জুমার দিন দোয়া কবুলের মুহূর্ত
জুমার দিন দোয়া কবুলের মুহূর্ত কোনটি? এটি জানার আগ্রহ প্রায় সব মুমিন মুসলমানের। এ মুহূর্তটি জানতে পারলে মুমিন মুসলমান মাত্রই নির্ধারিত সময়ে মহান আল্লাহর কাছে নিজেদের চাওয়াগুলোর জন্য আবেদন-মিনতি করবেন। এ মুহূর্তটি কখন?
ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তার বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ মুয়াত্তা মালেকে একটি হাদিস বর্ণনা করে দোয়া কবুলের মুহূর্তটির বিবরণ যেভাবে দিয়েছেন তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
হজরত আবু সালমা ইবন আবদির রহমান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘আমি (সিনাই) পর্বতের দিকে গেলাম। সেখানে হজরত কাব আহবার রাদিয়াল্লাহু আনহর সঙ্গে দেখা করলাম এবং তার সঙ্গে বসলাম।
তারপর তিনি তাওরাত থেকে আমার কাছে বর্ণনা করলেন, আমি তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস বর্ণনা করলাম। আমি তার কাছে যা বর্ণনা করলাম তাতে ইহাও ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
দিনগুলোর (মধ্যে যাতে সূর্যের উদয় হয়) জুমার দিনই সর্বোত্তম। সেই দিনই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই দিনই তাঁহাকে (জান্নাত থেকে) বের করা হয়েছে। সেই দিনই তার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে আর সেই দিনই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
আর এ (জুমার) দিনেই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। এমন কোনো প্রাণী নেই, যে প্রাণী জুমা দিন ভোরবেলা থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার ভয়ে চিৎকার না করে।
এই দিনে একটি মুহূর্ত রয়েছে যখন কোনো মুসলিম বান্দা সেই মুহূর্তটিতে নামাজ পড়া অবস্থায় আল্লাহর কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে অবশ্যই তিনি তাকে উহা প্রদান করেন। হজরত কাব বললেন, ‘ইহা প্রতি বৎসরে একদিন। তখন আমি বললাম, বরং প্রতি জুমায়। এরপর হজরত কাব তাওরাত পাঠ করলেন এবং বলিলন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঠিক বলেছেন।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি এরপর বসরায় ইবন আবি বাসরা গিফারির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বলিলন, কোথা থেকে আগমন করলে? (উত্তরে) আমি বললাম, ‘তুর’ থেকে। তারপর তিনি বললেন, ‘সেখানে গমনের আগে যদি আমি তোমাকে পেতাম, তবে তোমার যাওয়াই হতো না। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনটি মসজিদ ব্যতিত (অন্য কোনো স্থানের জন্য) সওয়ারীর আয়োজন করা যায় না। (তাহলো)- মসজিদুল হারাম তথা কাবা শরিফ; আমার এই মসজিদ তথা মসজিদে নববি এবং মসজিদ ইলিয়া বা বায়তুল মুকাদ্দাস।’
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, এরপর আমি আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে মিলিত হলাম এবং কাব আহবার এর সঙ্গে আমার বৈঠকের কথা বর্ণনা করলাম, আর জুমার দিন সম্পর্কে যে হাদিস তার কাছে বর্ণনা করেছি উহাও বললাম।
(কথা প্রসঙ্গে) আমি বললাম, কাব বলেছেন- ইহা (কবুলিয়াতের মুহূর্ত) বৎসরে একদিন। (ইহা শুনে) আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘কাব ঠিক বলেননি।’ এরপর আমি বললাম, ‘কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাওরাত পাঠ করিয়া বললেন, হ্যাঁ, উহা প্রতি জুমার দিন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কাব (এইবার) সত্য বলেছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সেই মুহুর্তটি কোন মুহূর্ত তুমি জান কি?
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি তাকে বললাম- আপনি আমাকে সেই মুহুর্তটির কথা বলে দিন। এই বিষয়ে আপনি কৃপণতা করবেন না।
এরপর হজরত আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘ইহা জুমার দিনের শেষ সময়।
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি বললাম, উহা জুমার দিনের শেষ মুহুর্তে কিরূপে থাকতে পারে?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নামাজের হালতে কোনো মুসলিম বান্দা উক্ত মুহুর্তের সাক্ষাৎ পেলে...।’
অথচ দিবসের শেষ মুহূর্তে নামাজ পড়া যায় না। তারপর আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি (ইহা) বলেননি! যে ব্যক্তি কোনো স্থানে বসে নামাজের অপেক্ষা করবে; সে যেমন নামাজেই রয়েছে। যতক্ষণ সে নামাজ সমাপ্ত না করে? হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হ্যাঁ, তিনি বললেন, তবে উহা তাহাই (দিনের শেষ মুহুর্তই)।’ (মুয়াত্তা মালেক : রেওয়ায়ত ১৬)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দিনের শেষভাগে তথা আসরের নামাজ থেকে শুরু করে মাগরিব নামাজ পর্যন্ত মসজিদে বা ইবাদতখানায় অবস্থান করে তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইসতেগফার, দোয়া-দরূদ পাঠ করতে করতে মাগরিবের নামাজের অপেক্ষা করা এবং মগরিব সংলগ্ন মুহূর্তে আল্লাহর কাছে নিজেদের বিষয়ে রোনাজারি করে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্তটি নামাজের অপেক্ষায় ও ইবাদত-বন্দেগিতে কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস