জাকাত অস্বীকারকারী সম্পর্কে যা বলেছেন বিশ্বনবি
নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই জাকাত দিতে চায় না। অথচ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের উপর জাকাত আদায় করা ফরজ। জাকাত আদায় না করলে দুনিয়ায় যেমন রয়েছে ক্ষতি তেমনি জাকাত আদায় না করার পরিনাম খুবই ভয়াবহ।
জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। যারা জাকাত আদায়ে অনিহা প্রকাশ করে তাদের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারিও ঘোষণা করেছেন তিনি। জাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। কেননা সম্পদের সুষম বণ্টন এবং সামাজিক স্থিতিশলতায় জাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার বিকল্প নেই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও জাকাত আদায় না করার ভয়াবহ শাস্তির কথা উল্লেখ করে উম্মাতে মুহাম্মাদিকে সতর্ক করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সম্পদশালীরা জাকাত আদায় না করলে (তাদের) সে সম্পদ জাহান্নামের আগুনে গরম করে তক্তা বানানো হবে। তারপর তা দিয়ে তার (জাকাত অনাদায়ী সম্পদশালীর) উভয় পার্শ্ব ও কপালে দাগ দিতে থাকবে। সেই দিন (থেকে) আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের মাঝে ফয়সালা করা পর্যন্ত (তারা এ শাস্তি ভোগ করবে)। যে দিনটি হবে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। তারপর সে জান্নাতি হলে জান্নাতের পথে আর জাহান্নামি হলে জাহান্নামের পথ দেখবে। (বুখারি, মুসলিম)
সম্পদশালী ব্যক্তি জাকাত আদায় না করলে আল্লাহর আদালতে কী ধরণের শাস্তির সম্মুখীন হবে তা জানিয়ে আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে বলেন-
‘আর (হে রাসুল! আপনি) তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন, যারা সোনা-রূপা জমা করে রাখে এবং তা (নির্ধারিত পরিমাণে) আল্লাহর পথে ব্যয় করে না। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা (সম্পদ) উত্তপ্ত (গরম) করা হবে এবং তা (সম্পদ) দ্বারা তাদের কপাল, পার্শ্ব এবং পিঠ আগুনে পোড়ানো হবে এবং (সেদিন তাদের বলা হবে), এগুলো (সেই সম্পদ) যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এখন এগুলো (সম্পদ) জমা করে রাখার স্বাদ গ্রহণ কর।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ৩৪-৩৫)
মনে রাখতে হবে
জাকাত দেয়ার ফলে সম্পদ পবিত্র হয়। এতে সম্পদ কমে না বরং তাতে বরকত হয়। তাই জাকাত আদায়ে অলসতা বা কৃপতণতা করার কোনো সুযোগ নেই। ক্ষুধামুক্ত সমাজ বিনির্মাণে সুরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে নির্দেশিত আট শ্রেণির ব্যক্তি তা প্রদাণ করা জরুরি।
শুধু সম্পদশালী ব্যক্তিই জাকাত আদায় করবে না, যদি ওই ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এমন কোনো অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান বা মস্তিষ্ক বিকৃত (পাগল)ও থাকে তবে তাদের পক্ষ থেকে দায়িত্বশীল ব্যক্তি সম্পদের জাকাত আদায় করবেন।
আর জাকাত আদায়ে বখিলতা ও অলসতাকারী ব্যক্তি ফাসেক বলে বিবেচিত হবে এবং কবিরা গোনাহে লিপ্ত বলে গণ্য হবে। আর যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সত্ত্বেও জেনে বুঝে ইচ্ছাকৃতভাবে তা দিতে অস্বীকার করবে, সে ঈমানহারা হয়ে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ার ক্ষতি ও পরকালের ভয়বাহ শাস্তি থেকে বেঁচে থাকতে কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশনা মেনে যথাযথভাবে জাকাত আদায় করা। জাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা বা সমাজ তৈরিতে যথাযথ ভূমিক পালন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জাকাত আদায় করে তাঁর বিধান পালনে সচেষ্ট থাকার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ঘোষিত জাকাত অনাদায়ের ভয়াবহ পরিণাম থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস