সালামের প্রচলন শুরু হয়েছিল যেভাবে
মানুষকে অভিবাদন ও সম্ভাষণ জানানোর ইসলামি রীতি হচ্ছে ‘সালাম’। আবা জান্নাতিদের স্বাগতম জানানো হবে সালামের মাধ্যমে। কোরআনের নির্দেশনা হলো উত্তম বাক্য দ্বারা সালামের উত্তর দেওয়া। কিন্তু এ সালামের প্রচলন শুরু হয়েছিল কবে? সর্বপ্রথম কে কাকে সালাম দিয়েছিলেন? সে সালামের উত্তরই বা ছিল কী?
সালাম সম্পর্কে কোরআনের ঘোষণা
وَ اِذَا حُیِّیۡتُمۡ بِتَحِیَّۃٍ فَحَیُّوۡا بِاَحۡسَنَ مِنۡهَاۤ اَوۡ رُدُّوۡهَا ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ حَسِیۡبًا
আর যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৮৬)
জান্নাতিদের অভিবাদনও ‘সালাম’
আল্লাহ তাআলার যাদেরকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করবেন। তাদেরকেও এ সালাম দেওয়ার মাধ্যমে অভিবাদন করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
১. وَ اُدۡخِلَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِهَا الۡاَنۡهٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ ؕ تَحِیَّتُهُمۡ فِیۡهَا سَلٰمٌ
যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে প্রবেশ করানো হবে জান্নাতে; যার তলদেশে নদীমালা প্রবাহিত; সেখানে তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ২৩)
২. وَ سِیۡقَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا رَبَّهُمۡ اِلَی الۡجَنَّۃِ زُمَرًا ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَآءُوۡهَا وَ فُتِحَتۡ اَبۡوَابُهَا وَ قَالَ لَهُمۡ خَزَنَتُهَا سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ طِبۡتُمۡ فَادۡخُلُوۡهَا خٰلِدِیۡنَ
আর যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করত, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকট উপস্থিত হবে এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে এবং তার রক্ষীরা তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের প্রতি সালাম (শান্তি), তোমরা সুখী হও এবং স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সুরা যুমার : আয়াত ৭৩)
সালামের প্রচলন যেভাবে শুরু হয়
সর্বপ্রথম সালাম দেন প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা স্বয়ং তাকে সালাম আদান-প্রদানের পদ্ধতি শেখান। যা হবে তার পরে আগত সব বনি আদমের সালাম বা অভিবাদন। হাদিসের বর্ণনা থেকে প্রমাণিত-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম) কে সৃষ্টি করলেন। তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বলেন, যাও, বসে থাকা ঐ ফেরেশতার দলকে সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কি জবাব দেয় তা মনোযোগের সঙ্গে শোনো। কেননা এটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তানদের সালাম (সম্ভাষণ)।
আদম (আলাইহিস সালাম) গিয়ে বললেন-
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ
‘আসসালামু আলাইকুম : আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।
ফেরেশতাগণ জবাব দিলেন-
السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ
আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ : আপনার উপরও শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
ফেরেশতাগণ ‘ওয়া রহমাতুল্লাহি’ বাড়িয়ে বলেন। যে ব্যক্তি বেহেশতে যাবে সেই হবে আদম (আঃ) এর আকৃতি বিশিষ্ট। তখন থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের দেহাবয়ব (উচ্চতা) ক্রমাগত হ্রাস পেয়ে আসছে। (বুখারি, মুসলিম)
মুসলিম উম্মাহর জন্য সালাম ইবাদত ও সাওয়াবের কাজ। এর প্রতিটি হরফেই রয়েছে ১০টি করে নেকি। যদিও সালাম দেওয়া সুন্নাত। কিন্তু এ সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। সালামের উত্তর না দিলে গুনাহগার হতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জান্নাতের অভিবাদন জানানোর ভাষা সালামকে দুনিয়ায় বেশি বেশি প্রচলন ও প্রসার করার তাওফিক দান করুন। কোরআন সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস