মুহাম্মাদ (সা.)-এর বিশেষ স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা অন্য সব নবি-রাসুল আলাইহিমুস সালাম থেকে তাঁকে বিশেষ ২ স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। যা আর কোনো নবি-রাসুলকে দেওয়া হয়নি। কী সেই বিশেষ ২ স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য?
আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে তাঁর দুইটি বিশেষ স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরেছেন। যা অন্য কোনো নবি-রাসুলকে দেওয়া হয়নি। তাহলো- তিনি ‘খাতামুন নাবিয়্যিন’। আল্লাহ তাআলা তাঁর মাধ্যমেই ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নবুয়ত ও রেসালাতের ধারাকে সমাপ্ত করেছেন। কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা তা এভাবে তুলে ধরেছেন-
১. খাতামুন নাবিয়্যিন
مَا کَانَ مُحَمَّدٌ اَبَاۤ اَحَدٍ مِّنۡ رِّجَالِکُمۡ وَ لٰکِنۡ رَّسُوۡلَ اللّٰهِ وَ خَاتَمَ النَّبِیّٖنَ ؕ وَ کَانَ اللّٰهُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا
‘মুহাম্মাদ (সা.) তোমাদের কোনো পুরুষের বাবা নয়; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবি। আর আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৪০)
২. রাহমাতুললিল আলামিন
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ
‘আর আমি তো আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)
শুধু এ দুইটি বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্যেই তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব সীমাবদ্ধ ছিল না। বরং আল্লাহ তাআলা তাকে বিশ্বমানবতার জন্য সর্বশেষ সতর্ককারী ভয়প্রদশণকারী ও সুসংবাদদাতা হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। সে কথাও ওঠে এসেছে কোরআনে-
وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا کَآفَّۃً لِّلنَّاسِ بَشِیۡرًا وَّ نَذِیۡرًا وَّ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
‘আর আমি তো কেবল আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ২৮)
এ ঘোষণার সত্যয়নসহ তাঁর রেসালাতের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টিও মহান আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে ঘোষণা করেছেন এভাবে-
১. قُلۡ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنِّیۡ رَسُوۡلُ اللّٰهِ اِلَیۡکُمۡ جَمِیۡعَۨا الَّذِیۡ لَهٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ۪ فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهِ النَّبِیِّ الۡاُمِّیِّ الَّذِیۡ یُؤۡمِنُ بِاللّٰهِ وَ کَلِمٰتِهٖ وَ اتَّبِعُوۡهُ لَعَلَّکُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদের সবার প্রতি সেই আল্লাহর (প্রেরিত) রাসুল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তাঁর প্রেরিত উম্মি নবির প্রতি; যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি বিশ্বাস রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হেদায়াত পাবে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৫৮)
২. تَبٰرَکَ الَّذِیۡ نَزَّلَ الۡفُرۡقَانَ عَلٰی عَبۡدِهٖ لِیَکُوۡنَ لِلۡعٰلَمِیۡنَ نَذِیۡرَا
‘কত প্রাচুর্যময় তিনি (আল্লাহ); যিনি তাঁর দাসের (মুহাম্মাদ সা.) প্রতি ফুরকান (কোরআন) অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে।’ (সুরা ফুরকান : আয়াত ১)
আগের নবি-রাসুলদেরকে বিশেষ একটি জাতির কাছে পাঠানো হতো। কিন্তু হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে সব মানুষের নবি করে পাঠানো হয়েছে। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক হাদিসে ঘোষণা করেছেন-
১. ‘আমাকে সাদা-কালো সবার প্রতি নবি বানিয়ে পাঠানো হয়েছে।’ (মুসলিম)
২. অন্য এক হাদিসে এসেছে, ‘আমি লাল ও কালো সবার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসলিমঃ)
হাদিসে লাল ও কালো থেকে অনেকে জ্বিন ও মানুষ উদ্দেশ্য নিয়েছেন, আবার অনেকে আরবি ও অনারবি উদ্দেশ্য নিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি সব জাতির নবি হিসেবেই দুনিয়াতে আগমন করেছেন।
৩. ‘আগের নবিকে বিশেষ একটি জাতির কাছে পাঠানো হতো। আর আমাকে সব মানুষের জন্য নবি হিসাবে পাঠানো হয়েছে।’ (বুখারি, মুসলিম)
৪. কোরআনের দাওয়াত এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রেসালাত কোনো একটি দেশের জন্য নয় বরং সারা দুনিয়ার জন্য এবং কেবল তাঁর যুগের জন্য নয় বরং (আগামী) ভবিষ্যতের সব যুগের জন্য। তাইতো তিনি বলেছেন-
‘আমাকে সমস্ত সৃষ্টির কাছে পাঠানো হয়েছে এবং আমার আগমনে নবিদের আগমনের ধারাবাহিকতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’ (মুসলিম)
এ দুই বিশেষ স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কারণেই হজরত মুহাম্মাদু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আছেন এবং থাকবেন সবার চেয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনিই বিশ্ববাসীর জন্য রহমত এবং তিনি সর্বশেষ নবি ও রাসুল।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে খাতামুন নাবিয়িন ও রাহমাতুললিল আলামিন হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনাদর্শকে গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস