অনুমান করে কথা বলার পর করণীয় কী?
অনুমান করে কথা বল জঘন্য মিথ্যাচারের শামিল। কারও কোনো বিষয়ে ধারণা বা অনুমান করায় অনেক সময় অশান্তির সৃষ্টি হয়। বিষয় যা-ই হোক না কেন, অনুমান করে কথা না বলাই ভালো। কেননা অনুমান বা ধারণা করে কথা বলায় কোরআন ও সুন্নায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও যদি কেউ অনুমান করে কোনো কথা বলেলে তবে সঙ্গে সঙ্গে তার কী বলা উচিত?
হ্যাঁ, অনেকেই অনুমান করে অনেক কথা বলেন কিংবা মন্তব্য করেন। যদি একান্তই কেউ অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলেন তবে সঙ্গে সঙ্গেই এ কথা বলা-
وَاللهُ اَعْلَمُ
উচ্চারণ : ‘ওয়াল্লাহু আঅলামু’
অর্থ : আর আল্লাহ তাআলাই (বিষয়টি সম্পর্কে) বেশি (ভালো) জানেন।’
আল্লাহ তাআলা প্রিয় বান্দা এবং ইসলামের সঠিক জ্ঞানের অনেক অনুসারীই এসব ক্ষেত্রে বলে থাকেন- وَاللهُ اَعْلَمُ : ‘ওয়াল্লাহু আঅলামু’ অর্থাৎ আর আল্লাহ তাআলাই (বিষয়টি সম্পর্কে) বেশি (ভালো) জানেন।’
এ বিষয়গুলো স্মরণে রাখা জরুরি
কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা অনুমাননির্ভর কথা বলা থেকে বিরত থাকার কথা যেমন বলেছেন অনুরূপভাবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অনুমাননির্ভর কথা বলার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক করেছেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা বেশি অনুমান করা থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের গিবত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোস্ত খেতে পছন্দ করবে? তোমরা তো তা অপছন্দই করে থাক। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ বেশি তাওবা কবুলকারী, অসীম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে চলো। কারণ অনুমান সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার। আর কারো দোষ খুঁজে অনুসন্ধান করো না। গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পরকে ধোঁকা দিও না, আর পরস্পরকে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করো না এবং পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ করো না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারি)
তাই কেউ অনুমান করলে…
কারও প্রতি মনে মনে স্রেফ অনুমাননির্ভর কোনো ধারণা আসতে পারে। তা মানুষের সঙ্গে প্রকাশ না করাই উত্তম। আর এমনটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে মহান আল্লাহ ওই অনুমানকারীকে ক্ষমা করে দেবেন। এ সম্পর্কেও কোরআন সুন্নাহ বর্ণনা বিদ্যমান। মহান আল্লাহ একাধিক আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন-
১. وَ لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ فِیۡمَاۤ اَخۡطَاۡتُمۡ بِهٖ ۙ وَ لٰکِنۡ مَّا تَعَمَّدَتۡ قُلُوۡبُکُمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمً
‘আর বিষয়ে তোমরা ভুল কর, সে বিষয়ে তোমাদের কোনো অপরাধ নেই কিন্তু তোমাদের আন্তরিক ইচ্ছা থাকলে (তাতে অপরাধ আছে)। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৫)
২. لَا تُؤَاخِذۡنِیۡ بِمَا نَسِیۡتُ وَ لَا تُرۡهِقۡنِیۡ مِنۡ اَمۡرِیۡ عُسۡرًا
‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না ও আমার ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’ (সুরা আহক্বাফ : আয়াত ৭৩)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মাতের ওই সব ওয়াস্ওয়াসাকারীদের (কুমন্ত্রণাকারীদের) ক্ষমা করে দিয়েছেন; যা তাদের মনে উদিত হয় বা যসব কথা মনে মনে বলে থাকে; যতক্ষণ না তা বাস্তবে করে বা সে সম্পর্কে কথা বলে।’ (বুখারি)
উল্লেখ্য, কোনো মুমিন মুসলমানই অন্যের ব্যাপারে অনুমাননির্ভর খারাপ ধারণা করতে পারে না। এটা মুমিনের শান ও মানের সঙ্গে যায় না বরং তা মুমিন মুসলমানের জন্য অপছন্দনীয়ও একটা কাজ। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-
‘সাহাবারা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের মনের মধ্যে এমন কিছু চিন্তার উদ্রেক হয়, যা সূর্য উদিত হওয়ার পরিধির মধ্যকার (মূল্যবান) সবকিছুর বিনিময়েও প্রকাশ করা আমরা সমীচীন মনে করি না। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি তা অনুভব করো? তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, এটিই ইমানের সুস্পষ্ট পরিচয়।’ (আদাবুল মুফরাদ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, অহেতুক কারও ব্যাপারে কোনো বিষয়ে অনুমাননির্ভর কোনো কথা বলা থেকে বিরত থাকা। কোরআন সুন্নাহর ওপর আমল করা। কেউ অনুমাননির্ভর কথা বলে ফেললে সঙ্গে সঙ্গেই-
وَاللهُ اَعْلَمُ : ‘ওয়াল্লাহু আঅলামু’ অর্থাৎ আর আল্লাহ তাআলাই (বিষয়টি সম্পর্কে) বেশি (ভালো) জানেন।’ বলে ফেলা জরুরি।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। অনুমাননির্ভর কথা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস