যেসব তাসবিহ পড়লে জান্নাতে গাছ রোপণ হয়
মোহাম্মাদ হাসিব উল্লাহ
জান্নাত। আখেরাতের জীবনের চিরস্থায়ী শান্তির আবাসস্থল। অনন্ত সুখের স্থায়ী ঠিকানা। মুসলিম ব্যক্তিকে ভালো কর্মের প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত দান করবেন। কোরআনুল কারিমে বচনভেদে জান্নাত শব্দটি ১৩৯ বার উল্লেখ রয়েছে। আবার মহাগ্রন্থ আল-কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বিভিন্ন নামেও অভিহিত করেছেন। যেমন- জান্নাতুল খুলদ, দারুস্ সালাম, দারুল মাকামাহ্ ইত্যাদি।
কোরআন ও হাদিসের ভাষ্যমতে, ‘যারা জান্নাতে একবার প্রবেশ করবে, সেখান থেকে তারা আর বের হবে না’। কেননা জান্নাতে সুখ-শান্তি থেকে শুরু করে সবকিছুই বিদ্যমান থাকবে, সেখানে কোনকিছুরই অভাব থাকবে না। তাহলে এ জান্নাত পেতে মুমিন মুসলমানের করণীয় কী?
সুখ-শান্তির চিরস্থায়ী জান্নাত পেতে মুমিন মুসলমানের একান্ত আবশ্যক কর্তব্য হচ্ছে-
১. সব ধরনের গুনাহ থেকে বিরত থাকা।
২. আল্লাহর নির্ধারিত ফরজ ইবাদতগুলো আদায় করা।
৩. কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দিক-নির্দেশনাগুলোকে নিজেদের জীবনে বেশি বেশি পরিচালনা করা।
৪. নিজে সৎ কাজ করা ও অন্যকে সৎ কাজে উৎসাহ প্রদান করা। আল্লাহর ঘোষণাও এমন-
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ الۡجَنَّۃِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ
পক্ষান্তরে যারা বিশ্বাস করেছে (মু’মিন হয়েছে) এবং সৎকাজ করেছে, তারাই হবে জান্নাতের অধিবাসী; তারা সেখানে চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৮২)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কিছু ছোট ছোট চমৎকার দোয়া ও আমলের কথা উল্লেখ করেছেন; যা পড়ার মাধ্যমে অসংখ্য সাওয়াব অর্জন করা যায়।
মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহা সুসংবাদ যে, প্রতিনিয়ত এসব আমল জারি রাখলে মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সব দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে তাকে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করে নেন। তবে শর্ত হচ্ছে, এসব আমল করার পাশাপাশি কোনো ধরনের গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনেক উদাহরণ দিয়ে তাসবিহ-তাহলিল, তাওবাহ-ইসতেগফার ও ক্ষমা-প্রার্থনার দিকে উৎসাহিত করেছেন। কখনো বলেছেন এ তাসবিহতে জান্নাত খেজুর গাছ রোপন করা হয়। আবার বলেছেন সমুদ্রের ফেনা পরিমান গোনাহ মাফ হয়। জান্নাতে খেজুরের বাগানের মালিক হওয়া যায় ইত্যাদি উপমা দিয়ে মুমিন বান্দাকে আল্লাহমুখী করার অসংখ্য প্রচেষ্টা করে গেছেন। যেমন-
১. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "من قال سبحان الله العظيم وبحمده، غرست له نخلة في الجنة"
যে ব্যক্তি (একবার) বলবে-
“سبحان الله العظيم وبحمده”
‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’
অর্থ : আমি মহান আল্লাহ তাআলার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি।
তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়।’ (তিরমিজি)
২. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
من قال سبحان الله وبحمده، غرست له نخلة في الجنة
, যে ব্যক্তি বলবে-
“سبحان الله وبحمده”
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহ
তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হয়।’ (তারগিব ওয়া তারহিব)
৩. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- তিনি একটি চারাগাছ রোপণরত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করলেন-
"يا أبا هريرة، ما الذي تغرس"، قلت غراسا لي، قال: "ألا أدلك على غراس خير لك من هذا"، قال: "بلى، يا رسول الله"، قال: قل "
হে আবু হুরায়রা! কী রোপণ করছো? আমি বললাম, আমার একটি চারা রোপণ করছি। তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু রোপণের কথা বলে দেবো না, যা তোমার জন্য এর চেয়েও উত্তম?
তিনি বলেন, অবশ্যই, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন তুমি বলো-
سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر، يغرس لك بكل واحدة شجرة في الجنة"،
“সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার”
অর্থ : সব পবিত্রতা আল্লাহর জন্য, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহ ব্যতিত আর কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ মহান।
প্রতিবারে বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাতে একটি করে গাছ রোপন করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ)
এ তাহমিদ, তাসবিহ, তাকবির ও তাহলিল বেশি বেশি পড়ার জন্য হাদিসে নববিতে জান্নাতের গাছ রোপনের ঘোষণা ও সুসংবাদ এসেছে। এছাড়াও হাদিসে পাকে রয়েছে অনেক মাসনুন তাসবিহ ও দোয়া। এরকম আরও তাসবিহ হলো-
> سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْم وَبِحَمْدِهِ : সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহ
> سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ : সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহ
> الْحَمْدُ للهِ - سُبْحَانَ الله - اَللهُ اَكْبَر - لَا اِلَهَ اِلَّا الله
আলহামদুলিল্লাহ- সুবহানাল্লাহ- আল্লাহু আকবার- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
এ তাসবিহগুলো মুখে উচ্চারণ খুবই সহজ এবং সময়ও কম ব্যয় হয়। এমন অনেক তাসবিহ বিভিন্ন হাদিসে পরিলক্ষিত হয়। যে কোনো মুসলিম নিয়মিত তা পাঠ করলে নিজেদের আমলনামায় নেকির সংখ্যা বাড়তে থাকবে। পাশাপাশি আখেরাতে জান্নাতের পথও সুগম হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ধন্য হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে এসব তাসবিহ, তাহলিল, তাকবির ও তাহমিদ পড়ার মাধ্যমে নিজেদের জীবন তার রহমতের চাদরে ঢেকে রাখার তাওফিক দান করুন। পরকালের ঘোষিত উপহার পেয়ে মুমিনের জীবন ধন্য করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
এমএমএস/জেআইএম