ছেলে উপযুক্ত, বাবা-মা বিয়ে না দিলে করণীয় কী?
ছেলে উপযুক্ত। বিয়ের বয়স হয়েছে। বিয়ে করার আর্থিক, শারীরিক এবং মানসিক সক্ষমতাও আছে কিন্তু বাবা-মা বিয়ে দিতে চায় না। এক্ষেত্রে উপযুক্ত এসব ছেলেদের করণীয় কী? বিয়ের জন্য কি ছেলেদের অভিভাবক থাকা শর্ত? অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে কি ছেলে গুনাহগার হবে?
বিয়ের উপযুক্ত আর্থিক সক্ষমতা থাকা যে কোনো যুবকের জন্য অশ্লীলতা, অবৈধ যৌনাচার ও নানা গুনাহে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে; তাদের দ্রুত বিয়ে দেওয়া ফরজ। আর ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের মাজহাব অনুযায়ী- ‘ছেলে-মেয়ে উভয়ের বিয়ে দেওয়া সামর্থ্যবান বাবার জন্য ওয়াজিব বা আবশ্যক।’
ছেলে যদি সবদিক থেকে উপযুক্ত হয়, বাবা-মা বা অভিভাবক বিয়ে দিতে সম্মত না হয় তবে গুনাহ থেকে বাঁচতে ছেলের করণীয় হলো-
প্রথমত : আপন বাবা-মা এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে বিয়ের জন্য তাদেরকে রাজি করানোর চেষ্টা করা। পরিবারের সবার সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে যদি বিয়ে হয় তাবে তা নিঃসন্দেহে অতি উত্তম। এতে পারিবারিক সৌহার্দ ও সম্প্রতি অটুট থাকে।
দ্বিতীয়ত : বাবা-মা ও পরিবারের লোকজন যদি বিয়ের সম্মতি না দেয় তবে অশ্লীলতা, অবৈধ যৌনাচার ও নানা পাপাচার থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে নিজ সিদ্ধান্তে পছন্দনীয় মেয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বিয়ে করা। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে উপযুক্ত ছেলের এভাবে বিয়ে করায় কোনো দোষ নেই।
কারণ ইসলাম কোনো পুরুষের বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য তার বাবা বা অভিভাবকের অনুমতি নেওয়াকে শর্ত করেনি। যেমনটি নারীর বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার জন্য অভিভাবকের সম্মতি শর্ত।
তৃতীয়ত : পারিবারিক শান্তি ও শৃঙ্খলার জন্য আলাদা সংসার গড়ে তুলুন। ইসলামি শরিয়তে এটিও দোষণীয় নয়।
প্রশ্ন আসতে পারে
সম্মতি ছাড়া বিয়ে করায় বাবা-মা কষ্ট পেলে কি ছেলে গুনাহগার হবে?
ইসলাম মা-বাবার প্রতি যে দায়িত্ব পালনের দিকনির্দেশনা দিয়েছে, ছেলে যদি সে দায়িত্ব যথাযথ পালন না করে তবে সে গুনাহগার হবে। কিন্তু ইসলামের বিধান মেনে পাপাচার থেকে বাঁচতে গিয়ে যদি ছেলে পরিবারের অমতে বিয়ে করে আর তাতে বাবা-মা কষ্ট পায় তবে এক্ষেত্রে ছেলে গুনাহগার হবে না। কারণ সে আল্লাহর নিষেধকৃত কোনো কাজ করেনি। বরং জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ইসলামের বিধানের আলোকে বৈধভাবে বিয়ে করেছে।
এক্ষেত্রে মা-বাবার করণীয়
গুনাহমুক্ত জীবন গঠনে সবদিক থেকে উপযুক্ত ছেলে যদি বিয়ে করতে চায় তবে মা-বাবা যথাযথ সহযোগিতা করা উত্তম। বরং এ ক্ষেত্রে মা-বাবার কর্তব্য হলো বিয়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ছেলের আগ্রহ ও পছন্দকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিয়ের ব্যাপারে তাকে সুপরামর্শ দেওয়া। বিয়েতে সার্বিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাজহাবের ফতোয়া অনুযায়ী ছেলে-মেয়ে উভয়ের বিয়ে দেয়া সামর্থ্যবান বাবার জন্য ওয়াজিব বা আবশ্যক।
সুতরাং বিয়ের ক্ষেত্রে গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য উপযক্ত ছেলের মা-বাবা যদি সম্মতি না-ও দেয় আর ছেলে শুধু গুনাহ থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিয়ে করে তবে তাতে ছেলের কোনো গুনাহ হবে না।
আর উপযুক্ত ও সার্বিক সক্ষমতা থাকা ছেলের পরিবারের বাবা-মা ও অভিভাবকের দায়িত্ব হলো ছেলেকে গুনাহমুক্ত জীবন-যাপনের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা করা। যদি পরিবার, বাবা-মা বা অভিভাবকের অবহেলার কারণে ওই ছেলের দ্বারা কোনো গুনাহ সংঘটিত হয় তবে পরিবার, বাবা-মা কিংবা অভিভাবককে এ দায় নিতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব বাবা-মা ও অভিভাবককে উপযুক্ত ছেলেদের ব্যাপারে সার্বিক দেখা-শোনা, খোঁজ-খবর নেওয়া ও বিয়ে-শাদির ব্যবস্থা করে গুনাহমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস