ওয়াজ-নসিহতকে কি আল্লাহর জিকির বলা যাবে?
দেশের সব অঞ্চলেই কম-বেশি বছরব্যাপী ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে শীতকালে ওয়াজ মাহফিলের সংখ্যা বেড়ে যায়। এসব ওয়াজ-মাহফিলে নসিহত পেশ করা হয়। ওয়াজ-মাহফিলের এসব নসিহতকে কি আল্লাহর জিকির বলা যাবে? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?
জিকির শব্দের অর্থ স্মরণ করা। আর আল্লাহর জিকির মানে হলো আল্লাহর স্মরণ। যেসব অনুষ্ঠানে আল্লাহর নাম, তাঁর গুণাবলী, বিধি-বিধান বা ইবাদত সম্পর্কিত আলোচনা করা হয় কোরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিকোন থেকে তা জিকির হিসেবে অভিহিত। তবে ওয়াজ-মাহফিলের নামে কোরআন-সুন্নাহ বহির্ভূত কোনো আলোচনাকে আল্লাহর জিকির বলা যাবে না।
কোরআন করিম ও হাদিসের আলোচনাই মহান আল্লাহর প্রকৃত জিকির। যেভাবে মহান আল্লাহ কোরআনুল কারিমে তা ঘোষণা দেন-
১. مَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّن رَّبِّهِم مُّحْدَثٍ إِلَّا اسْتَمَعُوهُ وَهُمْ يَلْعَبُونَ
‘যখনই তাদের কাছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে কোনো নতুন জিকির আসে, তখনই তারা খেলাচ্ছলে তা শ্রবণ করে।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ২)
২. وَمَا يَأْتِيهِم مِّن ذِكْرٍ مِّنَ الرَّحْمَٰنِ مُحْدَثٍ إِلَّا كَانُوا عَنْهُ مُعْرِضِينَ
‘যখনই তাদের কাছে দয়াময়ের কাছ থেকে কোনো নতুন জিকির আসে তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা শুআরা : আয়াত ৫)
কোরআনুল কারিমের উল্লেখিত আয়াতসহ অনেক স্থানে ‘জিকির’ বলতে ওয়াজ ও উপদেশকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
৩. إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ
‘যখন জুমার দিন নামাজের জন্য আহবান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহর জিকিরের (স্মরণে) দিকে দ্রুত ধাবিত হও।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯)
আল্লাহ তাআলা এ আয়াত নাজিল করে জিকির বলতে জুমার খুতবা বা ওয়াজ ও নামাজকে বুঝানো হয়েছে। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহর জিকির অর্থাৎ ইমামের খুতবা ও ওয়াজ শোনার জন্য দ্রুত মসজিদে যাওয়া ফরজ।
উল্লেখ্য কোরআন-সুন্নাহর আলোকে অনুষ্ঠিত সব ওয়াজ-মাহফিলই আল্লাহর জিকির হিসেবে গণ্য হবে। ওয়াজ-মাহফিলের নামে কোরআন-সুন্নাহর আলোচনা না হলে তা জিকির বা নসিহত হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে না। ওয়াজ-নসিহতের নামে তা হবে প্রতারণা ও গোনাহের কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক ওয়াজ-মাহফিলে অংশগ্রহণ ও নসিহতগুলোকে আল্লাহর জিকির হিসেবে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম