ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

গুনাহের প্রবল ইচ্ছা দমনে করণীয়

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০২১

মানুষের মনের মধ্যে যখন গুনাহ করার প্রবল ইচ্ছা জেগে ওঠে; তখন তা দমন করা বা গুনাহ থেকে বিরত থাকা খুবই কষ্টের। কিন্তু উপায় কী? জেগে ওঠার গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে করণীয় কী? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনাই বা কী?

গুনাহ করার সময় তা থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কষ্টের। নৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি। কারণ গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকতে পারাই সফলতা। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا - وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا

‘যে নিজের আত্মাকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্র করে সেই সফল হয় আর যে তাকে কলুষিত করে (সে) ধ্বংস হয়।’ (সুরা শামস : আয়াত ১০)

গুনাহের কাজ দমনে করণীয়

গুনাহ বা পাপ-পঙ্কিলতার কাজ থেকে বিরত থাকতে ১০টি উপায় অবলম্বন করা যায়। তাহলো-

১. আউজুবিল্লাহ পড়া

মনের মধ্যে গুনাহের চিন্তা জাগ্রত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আউজুবিল্লাহ পড়া। আল্লাহ তাআলা এ মর্মে ঘোষণা করেন-

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ

‘আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর কাছে (শয়তান থেকে) আশ্রয় প্রার্থনা করো।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২০০)

أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم

উচ্চারণ : ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাঝিম।’

অর্থ : ’বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’

২. আল্লাহকে ভয় করা

দুনিয়ার প্রতিটি কাজের সময় নিজেদর মনে আল্লাহর ভয় রাখা। কাজের সময় এই চিন্তা করা যে, আল্লাহ মানুষের কর্মকাণ্ড লিখে রাখার জন্য দুইজন ফেরেশতা সব সময়ের জন্য নিযুক্ত করে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ  كِرَامًا كَاتِبِينَ يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ

অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।’ (সুরা ইনফিতার : আয়াত ১০-১২)

তাই আল্লাহর অবাধ্য কোনো কাজ করা যাবে না। তাকে ভয় করতে হবে। কারণ তার অবাধ্য কাজ করলেই তিনি ক্রোধান্বিত হবেন এবং জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।

৩. দোয়া করা

মহান আল্লাহর কাছে অন্তরের পরিশুদ্ধি ও আল্লাহ ভীতির জন্য দোয়া করা। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। তাহলো-

 اَللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا - اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আতি নাফসি তাকওয়াহা ওয়া যাক্কিহা আংতা খাইরু মান যাক্কাহা আংতা ওয়ালিয়্যুহা ওয়া মাওলাহা; আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ইলমিন লা ইয়ানফাউ ওয়া মিন কালবিন লা ইয়াখশাউ ওয়া মিন নাফসিন লা তাশবাউ ওয়া মিন দাঅওয়াতিন লা ইউসতাঝাবু লাহা।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার মনে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) দান করো, আমার মনকে পবিত্র কর, তুমিই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী, তুমিই তো হৃদয়ের মালিক ও অভিভাবক। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এমন ইলম (জ্ঞান) থেকে যা কোনো উপকারে আসে না, এমন হৃদয় থেকে আশ্রয় চাই যা (তোমার ভয়ে) ভীত হয় না, এমন আত্মা থেকে আশ্রয় চাই যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে আশ্রয় চাই যা কবুল করা হয় না।’ (মুসলিম)

৪. মৃত্যুর কথা স্মরণ করা

গুনাহ করা অবস্থায় যদি কারো মৃত্যু সংঘটিত হয় তবে কেয়ামতের দিন তাকে গুনাহরত অবস্থায় উঠানো হবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

হজরত জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

يُبعَثُ كلُّ عبدٍ على ما مات عليه المُؤمِنُ على إيمانِه والمُنافِقُ على نِفاقِه

‘কেয়ামতের দিন প্রত্যেক বান্দাকে ঐ অবস্থায় উঠানো হবে যে অবস্থার উপর সে মৃত্যু বরণ করেছে। মুমিনকে উঠানো হবে ঈমানের উপর এবং মুনাফিককে উঠানো হবে নেফাকির উপর।’ (ইবনে হিব্বান)

মনে রাখতে হবে

গুনাহকালীন সময়ে আনন্দ ক্ষণস্থায়ী কিন্তু তার ক্ষতি ও করুণ পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী। পাপের উন্মাদনা সাময়িক কিন্তু তার অনুতাপ হবে দীর্ঘ মেয়াদি।

৫. সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করা

গুনাহ থেকে বিরত থাকার জন্য সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করার বিকল্প নেই। তাই কোরআন তেলাওয়াত, কোরআন মুখস্থ, ইসলামি বই-পুস্তক পাঠ, নফল নামাজ আদায় এবং দোয়া-দরূদ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকার ও তাওবাহ-ইসতেগফারে নিজেদের নিয়োজিত রাখার বিকল্প নেই।

৬. ভালো মানুষের সংস্পর্শে থাকা

একাকি নির্জন স্থান ত্যাগ করে দ্বীনদার মানুষের সংস্পর্শে থাকা। তবে মা-বাবা, ভাই-বোন, দ্বীনদার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে থাকলে গুনাহ করার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয় না। তাছাড়া গুনাহমুক্ত জীবনে জন্য ভালো কোনো আলেমের সান্নিধ্যেও থাকা যায়। আবার মসজিদে গিয়ে জিকির-আজকার, তেলাওয়াত ও নফল নামাজ পড়ে কিছু সময় অতিবাহিত করা।

যদি কেউ পরিবার থেকে দূরে কোথাও থাকে কিংবা দূরের কোনো দেশে অবস্থান করে তবে নিয়মিত পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে স্ত্রী-পরিজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলা বা ফোনে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নেওয়া। কিংবা দীর্ঘ দিন যোগাযোগ হয়নি এমন দ্বীনদার ভাই-বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে গুনাহের ইচ্ছা থেকে ফিরে থাকাও সম্ভব।

৭. অলস সময় না কাটানো

অলস সময় কাটালে শয়তান মানুষকে কুমন্ত্রণা দেয়। তা থেকে বেঁচে থাকতে এমন বৈধ ও সাওয়াবের কাজ করা যা করতে ভালো লাগে। কিংবা এমন কোনও দুনিয়ার উপকারী কাজ করা, শরীর চর্চা করা বা বাইরে দর্শনীয় খোলাস্থানে ঘুরতে যাওয়া। ঘরে চুপচাপ বসে বা শুয়ে থাকা ঠিক নয়। অলস সময় থেকে বের হতে পারলেই শয়তানের প্ররোচনায় গুনাহের কাজের প্রবল ইচ্ছা থেকে বের হওয়া সম্ভব।

৮. অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা

সিনেমা, নাটক ইত্যাদি দেখা, গান-বাদ্য শোনা বা অশ্লীল গল্প, উপন্যাস পড়া থেকে দূরে থাকাও গুনাহমুক্ত জীবন গড়ার উপায়। কারণ অশ্লীলতা মানুষকে কুপ্রবৃত্তি ও কুকর্মের দিকে ধাবিত করে। অনুরূপভাবে যে সব উপকরণ হাতের কাছে থাকার কারণে মন গুনাহের দিকে ধাবিত হয় সেসব উপকরণ থেকে দূরে থাকাও জরুরি।

৯. ধৈর্যধারণ করা

মনে প্রচণ্ড গুনাহের ঝোঁক দেখা দিলে সে সময়টিতে ধৈর্যধারণ করা। সবরের মাধ্যমে গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকা কিংবা গুনাহের কাজ থেকে আত্ম-সংবরণ করা আবশ্যক। কেউ পাপ কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা করার পর যদি তার মধ্যে আল্লাহর ভয় আসে আর সে তা থেকে বিরত থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় গুনাহের পরিবর্থে সাওয়াব দান করবেন। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ تَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً

‘আর সে যদি কোনও পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করে দেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, গুনাহের কাজ করার প্রবল ইচ্ছা জাগ্রত হলে উল্লেখিত উপায়গুলো অনুসরণ ও অনুকরণ করা। এ আমলগুলোর মাধ্যমে গুনাহের কাজ থেকে ফিরে থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুনাহের প্রবল ইচ্ছা থেকে নিরাপদ থাকার তাওফিক দান করুন। নিজেদের জীবনে উল্লেখিত উপায়গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। গুনাহ মুক্ত জীবন হোক সবার কাম্য। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস

আরও পড়ুন