মুমিন ব্যক্তির রূহও যখন ঝুলন্ত থাকে
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঋণ পরিশোধ না করার মানসিকতা পোষণকারী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে কঠোর হুশিয়ারি ঘোষণা করেছেন। ঋণ পরিশোধ না করে মারা গেলে মুমিন বান্দার রূহও ঝুলন্ত অবস্থায থাকে। হাদিসে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী সম্পর্কে কী বর্ণিত হয়েছে?
ইসলাম ঋণ পরিশোধের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত। ঋণ পরিশোধ না করে মারা যাওয়া মুমিন ব্যক্তির রূহও ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। আবার ঋণের ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তি জান্নাতেও যেতে পারবে না। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির রূহ তার ঋণের কারণে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা পরিশোধ করা হয়।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি, বায়হাকি, মুসতাদরাকে হাকেম, ইবনে হিব্বান, মিশকাত)
ঋণের ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বয়ং নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অন্য হাদিসে এসেছে-
২. হজরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যার দেহ তিনটি দোষ থেকে মুক্ত অবস্থায় থাকে, আর তার প্রাণ বায়ু বের হয়েছে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তাহলো)- অহংকার, আত্মসাৎ ও ঋণ।’ (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, দারেমি, মিশকাত)
উল্লেখ্য, দুনিয়ার প্রয়োজনে মানুষ পরস্পর একে অন্যের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে থাকেন। প্রয়োজন পূরণ হলে তা পরিশোধ করা উত্তম। কিন্তু এক শ্রেণির মানুষ আছে যারা একবার ঋণ নিলে তা আর পরিশোধ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে না। তাদের জন্য প্রিয় নবি সতর্কবাণী ঘোষণা করেছেন। ইসলাম ঋণ পরিশোধে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। আবার ঋণ পরিশোধে উপকার ও অপকার হাদিসে পাকে তুলে ধরেছেন এভাবে-
৩. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পরিশোধের নিয়তে মানুষের কাছ থেকে (ঋণ) সম্পদ গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেন। আর যে তা বিনষ্ট করার (ঋণ ফেরত না দেওয়ার) নিয়তে গ্রহণ করে থাকে, আল্লাহ তাকে বিনষ্ট করে দেন।’ (বুখারি)
শুধু তা-ই নয়, ঋণ রেখে মারা গেরে এ প্রকৃত লোকদের নেক দিয়ে ঋণের দাবি পূরণ করতে হবে। কত ভয়াবহ ব্যাপার এটি। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-
৪. ‘ঋণ পরিশোধ করা ছাড়া মৃত্যুবরণ করলে হাশরের ময়দানে (কঠিন মুহূর্তে) নিজের নেকি থেকে ঋণের দাবি পূরণ করতে হবে।’ (বুখারি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, পরকালের মুক্তি ও সফলতার স্বার্থে ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা পোষণ ও তা পরিশোধ করার বিকল্প নেই। তাই মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ঋণ পরিশোধে এভাবে দোয়া করা-
৫. اَللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَاغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন!’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘এই দোয়া পড়লে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও তার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে মৃত্যুর আগে ঋণ থেকে মুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। ঋণ পরিশোধের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর কাছে ঋণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বেশি বেশে দোয়া ও সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দিন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম