সময় কাটুক ভালো কাজে
আমাদের সন্তানরা বিভিন্ন মন্দ কাজে নিজেকে এমনভাবে জড়িয়ে ফেলছে যে, নিজেই নিজেকে ধ্বংস করছে। মন্দ যত কাজ আছে; সেসবে সময় অতিবাহিত করে সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চান তার বান্দারা যেন ভালো কাজে সময় অতিবাহিত করে। যত প্রকার পাপ আছে, তা যেন এড়িয়ে চলে। আর পুণ্যকর্ম করার ক্ষেত্রে একে অপরের চেয়ে অগ্রগামী থাকে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘এবং প্রত্যেকেরই একটি লক্ষ্য রয়েছে, যার প্রতি সে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখে। অতএব তোমরা পুণ্যকর্মে পরষ্পর প্রতিযোগিতা কর। তোমরা যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমাদের সবাইকে একত্র করে নিয়ে আসবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ (সুরা আল বাকারা, আয়াত : ১৪৮)
মানুষের উচিত, প্রথমেই তার নিজের জীবনের জন্য নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল নির্ধারণ করা। এরপর তার কর্তব্য হবে, তার সমস্ত মনোযোগ সেই দিকে নিবদ্ধ করা। যদি সে পুণ্য নিয়ত নিয়ে কোনো কাজের প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে, তাহলে সে অবশ্যই সফলকাম হবে। আর এজন্যই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা পুণ্যকর্মে পরষ্পর প্রতিযোগিতা কর।’
এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন একটি নির্দেশ দিয়েছেন, যা মানুষের সব ধরনের উন্নতির জন্য আবশ্যক। অর্থাৎ এমন প্রত্যেক অগ্রগতি, যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সহায়ক হয় এবং মুসলমান দাবিকারকদের সত্যিকার মুসলমান বানিয়ে দেয়। আর সে নির্দেশটি হলো, পুণ্যকর্মে অগ্রগামী হওয়া; যা একজন খাঁটি মুমিন, একজন প্রকৃত মুসলমানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হওয়া উচিত।
পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ বাস করে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেকের জীবনেরই একটি লক্ষ্য রয়েছে। আর তা অর্জনের জন্য সে চেষ্টাও করে। কেউ একটি উদ্দেশ্যের পেছনে ছুটছে তো আরেকজন অন্য কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এমনকি যারা পাপাচারে লিপ্ত, তাদেরও কোনো না কোনো লক্ষ্য থাকে। আর তা অর্জনের জন্য চেষ্টা করে। সেটি মন্দ ফলাফল সৃষ্টিকারী হোক বা অন্যের ক্ষতি সাধনের জন্যই হোক না কেন। কোনো একটি বিচ্ছিন্ন পুণ্যকর্ম আমাদের উদ্দেশ্য নয় বরং সব ধরনের পুণ্যকর্ম করা এবং সে ক্ষেত্রে অগ্রগামী হওয়া আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবেই না আমরা খাঁটি মুমিন বলে বিবেচিত হবে।
আমাদের প্রত্যেকের এটি চিন্তা করা আবশ্যক, আমরা কীভাবে সর্বাধিক মানুষের উপকার সাধন করতে পারি। আর অন্যের উপকার সাধনই প্রত্যেকের লক্ষ্যস্থল হওয়া আবশ্যক।
আমি ব্যক্তি জীবনে যে কাজই করি না কেন, আমাকে উত্তম আদর্শ এবং সততা প্রদর্শন করতে হবে। আমি কারো জন্য কিছু করতে না পারলেও অন্তত আমার লক্ষ্য এটাই থাকা চাই যে, আমার দ্বারা যেন কারো কোনো ক্ষতি না হয়। তাই আমাকে নিজের কর্মের সংশোধনের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। আর সত্য ও তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে হবে।
আমাদের সন্তানদের প্রতিও বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। তারা কোথায় যায়, কার সাথে মেশে, কী করে—সবই খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানরাও যেন ভালো কাজে সময় অতিবাহিত করে সেদিকেও পিতামাতাকে দৃষ্টি রাখতে হবে। আসলে পরিবারের অন্য সদস্য যখন ভালো কাজ করবে, ভালো বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে, তবেই না সন্তানরা এদিকে মনোযোগী হবে। তাই পরিবারকে শান্তিময় করতে হলে ভালো চিন্তা ও ভালো কাজের বিকল্প নেই।
আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রকৃত অর্থে পুণ্যকর্মের প্রতিযোগিতা করার এবং পুণ্যকর্মে নিজেদের জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন, আমিন।
এসইউ/এমএস