ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

তামাত্তু হজ পালনের ধারাবাহিক পদ্ধতি

ইসলাম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:০৬ পিএম, ২১ মে ২০২৪

হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। সামর্থ্যবান মুসলমানদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তাই সামর্থ্য থাকলে অযথা অবহেলা বা দেরি না করে দ্রুত হজ করে ফেলা উচিত। আল্লাহ বলেছেন,

اِنَّ اَوَّلَ بَیۡتٍ وُّضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِیۡ بِبَکَّۃَ مُبٰرَکًا وَّ هُدًی لِّلۡعٰلَمِیۡنَ فِیۡهِ اٰیٰتٌۢ بَیِّنٰتٌ مَّقَامُ اِبۡرٰهِیۡمَ ۬ۚ وَ مَنۡ دَخَلَهٗ کَانَ اٰمِنًا وَ لِلّٰهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡهِ سَبِیۡلًا وَ مَنۡ کَفَرَ فَاِنَّ اللّٰهَ غَنِیٌّ عَنِ الۡعٰلَمِیۡنَ

নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও হিদায়াত বিশ্ববাসীর জন্য। তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহিম। আর যে তাতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ হয়ে যাবে এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। আর যে কুফরি করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী। (সুরা আলে ইমরান: ৯৬, ৯৭)

তামাত্তু হজের পরিচয়

হজ তিন প্রকার; ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু

ইফরাদ হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) শুধুমাত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদন করাকে ইফরাদ হজ বলা হয়।

কিরান হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) হজ ও ওমরা পালনের নিয়তে দীর্ঘ দিনের জন্য ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ সম্পাদন করাকে কিরান হজ বলে।

তামাত্তু হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) ওমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ পালন করে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাওয়া অতঃপর হজের আগে হজের নিয়তে ইহরাম বেধে হজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ বলে।

তিন প্রকার হজের মধ্যে কিরান হজ বেশি ফজিলতপূর্ণ। তবে তামাত্তু হজ পালন সুবিধাজনক ও অপেক্ষাকৃত কম কষ্টসাধ্য হওয়ায় অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ পালন করে থাকেন। কিরান হজে ইহরাম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে ইহরামের নিষেধাজ্ঞাগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে না পারার আশঙ্কা থাকলে তামাত্তু হজ-ই উত্তম। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/ ৫২৯)

তামাত্তু হজ পালনের ধারাবাহিক পদ্ধতি

ধাপ-১ ওমরার ইহরাম (ফরজ)
যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন, তারা নিজেদের ঘর থেকেই ইহরাম বেধে রওয়ানা হতে পারবেন। অথবা নিজ নিজ দেশের হজ ক্যাম্প থেকে অথবা মিকাত অতিক্রম করার আগেই ইহরাম বাঁধবেন।

ইহরাম বাঁধার জন্য ওজু বা গোসল করবেন অতঃপর মিকাত পার হওয়ার আগেই পুরুষ হজ ওমরা পালনকারীরা দুটি সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করবেন, নারীরা তাদের ইহরামের পোশাক পরিধান করবেন এবং দু রাকাত নামাজ আদায় করে ওমরার নিয়ত করবেন।

অন্তরে কোনো কাজের ইচ্ছা পোষণ করে নেওয়াকে নিয়ত বলে। মুখে নিয়তের শব্দ উচ্চারণ করা জরুরি নয়, অন্তরে ইচ্ছা পোষণ করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। তবে হজের নিয়তের শব্দ মুখেও উচ্চারণ করা উত্তম।

তামাত্তু হজ পালনকারী প্রথম ইহরামের সময় শুধু উমরাহর নিয়ত করবেন এভাবে, ‘হে আল্লাহ আমি ওমরাহর নিয়ত করছি, আমাকে যথাযথভাবে ওমরাহ পালন করার তওফিক দিন!’

তারপর তালবিয়া পাঠ করুন,

لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لا شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল-হামদা, ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।

অর্থ: আমি উপস্থিত, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি উপস্থিত। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নেয়ামত আপনার এবংএবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।

ধাপ-২ ওমরার তাওয়াফ (ওয়াজিব)
কাবা শরিফকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমে তাওয়াফ সম্পন্ন করুন। হাজরে আসওয়াদ থেকে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করবেন।

সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা অথবা হাতে স্পর্শ করুন। সম্ভব না হলে দুহাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করবেন। সম্ভব হলে রুকনে ইয়ামেনি অতিক্রম করার সময় তা স্পর্শ করবেন। সম্ভব না হলে ইশারা করাই যথেষ্ট।

ইজতিবা করা
বাইতুল্লাহ তাওয়াফকালে অবশ্যই ইজতিবা করবেন। ইজতিবা হলো ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে রেখে চাদরের দুই মাথাকে বাম কাঁধের সামনে ও পিছনে ফেলে রাখা।

রমল করা
প্রথম তিন চক্কর রমল তথা বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদমে দ্রুতগতিতে প্রদক্ষিণ করবেন। পরবর্তী চার চক্কর সাধারণভাবে হেটে তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন।

রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তাওয়াফকালে এ দোয়া পড়বেন:

رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: ‍রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আযাবান-নার

অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)

তারপর হাজরে আসওয়াদে আসবেন। এভাবে সাতবার চক্কর বা প্রদক্ষিণ ও আট ইস্তিলামে তাওয়াফ শেষ করবেন।

ধাপ-৩ মাকামে ইবরাহিমে নামাজ (ওয়াজিব)
তাওয়াফ শেষ হলে ভিড় না থাকলে মাকামে ইবরাহিম নিকটবর্তী প্রান্তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে দোয়া করবেন। ভিড় থাকলে সরে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন। এটা দোয়া কবুলের স্থান। তারপর দাঁড়িয়ে জমজমের পানি পান করুন।

ধাপ-৪ ওমরার সাঈ (ওয়াজিব)
সাফা পাহাড়ের ওপরে আরোহন করে সেখান থেকে কিবলামুখী হয়ে সাঈর নিয়ত করে সাঈ শুরু করুন। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী নির্ধারিত চিহ্নিত স্থান দ্রুতবেগে অতিক্রম করুন। মারাওয়া পাহাড়ে আরোহনপূর্বক দোয়া করুন। তারপর আবার সাফায় আসুন। এভাবে সাতটি চক্কর দিলে একটি সাঈ পূর্ণ হয়।

ধাপ-৫ মাথা মুণ্ডানো (ওয়াজিব)
পুরুষ হলে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) আদর্শ অনুসারে সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডণ করুন বা চুল ছাঁটুন আর নারী হলে এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটুন। চুল কাটার মাধ্যমে আপনি ওমরাহর ইহরাম থেকে বের হয়ে যাবেন।

ওমরাহ পালন শেষে ইহরাম থেকে বের হওয়ার পর আপনি স্বাভাবিক হালাল সব কাজই করতে পারবেন। হজের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে ৭ জিলহজ থেকে আবার হজের জন্য ইহরাম বাঁধবেন।

ধাপ-৬ হজের ইহরাম (ফরজ)
কাবা শরিফে ৭ জিলহজ হজের নিয়মাবলীর ওপর খুতবা দেওয়া হয়। তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তারপর হারাম শরিফ বা বাসা থেকে আগের নিয়মে শুধু হজের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ৮ জিলহজ জোহরের নামাজের পূর্বে মিনায় পৌঁছে যান।

ধাপ-৭ মিনায় অবস্থান (সুন্নত)
৮ জিলহজ জোহর থেকে ৯ জিলহজ ফজর পর্যন্ত মোট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করুন এবং সেখানে অবস্থান করুন।

ধাপ-৮ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান (ফরজ)
হজের অন্যতম রোকন বা ফরজ হলো আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। ৯ জিলহজ সকালে মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফায় যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে গোসল করে একবার তাকবিরে তাশরিক পাঠ করুন, ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার; ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

জোহরের নামাজের আগেই আরাফায় উপস্থিত হবেন। দুপুরের পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে হজের খুতবা শুনুন। নিজ নিজ তাবুতে জোহর ও আসরের নামাজ নির্দিষ্ট সময়ে আলাদাভাবে আদায় করুন। সুর্যাস্তের পর মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার দিকে রওয়ানা হোন।

ধাপ-৯ মুজদালিফায় অবস্থান (ওয়াজিব)
আরাফার ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে ইশার সময় মাগরিব ও ইশা এক আজানে ও একই ইক্বামাতে একসঙ্গে আদায় করুন।

১৩ জিলহজ আসর নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক আদায় করুন।

মুজদালিফায় রাতযাপন করা সুন্নত। ফজরের নামাজের পর থেকে সুর্য ওঠার আগ পর্যন্ত কিছু সময় অবস্থান করা ওয়াজিব। তাই ফজরের আগে মুজদালিফা ত্যাগ করা যাবে না। তবে সুর্য ওঠার আগেই মুজদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশে রওয়ানা হতে হবে।

মিনায় আসার পথে নিক্ষেপের জন্য ৭০টি ছোট ছোট কংকর সংগ্রহ করুন।

ধাপ-১০ কংকর নিক্ষেপ (প্রথম দিন) (ওয়াজিব)
১০ জিলহজ ফজর নামাজ মুজদালিফায় আদায় করে সূর্য ওঠার আগে মিনায় এসে বড় জামরায় ৭টি কংকর নিক্ষেপ করুন।

এ দিন সম্ভব না হলে রাতের শেষ পর্যন্ত সময়ে কংকর নিক্ষেপ করুন। কংকর নিক্ষেপের জায়গায় বাংলায় দিক-নির্দেশনা দেয়া হয় তা মনোযোগ সহকারে শুনুন।

ধাপ-১১ কোরবানি করা (ওয়াজিব)
বড় শয়তানকে পাথর মেরে কোরবানি করুন।

ধাপ-১২ মাথা মুণ্ডন করা (ওয়াজিব)
কোরবানি সম্পন্ন করার পর মাথা মুণ্ডন করুন বা চুল ছাটুন, নারীরা এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটুন। চুল কাটার পর স্ত্রী সঙ্গম ছাড়া যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে।

১০ জিলহজ বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ, কুরবানি ও মাথা মুণ্ডন- এ তিন কাজের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি।

ধাপ-১৩ তাওয়াফে জিয়ারত (ফরজ)
হজের সর্বশেষ ফরজ কাজ তাওয়াফে জিয়ারাত। ১২ জিলহজ সুর্যাস্তের আগেই এ তাওয়াফ সম্পন্ন করতে হবে। ১২ তারিখের পর তাওয়াফে জিয়ারত আদায় করলে দম বা কোরবানি দিতে হবে।

ধাপ-১৪ সাঈ (ওয়াজিব)
তাওয়াফ শেষে সাফা-মারওয়া গিয়ে সাঈ করতে হবে। সাফা পাহাড়ের ওপরে আরোহন করে সেখান থেকে কিবলামুখী হয়ে সাঈর নিয়ত করে সাঈ শুরু করুন। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী নির্ধারিত চিহ্নিত স্থান দ্রুতবেগে অতিক্রম করুন। মারাওয়া পাহাড়ে আরোহনপূর্বক দোয়া করুন। অতপর আবার সাফায় আসুন। এভাবে সাতটি চক্কর দিলে একটি সাঈ পূর্ণ হয়।

ধাপ-১৫ কংকর নিক্ষেপ (ওয়াজিব)
১০, ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থান করা এবং ১১ ও ১২ জিলহজ মিনায় অবস্থিত তিন জামরায় ৭টি করে ২১টি পাথর নিক্ষেপ করুন। প্রথমে ছোট জামারায়, তারপর মধ্যম, তারপর বড় জামারায় কংকর নিক্ষেপ করুন। দুর্বল ও নারীদের জন্য রাতের বেলায় কংকর নিক্ষেপ করা উত্তম।

১০-১২ জিলহজ মিনাতেই রাত যাপন করুন। ১৩ জিলহজ মিনায় না থাকতে চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে মিনা ত্যাগ করুন। সুর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা উত্তম। ১৩ জিলহজ মিনায় অবস্থান করলে প্রত্যেক জামারাতে ৭টি করে কংকর নিক্ষেপ শেষ করে মিনা থেকে ফিরে আসা সুন্নাত।

ধাপ-১৬ বিদায়ী তাওয়াফ (ওয়াজিব)
হজ যাত্রীদের জন্য বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব। হজ শেষে যে কোনো নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফ পরিণত হয়ে যায়।

বিদায়ী তাওয়াফের মাধ্যমে হজের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আল্লাহ তাআলা হজ পালনকারীদের যথাযথভাবে হজ পালন করার তওফিক দান করুন। সব হাজিকে মাবরুর হজ নসিব করুন। আমিন!

ওএফএফ/এমএস

আরও পড়ুন