সব মানুষের তাওবাহ করার ধরন কি সমান?
মহান আল্লাহ তাআলা তখনই সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হন যখন কোনো বান্দা অন্যায় করার পর আবার তার দিকে ফিরে আসে। কারণ হাদিসে এসেছে-
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে না, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন।’
তবে ‘হ্যাঁ, সব মানুষ সমানভাবে গোনাহ করেন না। কিন্তু কোনো মানুষ যদি গোনাহ না করে, তবে সে কেন তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা করবে? এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন উম্মতের দরদি নবি মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
কেননা আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগের ও পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-
‘আল্লাহ আপনার অতিত ও ভবিষ্যৎ ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দেন এবং আপনার প্রতি তাঁর নেয়ামত পূর্ণ করেন ও আপনাকে সরলপথে পরিচালিত করেন।’ (সুরা ফাতাহ : আয়াত ২)
এ থেকেও বুঝা যায়যে, সবার তাওবাহ বা ক্ষমা প্রার্থনার ধরনও এক হবে না। তবে সবার তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনার ধরন এক রকম নয়; ব্যক্তিভেদে তাওবার অবস্থা ও ধরন পরিবর্তন হয়। আল্লামা আলুসি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাওবাকারীদের মর্যাদা ও অবস্থান অনুযায়ী তাওবার ধরন কেমন হবে তা সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন-
>> সাধারণ মুসলমানের তাওবা
১. অন্যায়ের জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া;
২. ভবিষ্যতে এমন অন্যায় না করার সংকল্প গ্রহণ করা;
৩. কারো প্রতি জুলুম অত্যাচার হয়ে থাকলে তার প্রতিকার তথা ক্ষতিপূরণ দেওয়া;
৪. ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব না হলে অন্তত ক্ষতিপূরণের নিয়ত বা সদিচ্ছা পোষণ করা।
>> বিশেষ ব্যক্তির তাওবা
১. যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা;
২. মন থেকে যাবতীয় কু-চিন্তা দূর করা;
৩. আমলের সব ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্জন করা।
>> মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির তাওবা
১. তাঁদের অবস্থার উন্নতির সাধনায় তাওবা করা;
২. তাঁদের শান ও মাকাম তথা মান-মর্যাদার উন্নয়নে তাওবার মাধ্যমে চেষ্টা করা।
কেননা পবিত্র কাবা শরিফ পুনরায় নির্মাণকালে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এবং পুত্র ইসমাইল আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে তাওবা করেছিলেন এভাবে-
‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে তাওবা করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের তাওবা কবুল করুন।’ যা ছিল মূলত তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধির দোয়া।
>> বিশ্বনবির তাওবার উদ্দেশ্য
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাওবা করা বা গোনাহ মাফ চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাহলে আপনি কেন প্রতিদিন এত বেশি তাওবা-ইসতেগফার করেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন-
‘আমি কি তাঁর (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হবো না?’ (বুখারি, মুসলিম)
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, শুধু গোনাহ করলেই তাওবা ও ইসতেগফার করতে হয় এমনটি নয় বরং আল্লাহর একান্ত কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার অন্যতম মাধ্যমও এ তাওবা-ইসতেগফার।
সুতরাং যারা গোনাহ পরিত্যাগ করে চলেন বা গোনাহের কাজে কম লিপ্ত হন, তাদের জন্য সহজ উত্তর হলো-
প্রথমত : তাওবা-ইসতেগফার আল্লাহর নির্দেশ এবং কল্যাণ লাভের উপায়।
দ্বিতীয়ত : তাওবা-ইসতেগফার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত একান্ত আমল।
তৃতীয়ত : তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার বিষয়টিও বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে।
সুতরাং ব্যক্তিভেদে সব সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে তাঁরই কাছে বেশি বেশি তাওবাহ করার বিকল্প নেই। এ তাওবা করার মাধ্যমেই রয়েছে মর্যাদা ও সম্মান বাড়ার একমাত্র উপায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অবস্থা ও অবস্থানভেদে সঠিকভাবে তাওবার করার এবং তাওবার মাধ্যমে মর্যাদা বৃদ্ধির তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম