবং বাইরে থেকে ভেতরের দৃশ্য দেখা যায়। একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই বালাখানা কার জন্য? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
১. যে ব্যক্তি মানুষের সাথে ভালো কথা বলে;
২. যে ব্যক্তি ক্ষধার্তকে খাবার দেয়;
৩. যে ব্যক্তি রোজা রাখে; এবং
৪. যে ব্যক্তি ওই সময় নামাজ আদায় করে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, মিশকাত)
সুতরাং মানুষের উচিত, মেহমানদারি করা, প্রতিবেশি কষ্ট না দিয়ে তার হকের ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং একে অপরের সঙ্গে উত্তম কথা বলা। ভালো কথা না বলতে পারলে চুপ থাকা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের উল্লেখিত আমলগুলো সুন্দরভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। হাদিসের আলোকে জীবন গঠনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম