কেন বৃষ্টি হয়, কুরআন কী বলে?
সৃষ্টি জগতের জন্য কল্যাণকর জিনিসের মধ্যে অন্যতম একটি বৃষ্টি হওয়া। কিন্তু কে বৃষ্টি দেন? বৃষ্টি হওয়ার কারণ কী? কুরআনুল কারিমের বর্ণনায় এ সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
কুরআনুল কারিমের বর্ণনায় বৃষ্টি বর্ষণের কারণ
১.
اَفَرَءَیۡتُمُ الۡمَآءَ الَّذِیۡ تَشۡرَبُوۡنَ - ءَاَنۡتُمۡ اَنۡزَلۡتُمُوۡهُ مِنَ الۡمُزۡنِ اَمۡ نَحۡنُ الۡمُنۡزِلُوۡنَ
‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে তোমরা চিন্তা করেছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ হতে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি? (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৮-৬৯)
এক : শুধু তোমাদের ক্ষুধা নিবারণের ব্যবস্থাই নয় তোমাদের পিপাসা মেটানোর ব্যবস্থাও আমিই করেছি। তোমাদের জীবন ধারণের জন্য যে পানি খাদ্যের চেয়েও অধিক প্রয়োজনীয় তার ব্যবস্থা তোমরা নিজেরা কর নাই। আমিই তা সরবরাহ করে থাকি। (ফাতহুল কাদির)
দুই : আমি তোমাদেরকে শুধু অস্তিত্ব দান করেই বসে নাই। তোমাদের প্রতিপালনের এত সব ব্যবস্থাও আমি করছি, যা না থাকলে তোমরা বেঁচেই থাকতে পারতে না। (আদওয়াউল বায়ান)
তিন : তোমরা এ পানির কোনো ভান্ডারের মালিক নও যে তোমরা চাইলেই তা পাবে। এটা তো শুধু আমার পক্ষ থেকে দান করা।(ফাতহুল কাদির)
চার : আল্লাহর কুদরতের ঐ ব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে, যার সাহায্যে ভূ-পৃষ্ঠে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষ, জীবজন্তু, পশু-পক্ষী ও হিংস্র জানোয়ারদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সরবরাহের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে। ফলে প্রত্যেক ব্যক্তি সর্বত্র, সর্বাবস্থায় প্রয়োজন অনুযায়ী পান, গোসল ও ধোয়া এবং ক্ষেত-খামার ও উদ্যান সেচের জন্য বিনামূল্যে পানি পেয়ে যায়। যাতে কূপ খনন ও পাইপ সংযোজনে কারো কিছু ব্যয় হলে তা সুবিধা অর্জনের মূল্য বৈ নয়কি? যেখানে এক ফোঁটা পানির মূল্য পরিশোধ করার ক্ষমতা কারও নেই এবং কারও কাছে তা দাবিও করা হয় না।
পাঁচ : দুনিয়াতে আল্লাহ তাআলা যে পানি নাজিল করান তা বর্ষণ করার পর তোমরা ইচ্ছে করলেই তা সংরক্ষন করে রাখতে পার না। (ফাতহুল কাদির) যতক্ষণ না আল্লাহ তাআলা সে ব্যবস্থা করে না দেবেন। কারণ তা নাযিল হওয়ার পর সে পানি নষ্ট করে দেওয়া, ব্যবহার উপযোগী না থাকা অসম্ভব কিছু নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে এ কথা এভাবে তুলে ধরেছেন-
২. وَ نَزَّلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبٰرَکًا فَاَنۡۢبَتۡنَا بِهٖ جَنّٰتٍ وَّ حَبَّ الۡحَصِیۡدِ
‘আর আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি নাযিল করেছি। অতঃপর তা দ্বারা আমি উৎপন্ন করি বাগ-বাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।’
এ আয়াতে কর্তনযোগ্য শস্যদানা বা পরিপক্ব শস্যরাজি বলতে সেই ক্ষেতগুলো, যেগুলো থেকে গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, ডাল ও ধান ইত্যাদি ফসল হয় এবং তা সুরক্ষিত করে রাখা হয়।’ (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
৩. وَ هُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِهٖ ۚ وَ اَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَهُوۡرًا - لِّنُحۡیِۦَ بِهٖ بَلۡدَۃً مَّیۡتًا وَّ نُسۡقِیَهٗ مِمَّا خَلَقۡنَاۤ اَنۡعَامًا وَّ اَنَاسِیَّ کَثِیۡرًا
আর তিনিই তাঁর রহমতের বৃষ্টিবর্ষণের আগে সুসংবাদবাহীরূপে বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমরা আকাশ থেকে পবিত্ৰ পানি বর্ষণ করি। যাতে তা দ্বারা আমরা মৃত ভূ-খণ্ডকে জীবিত করি এবং আমরা যা সৃষ্টি করেছি; তার মধ্য থেকে বহু জীবজন্তু ও মানুষকে তা পান করাই।’
আয়াতে বলা হয়েছে যে, এমন পানি বর্ষণ করি যা নিজেও পবিত্র এবং অপরকেও তা দ্বারা পবিত্র করা যায়। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি বলেন, المَاءُ طَهُورٌ لاَ يُنَجِّسُه شَيء পানি পবিত্র; কোনো জিনিস তাকে অপবিত্র করে না। (আবু দাউদ, তিরমিজি, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ) তবে হ্যাঁ পানির রঙ, গন্ধ বা স্বাদ পাল্টে গেলে তা অপবিত্র।
আর আকাশ থেকে অবতীর্ণ এ পানি দ্বারা আল্লাহ তাআলা মাটিকে সিক্ত করেন এবং জীবজন্তু এবং অনেক মানুষেরও তৃষ্ণ নিবারণ করেন। আর তিনিই তাঁর রহমতের বৃষ্টিবর্ষণের আগে সুসংবাদবাহীরূপে বায়ু প্রেরণ করেন এবং আমরা আকাশ থেকে পবিত্ৰ পানি বর্ষণ করি।
৪. وَ لَئِنۡ سَاَلۡتَهُمۡ مَّنۡ نَّزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَحۡیَا بِهِ الۡاَرۡضَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَوۡتِهَا لَیَقُوۡلُنَّ اللّٰهُ ؕ قُلِ الۡحَمۡدُ لِلّٰهِ ؕ بَلۡ اَکۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ
‘আর তুমি যদি তাদেরকে প্রশ্ন কর, ‘কে আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দ্বারা জমিনকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন? তবে তারা অবশ্যই বলবে- ‘আল্লাহ’। (হে রাসুল! আপনি) বলুন, ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য’। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বুঝে না।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৬৩)
এখানে ‘সব প্ৰশংসা আল্লাহর জন্য’ শব্দগুলো থেকে দুইটি অর্থ প্রকাশিত হচ্ছে। একটি হচ্ছে- এসব যখন আল্লাহরই কাজ তখন একমাত্র তিনিই প্ৰশংসার অধিকারী। তবে অন্যেরা প্রশংসা লাভের অধিকার অর্জন করল কোথায় থেকে? আর দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে- আল্লাহর শোকর! তোমরা নিজেরাও একথা স্বীকার করে নিয়েছ। (ফাতহুল কাদির)
কারণ অবিশ্বাসীরাও আল্লাহ তাআলাকে স্রষ্টা ও প্রতিপালক স্বীকার করার পরেও তারা মূর্তিদেরকে প্রয়োজন পূরণকারী এবং ইবাদতের যোগ্য মনে করত। (আহসানুল বয়ান)
৫. اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰهَ اَنۡزَلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَسَلَکَهٗ یَنَابِیۡعَ فِی الۡاَرۡضِ ثُمَّ یُخۡرِجُ بِهٖ زَرۡعًا مُّخۡتَلِفًا اَلۡوَانُهٗ ثُمَّ یَهِیۡجُ فَتَرٰىهُ مُصۡفَرًّا ثُمَّ یَجۡعَلُهٗ حُطَامًا ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَذِکۡرٰی لِاُولِی الۡاَلۡبَابِ
আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, অতঃপর ভূমিতে ঝরনারূপে প্রবাহিত করেন আর তা দিয়ে বিবিধ বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন। অতঃপর তা শুকিয়ে যায় এবং তোমরা তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও। অবশেষে তিনি তা টুকরা-টুকরা খড়-কুটায় পরিণত করে দেন। এতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশ রয়েছে।’ (সুরা যুমার : আয়াত ২১)
> আকাশ থেকে বৃষ্টিরূপে পানি বর্ষণ হওয়ার পর তা আল্লাহর কুদরতে শোষিত হয়ে ভূগর্ভে নেমে গিয়ে ঝরনায় পরিণত হয়। অথবা পুকুর-নদী-নালাসমূহে মানুষের কল্যাণে সংরক্ষিত হয়।
> সেই একই পানি দ্বারা আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন প্রকার ফল-ফসল উৎপন্ন করেন, যার রঙ, স্বাদ, গন্ধ একটি থেকে অপরটি আলাদা।
> আল্লাহর দেওয়া বৃষ্টিতে সিক্ত হয়ে ফল-ফসল সবুজ ও তরতাজা হওয়ার পর সেই ফসল আবার শুকিয়ে হলুদবর্ণ হয়ে যায় অতঃপর তা টুকরো টুকরো হয়ে (শস্য ও খড়কুটা বা ভুসি আলাদা আলাদা হয়ে যায়) যেমন গাছের ডাল শুকিয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়।
> বৃষ্টিবর্ষণ, ঝরনায় পরিণত ও সংরক্ষিত হওয়ার তা থেকে ফল-ফসল হওয়া; এ সবই বুদ্ধিমান জ্ঞানী ব্যক্তিগনের জন্য নিদর্শন। তারা এর মাধ্যমে বুঝতে পারেন যে, পৃথিবীর উদাহরণও অনুরূপ। পৃথিবী অতি অল্প সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। পৃথিবীর চাকচিক্য ও সতেজতা, তার শ্যামলতা ও সৌন্দর্য এবং তার আমোদ-প্রমোদ ও আরাম-আয়েশ ক্ষণিকের জন্য।
সুতরাং দুনিয়ার এ সব বস্তুকে মন-প্রাণ দিয়ে মানুষের ভালোবাসা উচিত নয়। বরং সেই মৃত্যুর প্রস্তুতিতে ব্যস্ত থাকা দরকার, যার পরের জীবন হল চিরস্থায়ী জীবন, যার কোন শেষ নেই।
ঈমানদারের জন্য উপমা
আবার কেউ কেউ বলেন, এ বৃষ্টিবর্ষণের দৃষ্টান্ত হল কুরআন ও ঈমানদার ব্যক্তির হৃদয়ের উদাহরণ। উদ্দেশ্য হল যে-
‘আল্লাহ তাআলা আকাশ থেকে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন; যা তিনি মুমিনদের হৃদয়ে নাজিল করেন। অতঃপর তার দ্বারা দ্বীন উদগত হয়। আর তার ফলে মানুষ এক অপরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয়। সুতরাং মুমিনগণের ঈমান ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। আর যাদের মনে রোগ আছে তারা শুকিয়ে যাওয়া ফসলের মত শুকিয়ে যায়।’ (ফাতহুল ক্বাদীর)
৬. وَ اَرۡسَلۡنَا الرِّیٰحَ لَوَاقِحَ فَاَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً فَاَسۡقَیۡنٰکُمُوۡهُ ۚ وَ مَاۤ اَنۡتُمۡ لَهٗ بِخٰزِنِیۡنَ
‘আর আমি বায়ুকে উর্বরকারীরূপে প্রেরণ করি অতঃপর আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি এবং তা তোমাদের পান করাই। তবে তোমরা তার সংরক্ষণকারী নও।’ (সুরা হিজর : আয়াত ২২)
এ আয়াতে বায়ুকে উর্বরকারী এই জন্য বলা হয়েছে, যেহেতু বায়ু বৃষ্টি ভর্তি মেঘমালাকে বহন করে। যেমন গাভীন উটনীকে বলা হয়, যে তার পেটে বাচ্চা বহন করে।
আল্লাহ আরও বলেন, আর এই বৃষ্টি যা আমি বর্ষণ করি, তাকে তোমরা জমা করে রাখতে সক্ষম নও। এটি আমারই কুদরত ও অনুগ্রহ যে আমি তাকে ঝর্ণা, কূপ ও নদী-নালার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে থাকি। তাছাড়া আমি চাইলে পানিকে এত নীচে পৌছে দিতে পারি যে, ঝর্ণা ও কূপ হতে পানি সংগ্রহ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। যেমন কখনও কখনও কোন কোন এলাকায় মহান আল্লাহ তাঁর কুদরতের কিছু কিছু নমুনা তিনি দেখিয়েও থাকেন। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন।)
এর ব্যাখ্যা এভাবেও করা যেতে পারে যে, তিনি সমুদ্রে বাষ্প সৃষ্টি করেন। বাষ্পে বৃষ্টির উপকরণ বায়ু সৃষ্টি হয় এবং তা উপরে বায়ু প্রবাহিত করে একে পাহাড়সম মেঘমালার পানিভর্তি জাহাজে পরিণত করে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এসব পানি পৃথিবীর সর্বত্র যেখানে দরকার পৌছে দিয়ে থাকেন।
এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সেখানে যতটুকু পানি দেয়ার আদেশ হয়েছে আল্লাহর ফিরিশতারা এই উড়ন্ত মেঘমালা থেকে সেখানে সে পরিমাণ পানি বর্ষণ করছে। আল্লাহ্ তাআলা অন্যত্র বলেন-
‘তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা থেকে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাক। তিনি তোমাদের জন্য তা দ্বারা জন্মান শস্য, যায়তূন, খেজুর গাছ, দ্রাক্ষা এবং সব রকমের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১০-১১)
‘আমি ইচ্ছে করলে ওটা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৭০)
৭. وَ اَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءًۢ بِقَدَرٍ فَاَسۡکَنّٰهُ فِی الۡاَرۡضِ وَ اِنَّا عَلٰی ذَهَابٍۭ بِهٖ لَقٰدِرُوۡنَ
‘আর আমি আকাশ থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেছি। অতঃপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করেছি। আর অবশ্যই আমি সেটাকে অপসারণ করতেও সক্ষম।’
এই আয়াতে বৃষ্টি বর্ষণের ৩টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। তাহলো-
> আকাশ থেকে বৃষ্বটি র্ষণের সঙ্গে ‘بقدر বা পরিমিত পরিমান’ কথাটি উল্লেখ করার কারণ হলো পানি প্রয়োজনের অতিরিক্ত বৰ্ষিত হলে বণ্যা-প্লাবন হয়ে যায়। আর মানুষ তাতে জীবন-জীবিকার জন্য বিপদে পড়ে যায়। তাই আকাশ থেকে বৃষ্টিবর্ষণও পরিমিতভাবে হয়। যা মানুষের অভাব দূর করে দেয় এবং সর্বনাশের কারণ হয় না। তবে যেসব ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা কোনো কারণে প্লাবন-তুফান চাপিয়ে দেয়ার ইচ্ছা করেন, সেটা ভিন্ন।’ (ইবনে কাসির, ফাতহুল কাদির)
তাফসিরে আহসানুল বায়ানে পরিমিত পরিমাণ বৃষ্টিবর্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘বৃষ্টির পরিমাণ যেন এত বেশী না হয়; যাতে বন্যা সৃষ্টি হয়ে ধ্বংসলীলা ঘটে যায় আর না এত অল্প হয়; যাতে ফসল উৎপন্ন ও অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য যথেষ্ট না হয়।’
> আল্লাহ তাআলার নাজিলকৃত পানি সংরক্ষণেও রয়েছে মানুষের কল্যাণে তার সুন্দর কলা-কৌশল। কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা তা তুলে ধরেছেন এভাবে-
قُلۡ اَرَءَیۡتُمۡ اِنۡ اَصۡبَحَ مَآؤُکُمۡ غَوۡرًا فَمَنۡ یَّاۡتِیۡکُمۡ بِمَآءٍ مَّعِیۡنٍ
(হে রাসুল! আপনি) বলুন, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি তোমাদের (জন্য বৃষ্টিবর্ষিত) পানি ভূগর্ভে চলে যায়, তাহলে কে তোমাদেরকে বহমান পানি এনে দেবে?'
এটা মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি মানুষের অবাধ্যতা সত্ত্বেও পানিকে ভূগর্ভের অতলে তলিয়ে দিয়ে পানি থেকে বঞ্চিত করেননি।
اَوۡ یُصۡبِحَ مَآؤُهَا غَوۡرًا فَلَنۡ تَسۡتَطِیۡعَ لَهٗ طَلَبًا
‘কিংবা তার পানি মাটির গভীরে চলে যাবে, ফলে তা তুমি কোনভাবেই খুঁজে পাবে না।’
যে আল্লাহর হুকুমে তুমি এসব কিছু লাভ করেছে তাঁরই হুকুমে এসব কিছু তোমার কাছ থেকে ছিনিয়েও নেওয়া যেতে পারে। তুমি যদি এখন প্রচুর পানি পাওয়ার কারণে ক্ষেত-খামার করার সুবিধা লাভ করে আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে কাফের হয়ে যাও, তবে মনে রেখো তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের এ পানি পুনরায় ভূগর্ভে প্রোথিত করে দিতে পারেন। তারপর তুমি কোনোভাবেই তা আনতে সক্ষম হবে না। (ইবন কাসির)
সুতরাং আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য বৃষ্টির পানির এ ব্যবস্থাও করেছে যে, তিন পানি বর্ষণের পর যাতে বয়ে গিয়ে শেষ হয়ে না যায়; সে জন্য তিনি তা ঝরনা, নদী-নালা, খাল-বিল, হ্রদ, পুকুর ও কূপের সাহায্যে সংরক্ষণ করে থাকেন। আর ভুগর্ভে র এসব পানির উৎস আকাশ থেকে নাজিল হওয়া পানিই। যাতে প্রয়োজনের সময় আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ থাকলে বা অল্প বৃষ্টি হলে ভুগর্ভে সংরক্ষিত পানি দিয়ে প্রয়োজন মিটানো যায়। আর এটি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য মহা অনুগ্রহ।
> আমি যেমনিভাবে পানি বর্ষন ও সংরক্ষণে নিজ অনুগ্রহ ও দয়ায় এ সুন্দর ব্যবস্থা করে রেখেছি, তেমনি আমি পানিকে এমন গভীর জায়গায় নিয়ে যেতেও সক্ষম যে, সেখান হতে তা বের করে আনা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’ (তাফসিরে আহসানুল বয়ান)
মনে রাখতে হবে
বৃষ্টি মহান আল্লাহর বিরাট নেয়ামত। যদি কখনো তা মানুষের কোনো ক্ষতি কারণ হয়ে দাঁড়ায়; তাহলে বুঝতে হবে- এটা মানুষের গোনাহের ফল। কারণ আল্লাহ এ দুনিয়াতে মানুষের জন্য দয়াময়। যারা তাঁকে স্বীকার করেন তাদের জন্য যেমন তিনি রিজিক দেন, দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ দান করেন। ঠিক তেমনি যারা তাঁকে অস্বীকার করে, তাঁর অবাধ্য হয় তাদেরকেও তিনি এ সব নেয়ামত দান করেন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর কাছে বৃষ্টির নেয়ামত পেতে প্রিয় নবি ছোট্ট এই হাদিসের ওপর আমল করা জরুরি। তাহলো-
বৃষ্টি বর্ষণের বিষয়ে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার বান্দারা যদি আমার বিধান যথাযথ মেনে চলত, তবে আমি তাদের রাতের বেলায় বৃষ্টি দিতাম আর সকাল বেলায় সূর্য (আলো) দিতাম এবং কখনও তাদের বজ্রপাতের আওয়াজ শুনাতাম না।’ (মুসনাদে আহমদ)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বৃষ্টির যাবতীয় কল্যাণ ও উপকারিতা লাভে কুরআনের নির্দেশনার প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি কুরআনের বিধান মেনে চলার এবং হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম