আল্লাহর যে সাহায্য বান্দার খুব বেশি প্রয়োজন
হে রাসুল! আপনি বলুন, আমি তো তোমাদের মতো একজন মানুষ, আমার প্রতি ওহি নাজিল হয় যে, তোমাদের ইলাহ একমাত্র সত্য ইলাহ। কাজেই যে তার রব-এর সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকাজ করে আর তার রব-এর ইবাদতে কাউকেও শরিক না করে। (সুরা কাহফ : আয়াত ১১০)
এখানেই মানুষের সবচেয়ে বেশি সাহায্যের প্রয়োজন হয়। মানুষ জানা স্বল্পতা কিংবা ইচ্ছা-অনিচ্ছায় শিরকের মতো অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে। অথচ মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো- মানুষ যে তার ইবাদতে কাউ শরিক না করে। কারণ মহান আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু শিরকের গুনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। তাই শিরক থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে দোয়া করার বিকল্প নেই।
শিরকের আক্রমণ অনেক মারাত্মক। হাদিসের পরিভাষায় এটি- ‘(শিরক) পিপড়ার নিঃশব্দ গতির মতোই তোমাদের মধ্যে গোপনে অনুপ্রবেশ করে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে একটি উপায় বলে দিচ্ছি যা করলে তোমরা বড় শিরক ও (রিয়াসহ) ছোট শিরক থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে। তোমরা প্রতিদিন তিনবার এই দোয়া পড়-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ شَيْئًا وَأَنَا أَعْلَمُ وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা আন উশরিকাবিকা শাইয়ান ওয়া আনা আলামু ওয়া আসতাগফিরুকা লিমা লা আলামু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি তোমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করা থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি যা জানি আর যা জানিনা তা থেকেও ক্ষমা চাই।’ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
হাদিসের যে সতর্কতাগুলো মনে রাখা জরুরি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিরকের ভয়াবহতাকে সবচেয়ে বেশি ভয় করতেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি তোমাদের সম্পর্কে যে বিষয়ে সর্বাধিক আশংকা করি, তা হচ্ছে ছোট শির্ক। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ছোট শির্ক কি? তিনি বললেন- রিয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা যখন বান্দাদের কাজকর্মের প্রতিদান দেবেন, তখন রিয়াকার লোকদেরকে বলবেন, ‘তোমরা তোমাদের কাজের প্রতিদান নেয়ার জন্য তাদের কাছে যাও, যাদেরকে দেখানোর উদ্দেশ্যে তোমরা কাজ করেছিলে। এরপর দেখ, তাদের কাছে তোমাদের জন্য কোন প্রতিদান আছে কি না। কেননা, আল্লাহ শরিকদের শরিকানা থেকে সম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন যে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি শরিকদের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঊর্ধ্বে। যে ব্যক্তি কোনো সৎকর্ম করে এবং তাতে আমার সঙ্গে অন্যকেও শরিক করে, আমি সেই আমল শরিকের জন্য ছেড়ে দেই।’ অন্য বর্ণনায় এসেছে, আমি সেই আমল থেকে মুক্ত; সে আমলকে আমি তার জন্যই করে দেই, যাকে সে আমার সঙ্গে শরিক করেছিল।’ (মুসলিম)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি সুখ্যাতি পাওয়ার জন্য সৎকর্ম করে আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে এমনি ব্যবহার করেন; যার ফলে সে ঘৃণিত ও লাঞ্ছিত হয়ে যায়।’ (মুসনাদে আহমাদ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ইবাদত-বন্দেগিসহ কোনো কাজেই আল্লাহর সঙ্গে শরিক না করা। লা শারিক ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হওয়া। শিরকমুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রার্থনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শিরকে ভয়াবহতা থেকে আত্ম-রক্ষার তাওফিক দান করুন। হাদিসে বর্ণিত দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস