নামাজে সুরা ফাতিহা কেন পড়বেন?
কোরআনুল কারিমের গুরুত্বপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ সুরা ‘সুরাতুল ফাতিহা’। নামাজে সুরাটি পড়া আবশ্যক। কিন্তু নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া প্রসঙ্গে কী বলেছেন বিশ্বনবি? কিংবা নামাজে সুরা ফাতিহা কেন পড়তে হবে?
হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট যে, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, ‘সেই ব্যক্তির নামাজ হয় না; যে ব্যক্তি তাতে সুরা ফাতিহা পড়ে না।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি)
নামাজে সুরা ফাতিহা পড়ার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে সুরা ফাতিহা পড়াকে আবশ্যক বলেছেন। আল্লাহ তাআলা সুরা ফাতিহাকে তার মাঝে আর বান্দার মাঝে আধাধি করে ভাগ করে নিয়েছেন। নামাজে সুরা ফাতিহা পড়ার সময় মহান আল্লাহ প্রত্যেক আয়াতে জবাব দিয়ে থাকেন। হাদিসে এসেছে-
১. ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি নামাজ (সুরা ফাতিহা) কে আমার ও আমার বান্দার মাঝে আধাআধি ভাগ করে নিয়েছি। (সুরাটির) অর্ধেক আমার জন্য এবং অর্ধেক আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা তাই পায়, যা সে প্রার্থনা করে।’
সুতরাং বান্দা যখন বলে-
الْحَمْدُ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ،
‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।’
তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রশংসা করলো।’
এরপর বান্দা যখন বলে-
اَلرَّحْمنِ الرَّحِيْم،
‘আররাহমানির রাহিম।’
তখন আল্লাহ বলেন, ‘বান্দা আমার গুণগান বর্ণনা করলো।’
এরপর বান্দা যখন বলে-
مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْن،
‘মালিকি ইয়্যাওমিদদ্বীন।’
তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বান্দা আমার গৌরব বর্ণনা করলো।’
বান্দা যখন বলে-
إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِيْن،
‘ইয়্যাকা নাঅবুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতাইন।’
তখন আল্লাহ বলেন, ‘এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে। আর আমার বান্দা তাই পায়, যা সে প্রার্থনা করে।’
এরপর বান্দা যখন বলে-
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْم، صِرَاطَ الَّذِيْنَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّيْن
‘ইহদিনাস সিরাত্বাল মুস্তাকিম। সিরাত্বাল্লাজিনা আনআমতা আলাইহিম; গাইরিল মাগদুবি আলাইহিম ওয়ালদ্দ্বাল্লিন।’
তখন আল্লাহ বলেন, ‘এ সব কিছু আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দা যা চায়, তাই পাবে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সেই ব্যক্তির নামাজ যথেষ্ট নয়, যে তাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করে না।; (ইবনে হিব্বান, দারাকুতনি)
৩. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো নামাজ পড়ে, যাতে সে সুরা ফাতিহা পাঠ করে না, তার ওই নামাজ (গর্ভচ্যুত ভ্রুণের ন্যায়) অসম্পূর্ণ, অসম্পূর্ণ।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)
৪. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজে ভুলকারী সাহাবিকে তার নামাজে এই সুরা (ফাতিহা) পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’ (বুখারি)
সুতরাং নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া আবশ্যক। এটি নামাজের অন্যতম রোকন। তাইতো নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
‘এটি ‘উম্মুল কোরআন’। আল্লাহ তাআলা সুরা ফাতিহার মতো কোনো মর্যাদার সুরা তাওরাত ও ইঞ্জিলে নাজিল করেননি। এই (সুরাটিই) হল (নামাজে প্রত্যেক রাকআতে) পঠিত ৭টি আয়াত বিশিষ্ট সুরা এবং কোরআন, যা আমাকে দান করা হয়েছে।’ (নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম, তিরমিজি, মিশকাত)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সঠিকভাবে নামাজ সম্পন্ন করতে সুরা ফাতিহা নামাজের প্রত্যেক রাকাতে তেলাওয়াত করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজের প্র্যত্যেক রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম