ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ধর্ম

নামাজে সুরা ফাতেহার আগে কী পড়বেন?

ধর্ম ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৫০ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০২১

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজে তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলে উভয় হাত বাঁধতেন তখন তিনি ক্বিরাআত শুরু করার আগে কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। এ সময় তিনি সুন্দর ও উত্তম কথার বিশেষ কিছু দোয়া পড়তেন। হাদিসের বর্ণনায়ও একাধিক দোয়া ওঠে এসেছে। নামাজের শুরুতে সুরা ফাতেহার আগে পড়ার সেই দোয়াগুলো কী?

নামাজ শুরু করার পর যে দোয়া পড়া হয় তাকে ইসতিফতাহ বা নামাজ শুরুর দোয়া বলা হয়। অনেকেই একে ছাড়া হিসেবেও জানে। নামাজে দাঁড়িয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদার স্থানের দিকে তাকিয়ে শুরুতেই আল্লাহর প্রশংসাসহ সুন্দর ও উত্তম দোয়া তথা ছানা পড়তেন।

নামাজের শুরুতে সুরা ফাতেহার আগে এ দোয়া/ছানা পড়া খুবই জরুরি। এ সম্পর্কে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
নামাজ ভুলকারী সাহাবিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, ‘কোনো ব্যক্তির নামাজই ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তকবির দিয়েছে; আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেছে এবং যথাসম্ভব কুরআন পাঠ করেছে।’ (আবু দাউদ, মুসতাদরাকে হাকেম)

নামাজের শুরুতে পড়ার একাধিক দোয়া
১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজে (তাহরিমার) তকবির দিতেন, তখন কিরাআত শুরুর আগ পর্যন্ত কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাবা-মা আপনার জন্য কোরবান হোক। আপনি তকবির ও ক্বিরাআতের মাঝে চুপ থেকে কী পড়েন? (তা) আমাকে বলে দিন।’ তিনি বললেন, ‘আমি বলি-
اَللّــهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَـمَا بَاعَــدْتَّ بَيْنَ الْمَشــْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اَللّهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اَللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ।
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বায়িদ বাইনি ওয়া বাইনা খাত্বাইয়াইয়া কামা বাআত্তা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব; আল্লাহুম্মা নাক্বিনি মিনাল খাত্বিইয়া, কামা ইউনাক্বিস সাওবুল আবইয়াদু মিনাদ-দানাস; আল্লাহুম্মাগসিল খাত্বাইয়াইয়া বিলমায়ি ওয়াছ-ছাল্লাঝি ওয়াল বারাদি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার মাঝে ও আমার গোনাহসমূহের মাঝে এতটা ব্যবধান রাখ যেমন তুমি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে ব্যবধান রেখেছো। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে গোনাহসমূহ থেকে পরিষ্কার করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার গোনাহসমূহকে ঠান্ডা-শীলতল পানি দ্বারা ধুয়ে দাও।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, দারেমি, মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ)

২. হজরত আবু সাঈদ ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাজের শুরুতে এই দোয়া পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالى جَدُّكَ وَلاَ إِلهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি। তোমার নাম অতি বরকতময়, তোমার মাহাত্ম অতি উচ্চ এবং তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, বায়হাকি, মুসতাদরাকে হাকেম, নাসাঈ)

হাদিসের পরিভাষায়, নিঃসন্দেহে বান্দার নামাজে সুরা ফাতেহার আগে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কথা হল ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা...’ বলা।’ (ইবনে মাজাহ, নাসাঈ)

৩. ফরজ ও নফল নামাজে তাকবিরে তাহরিমার পর প্রিয় নবি আরও পড়তেন-
وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ حَنِيْفاً وَّمَا أَناَ مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ، إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَ مَحْيَاىَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَ أَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ اَللّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لاَ إِلهَ إَلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ أَنْتَ رَبِّيْ وَ أَنَا عَبْدُكَ ، ظَلَمْتُ نَفْسِيْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ جَمِيْعاً إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ وَاهْدِنِيْ لأَحْسَنِ الأَخْلاَقِ لاَ يَهْدِيْ لأَحْسَنِهَا إِلاَّ أَنْتَ، وَاصْرِفْ عَنِّيْ سَيِّئَهَا لاَ يَصْرِفُ عَنِّيْ سَيِّئَهَا إِلاَّ أَنْتَ، لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِيْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ وَالْمَهْدِيْ مَنْ هَدَيْتَ، أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ، لاَ مَنْجَا وَلاَ مَلْجَأَ مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ، تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَ أَتُوْبُ إِلَيْكَ।

উচ্চারণ : ওয়াঝঝাহ্‌তু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁউ ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়াবি জালিকা উমিরতু ওয়া আনা আউয়ালুল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা আন্তাল মালিকু লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ওয়া বিহামদিকা আন্তা রাব্বি ওয়া আনা আব্দুকা। জালামতু নাফসি ওয়াতারাফতু বিজাম্বি, ফাগফিরলি জাম্বি ঝামিআন; ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আন্তা। ওয়াহদিনি লিআহসানিল আখলাক্বি লা ইয়াহদি লি-আহ্‌সানিহা ইল্লা আন্তা। ওয়াসরিফ আন্নি সাইয়্যিআহা লা ইয়াসরিফু আন্নি সাইয়্যিআহা ইল্লা আন্তা। লাব্বাইকা ওয়াল খাইরু কুল্লুহু ফি ইয়াদাইকা। ওয়াশ শাররু লাইসা ইলাইকা ওয়াল মাহদি মান হাদাইতা; আনা বিকা ওয়া ইলাইকা; লা মাংঝা ওয়ালা মালঝাআ মিনকা ইল্লা ইলাকা; তাবারাকতা ওয়াতা আলাইতা; আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইমাইকা।

অর্থ : ‘আমি একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর প্রতি মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। নিশ্চয়ই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি এ সম্বন্ধেই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি আত্মসমর্পণকারীদের প্রথম। হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ তুমি ছাড়া কেউ সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। তুমি আমার প্রভু ও আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর অত্যাচার করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করেছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ মার্জনা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউঅপরাধ ক্ষমা করতে পারে না। সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি আমাকে পথ দেখাও, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউ সুন্দরতম চরিত্রের প্রতি পথ দেখাতে পারে না। মন্দ চরিত্রকে আমার কাছ থেকে দূরে রাখ, যেহেতু তুমি ছাড়া অন্য কেউ মন্দ চরিত্রকে আমার কাছ থেকে দূর করতে পারে না। আমি তোমার আনুগত্যে হাজির এবং তোমার আজ্ঞা মানতে প্রস্তুত। যাবতীয় কল্যাণ তোমার হাতে এবং মন্দের সম্পর্ক তোমার প্রতি নয়। আমি তোমার অনুগ্রহে আছি এবং তোমারই প্রতি আমার প্রত্যাবর্তন। তুমি বরকতময় ও মহিমময়; তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে হিব্বান)

৪. নফল নামাজে সুরা ফাতেহর আগে
اَللهُ أَكْبَرُ كَبِيْراً، اَلْحَمْدُ للهِ كَثِيْراً، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَّأَصِيْلاً
উচ্চারণ : আল্লাহু আকবার কাবিরা, আলহামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতাঁও ওয়া আসিলা।’
অর্থ : ‘আল্লাহ অতি মহান, আল্লাহর অনেক অনেক প্রশংসা, আমি সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি।’

এ দোয়ার ফজিলত
এই দোয়াটি দিয়ে নফল নামাজ শুরু করতে হয়। জনৈক সাহাবি এই দোয়া দিয়ে নামাজ শুরু করায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘দোয়াটির জন্য আমি বিস্মিত হয়েছি। কারণ ওর জন্য আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করা হলো।’ (সুবহানাল্লাহ)

হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ওই কথা শোনার পর থেকে আমি কোনো দিন এ দোয়া পড়তে ছাড়িনি।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)

হজরত জুবাইর বিন মুত্বইম থেকে হজরত আবু নুআইম বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ দোয়া নফল নামাজে পড়তে শুনেছেন। (আখবারু আসবাহান)

৫. তাহাজ্জুদের নামাজের শুরুতে এ দোয়াগুলো পড়তেন-
اَللّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُوْرُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَ مَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَلِكُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيْهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ وَ قَوْلُكَ الْحَقُّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّوْنَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ، اَللّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، أَنْتَ رَبُّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ، فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ أَنْتَ إِلهِيْ، لاَ إِلهَ إِلاَّ أَنْتَ، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকালহামদু আন্তা নুরুস সামাওয়াতি ওয়ালআরদি ওয়া মান ফিহিন্না; ওয়া লাকালহামদু আন্তা কাইয়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না; ওয়া লাকালহামদু আন্তা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না; ওয়া লাকাল হামদু আন্তাল হাক্কু, ওয়া ওয়াদুকাল হাক্কু, ওয়া ক্বাওলুকাল হাক্কু, ওয়া-লিক্বাউকাল হাক্কু, ওয়াল-জান্নাতু হাক্কু, ওয়ান-নারু হাক্কু, ওয়াস-সাআতু হাক্কু, ওয়ান-নাবিয়্যুনা হাক্কু, ওয়া মুহাম্মাদুন হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু, ওয়া বিকা খাসামতু, ওয়া ইলাইকা হাকামতু। আন্তা রাব্বুনা ওয়া ইলাইকাল মাসির। ফাগ্‌ফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আন্তা আলামু বিহি মিন্নি। আন্তাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আন্তাল মুআখখিরু আন্তা ইলাহি। লা ইলাহা ইল্লা আন্তা। ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিকা।’

অর্থ : হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা শুধু তোমারই। তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর জ্যোতি। তোমারই সব প্রশংসা, তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। তোমারই সব প্রশংসা। তুমি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যে অবস্থিত সব কিছুর অধিপতি। তোমারই সব প্রশংসা। তুমিই সত্য, তোমার প্রতিশ্রুতিই সত্য, তোমার কথাই সত্য, তোমার সাক্ষাৎ সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমারই কাছে আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার উপরই ভরসা করেছি, তোমার উপরই ঈমান (বিশ্বাস) রাখছি, তোমার দিকে অভিমুখী হয়েছি, তোমারই সাহায্যে বিতর্ক করেছি, তোমারই কাছে বিচার নিয়ে গেছি। তুমি আমাদের প্রতিপালক, তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তনস্থল। অতএব তুমি আমার আগের, পরের, গোপন, প্রকাশ্য এবং যা তুমি অধিক জান সে সব পাপকে ক্ষমা করে দাও। তুমিই প্রথম, তুমিই শেষ। তুমি আমার উপাস্য, তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নাই এবং তোমার তাওফিক ছাড়া পাপ থেকে ফেরার ও সৎকাজ করার সাধ্য নাই। (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, দারেমি, মিশকাত)
اَللّهُمَّ رَبَّ جِبْرَآئِيْلَ وَ مِيْكَائِيْلَ وَإِسْرَآفِيْلَ، فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ، اِهْدِنِيْ لِمَا اخْتُلِفَ فِيْهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِيْ مَنْ تَشَاءُ إِلى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা জিবরাইলা ওয়া মিকিইলা ওয়া ইসরাফিলা। ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল-আরদি; আলিমাল গাইবি ওয়াশ-শাহাদাতি আন্তা তাহকুমু বাইনা ইবাদিকা ফিমা কানু ফিহি ইয়াখতালিফুনা। ইহদিনি লিমাখতুলিফা ফিহি মিনাল হাক্কি বি-ইজনিকা ইন্নাকা তাহদি মান তাশাউ ইলা সিরাতিম মুসতাক্বিম।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! হে জিবরিল, মিকাল ও ইসরাফিলের প্রভু! হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃজনকর্তা! হে দৃশ্য ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা! তুমি তোমার বান্দাদের মাঝে মীমাংসা কর যে বিষয়ে ওরা মতভেদ করে। যে বিষয়ে মতভেদ করা হয়েছে সে বিষয়ে তুমি আমাকে তোমার অনুগ্রহে সত্যের পথ দেখাও। নিশ্চয়ই তুমি যাকে ইচ্ছা সরল পথ দেখিয়ে থাক। (মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, মিশকাত)

৬. এ ছাড়াও তাহাজ্জুদ নামাজের শুরুতে তিনি আরও যেসব দোয়া পড়তেন-
‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা...’ (২নং দোয়া) পড়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ৩ বার এবং ‘আল্লাহু আকবার কাকিরা’ ৩ বার।’ (আবু দাউদ, মুসতাদরাকে হাকেম)

৭. এ তাসিবহগুলো পড়া-
‘আল্লাহু আকবার’ ১০ বার; ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ১০ বার; ‘সুবহানাল্লাহ্‌’ ১০ বার, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ১০ বার, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ ১০ বার।

اَللهُمَّ اغْفِرْلِىْ وَاهْدِنِىْ وَارْزُقْنِىْ وَعَافِنِىْ
‘আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়াহ্‌দিনি ওয়ারযুক্বনি ওয়া আফিনি।’
‘হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, হেদায়াত কর, রুজি ও নিরাপত্তা দাও) ১০ বার;

اَللهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ ضَّيكِ يَوْمَ الْحِسَابِ
‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাজ্‌জাইক্বি ইয়াওমাল হিসাব।’
‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি হিসাবের দিনে সংকীর্ণতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) ১০ বার। (মুসনাদে আহমাদ, আবু দাউদ, তাবারানি)

৮. ‘আল্লাহু আকবার’ ৩ বার পড়ে অতঃপর এই দোয়া পড়া-
ذُو الْمَلَكُوْتِ وَالْجَبَرُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ
উচ্চারণ : ‘জুল মালাকুতি ওয়ালঝাবারুতি ওয়ালকিবরিয়ায়ি ওয়ালআযামাতি।’
অর্থ : ‘(হে আল্লাহ! আপনি) সার্বভৌমত্ব, প্রবলতা, গর্ব ও মাহাত্মের অধিকারী।’ (আবু দাউদ)

হাদিসের বর্ণনায় নামাজের নিয়ত বাধার পর সুরা ফাতেহা পড়ার আগে উল্লেখিত দোয়া তথা ছানা পড়া প্রত্যেক নামাজির জন্য খুবেই প্রয়োজন। কারণ এ দোয়াগুলোতে রয়েছে প্রত্যেকের জন্য কল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার আবেদন। পাশাপাশি নামাজ কবুল হওয়ার জন্য সহায়ক।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফরজ ও নফল নামাজে তাকবিরে তাহরিমার পর সুরা ফাতেহা পড়ার আগে উল্লেখিত দোয়া/ছানাগুলো পড়ার তাওফিক দান করুন। নামাজে সুন্নাতের এই বিশেষ আমল বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এএসএম

আরও পড়ুন