নিরাপদ মাতৃত্ব ও গর্ভবতীর অধিকারে ইসলাম
মিষ্টি মুধুর শব্দ ‘মা’ ডাক শোনার পরিপূর্ণতা আসে মাতৃত্ব লাভের মাধ্যমে। মাতৃত্ব অর্জনই নারীকে জীবনের পরিপূর্ণতায় পৌঁছে দেয়। এর জন্য প্রয়োজন মাতৃত্বকালীন সময়ে নারীর যথাযথ আদর-যত্ন ও স্বাস্থ্য পরিচর্যার প্রতি লক্ষ্য রাখা। এ মাতৃত্ব অর্জনের পথে থাকা গর্ভবর্তী নারীকে নিজের স্বাস্থ্য সচেতনায় ইসলামি বিধি-নিষেধ এবং চিকিৎসকের যথাযথ পরামর্শ মেনে চলাও বাধ্যতামূলক। তবেই নিশ্চিত হবে নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ শিশুর জন্মদান প্রক্রিয়া।
মাতৃত্বকালীন সময়ে গর্ভবর্তী নারীর প্রতি অবহেলা চরম অন্যায় ও গোনাহের কাজ। কেননা সন্তানসম্ভবা নারীর আদর-যত্ন ও স্বাস্থ্য পরিচর্যায় অবহেলা করলে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। কুরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবার্তা ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ قَتَلُواْ أَوْلاَدَهُمْ سَفَهًا بِغَيْرِ عِلْمٍ وَحَرَّمُواْ مَا رَزَقَهُمُ اللّهُ افْتِرَاء عَلَى اللّهِ قَدْ ضَلُّواْ وَمَا كَانُواْ مُهْتَدِينَ
‘নিশ্চয়ই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা নিজ সন্তানদেরকে নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞতার কারণে কোনো প্রমাণ ছাড়াই হত্যা করেছে। আর আল্লাহ তাদেরকে যেসব রিজিক দিয়েছিলেন, সেগুলোকে আল্লাহর প্রতি ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে হারাম করে নিয়েছে। নিশ্চিতই তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং সুপথগামী হয়নি।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৪০)
মাতৃত্বকে নিরাপদ করার জন্য, শিশু সন্তানকে সুস্থ রাখার জন্য, সন্তানের সঙ্গে সুনিবিড় বন্ধন তৈরির জন্য মায়ের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি গর্ভধারণকারী স্ত্রী ও সন্তানের দায়িত্ব পালনেও বাবার প্রতি রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা। মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে পরস্পরের দায়িত্ব ঘোষণা করেছেন এভাবে-
﴿وَٱلۡوَٰلِدَٰتُ يُرۡضِعۡنَ أَوۡلَٰدَهُنَّ حَوۡلَيۡنِ كَامِلَيۡنِۖ لِمَنۡ أَرَادَ أَن يُتِمَّ ٱلرَّضَاعَةَۚ وَعَلَى ٱلۡمَوۡلُودِ لَهُۥ رِزۡقُهُنَّ وَكِسۡوَتُهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ لَا تُكَلَّفُ نَفۡسٌ إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَا تُضَآرَّ وَٰلِدَةُۢ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوۡلُودٞ لَّهُۥ بِوَلَدِهِۦۚ وَعَلَى ٱلۡوَارِثِ مِثۡلُ ذَٰلِكَۗ فَإِنۡ أَرَادَا فِصَالًا عَن تَرَاضٖ مِّنۡهُمَا وَتَشَاوُرٖ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡهِمَاۗ وَإِنۡ أَرَدتُّمۡ أَن تَسۡتَرۡضِعُوٓاْ أَوۡلَٰدَكُمۡ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡكُمۡ إِذَا سَلَّمۡتُم مَّآ ءَاتَيۡتُم بِٱلۡمَعۡرُوفِۗ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ٢٣٣﴾ [البقرة: ٢٣٣]
‘আর (মাতৃত্ব লাভকারী সন্তান জন্মদানকারী) মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুই বছর (নিজেদের বুকের) দুধ পান করাবে, (এটা) তার (ওই নারীর) জন্য যে দুধ পান করাবার সময় পূর্ণ করতে চায়। আর পিতার উপর কর্তব্য, বিধি মোতাবেক মায়েদেরকে (যথাযথ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে) খাবার ও পোশাক প্রদান করা। সাধ্যের অতিরিক্ত কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব প্রদান করা হয় না। (তবে) কষ্ট দেওয়া যাবে না কোনো মাকে তার সন্তানের জন্য আবার কোনো বাবাকে তার সন্তানের জন্য। আর ওয়ারিশের ওপর রয়েছে অনুরূপ দায়িত্ব। অতঃপর তারা যদি পরস্পর সম্মতি ও পরামর্শের মাধ্যমে দুধ ছাড়াতে চায়, তাহলে তাদের কোনো পাপ হবে না। আর যদি তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে অন্য কারো (কোনো নারী) থেকে দুধ পান করাতে চাও, তাহলেও তোমাদের ওপর কোনো পাপ নেই, যদি তোমরা বিধি মোতাবেক তাদেরকে যা (পারিশ্রমিক/বিনিময়) দেবার তা দিয়ে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক দ্রষ্টা। আর সন্তানের পিতার দায়িত্ব হলো মাতার খাওয়া-পরার উত্তম ব্যবস্থা করা।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৩)
মাতৃত্বকে নিরাপদ ও সন্তান ভূমিষ্টের পর তাদের আদর-যত্ন, খাওয়া-পরা থেকে শুরু করে পরস্পরের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণে ইসলাম কত সুন্দর দিকনির্দেশনাই না প্রদান করেছে। এ দায়িত্ব যথাযথ পালন করার মাধ্যমেই সুন্দর নয়নজুড়ানো পারস্পরি আত্মার বন্ধন তৈরি হয়।
আল্লাহর জমিনে তার বিধান ও জীবন ব্যবস্থা অটুট রাখতেই মাতৃত্বের পদ্ধতি সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীর কোনো মানুষই নারীর গর্ভ ধারণের বাইরে থেকে আসেনি। মহান আল্লাহর কুদরত যে, তিনি মানুষকে নারীর মাতৃত্বের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসার সুযোগ করে দিয়েছেন। মানবজাতীর জন্য এটি এক বড় নেয়ামত।
নারীর মাতৃত্বের মাধ্যমেই পৃথিবীতে নারী-পুরুষের আগমন। নারী-পুরুষের মিলনের মাধ্যমেই বংশবিস্তার। পরস্পরের আত্মীয়-স্বজন হয়ে ওঠা। এ সবের বর্ণনা ও পরস্পরের করণীয় আল্লাহ তাআলা নিখুঁতভাবে কুরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ وَخَلَقَ مِنۡهَا زَوۡجَهَا وَبَثَّ مِنۡهُمَا ٗا كَثِيرٗا وَنِسَآءٗۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় কর। যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস (আদম) থেকে। আর তা (আদম) থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের (পারস্পরিক সুসম্পর্ক ও মিলন) থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চাও। আর ভয় কর (নারী-পুরুষের পাস্পরিক মিলনে সৃষ্ট) রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ওপর পর্যবেক্ষক।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১)
নারীর জন্য মাতৃত্ব যেমন কষ্টের। সন্তান ভূমিষ্টের সময়টি আরও বেশি কষ্টের। নারী জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সন্তান জন্ম দেয়। আবার নারীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে বাবার অংশীদারিত্বও কম নয়। এ কারণেই মহান আল্লাহ সন্তানের প্রতি তাদের ব্যাপারে উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন এভাবে-
وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ وَفِصَٰلُهُۥ فِي عَامَيۡنِ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ وَإِن جَٰهَدَاكَ عَلَىٰٓ أَن تُشۡرِكَ بِي مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٞ فَلَا تُطِعۡهُمَاۖ وَصَاحِبۡهُمَا فِي ٱلدُّنۡيَا مَعۡرُوفٗاۖ وَٱتَّبِعۡ سَبِيلَ مَنۡ أَنَابَ إِلَيَّۚ ثُمَّ إِلَيَّ مَرۡجِعُكُمۡ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ
‘আর আমরা মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই। আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে বসবাস করবে সদ্ভাবে। আর অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে।’ (সুরা লোকমান : আয়াত ১৪-১৫)
মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণকারী ও দায়িত্ব পালনকারী বাবার প্রতি সদাচরণ ও দোয়া করার নির্দেশ দিয়ে কুরআনুল কারিমে এরকম অনেক আয়াত নাজিল করেছেন আল্লাহ। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন-
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا - وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর না এবং পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদের সঙ্গে ‘উফ’ শব্দটিও বল না এবং তাদেরকে ধমকও দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল-
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
‘হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর, যেভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩-২৪)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মাতৃত্বের মর্যাদার কথাই বর্ণনা করেছেন। সন্তানকে সতর্ক করেছেন মাতৃত্বগ্রহণ করে তাকে জন্ম দেয়া মা এবং দায়িত্ব পালনকারী বাবার প্রতি যথাযথ মর্যাদা দেয়ার প্রতি।
নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নারীর প্রতি দায়িত্ব পালন
নিরাপদ মাতৃত্ব নারীর অধিকার। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া এবং দুই বছর দুধ পান করানো পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময় নারীর প্রতি যত্ন নেওয়া পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। এ সময় নারীকে দিতে সুষম খাদ্য। দিতে হবে উন্নত চিকিৎসা। দিতে হবে যথাযথ বিশ্রামের সুযোগ। আবার সন্তান ভূমিষ্টের সময় যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ এবং সন্তান ভূমিষ্টের পর দুই বছর দুধ পান করানোর সময়টিতেও দিতে হবে চাহিদা মতো পুষ্টির যোগান। এসব চাহিদা পূরণ করতে কুরআন-সুন্নায় যথাযথ দিকনির্দেশনা রয়েছে। তাহলো-
১. প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্যের যোগান
মাতৃত্বের প্রয়োজনে প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য প্রদানে যত্নবান হওয়া। এদিকে পরিবারের প্রধান বা স্বামীর দৃষ্টি রাখা অবশ্য কর্তব্য। সন্তান গর্ভে এলে গর্ভবতী মাকে পুষ্টিকর এবং পরিমাণে বেশি খাবার দেওয়া প্রয়োজন। কেননা, তার খাবারে একটি নয়, দুটি প্রাণ বাঁচে। মহান আল্লাহ হালাল রিজিক খাওয়া ও কৃতজ্ঞতা জানাতে এভাবে নির্দেশ দিয়েছেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِلَّهِ إِن كُنتُمۡ إِيَّاهُ تَعۡبُدُونَ
‘হে মু’মিনগণ! আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিজিক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদাত কর।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭২)
২, চিকিৎসার নির্দেশ
মাতৃত্বকালীন সময়ে নারীর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সবার আগে তার স্বামীর সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য গর্ভধারণকারী নারীর প্রতি সবার দায়িত্ব রয়েছে। প্রয়োজনে তাদের দিতে সুচিকিৎসা। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশ এসেছে-
> تَدَاوَوْا فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ دَوَاءً، غَيْرَ دَاءٍ وَاحِدٍ الْهَرَمُ
‘তোমরা চিকিৎসা করাও, কারণ আল্লাহ তাআলা যে রোগই দিয়েছেন তার প্রতিষেধকও দিয়েছেন। শুধু একটি রোগ ব্যতিত আর তা হচ্ছে, বার্ধক্য।’ (আবু দাউদ)
> إِنَّ اللَّهَ أَنْزَلَ الدَّاءَ وَالدَّوَاءَ، وَجَعَلَ لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءً فَتَدَاوَوْا وَلَا تَدَاوَوْا بِحَرَامٍ
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ রোগ এবং দাওয়া (ওষুধ) দু’টিই দিয়েছেন এবং প্রতিটি রোগেরই ওষুধ রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর। তবে হারাম বস্তু দিয়ে চিকিৎসা কর না।’ (আবু দাউদ)
> لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ، فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءُ الدَّاءِ بَرَأَ بِإِذْنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ
‘প্রত্যেক রোগেরই ওষুধ রয়েছে। যখন কোনো রোগের ওষুধ প্রয়োগ হয়, আল্লাহ তাআলার অনুমতিতে তা ভালো হয়ে যায়।’ (মুসলিম)
সুতরাং মাতৃত্বকালীন সময় থেকে শুরু করে সন্তান ভূমিষ্ট ও তাদের দুগ্ধপানকালীন সময়েও নারীদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের চিকিৎসার প্রতি যত্নবান হওয়া স্বামী, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের একান্ত দায়িত্ব।
৩. স্বামীর দায়িত্ব পালন
স্ত্রীর ভরণ-পোষণের মূল দায়িত্ব স্বামীর। হাদিসে পাকে স্ত্রীর যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা এসেছে হাদিসে। আর স্ত্রী যদি সন্তানসম্ভবা হয় তবে স্বামীর প্রতি এ দায়িত্ব পালন দ্বিগুণ হয়ে যায়। হাদিসে এসেছে-
হজরত মুয়াবিয়অ কুরাইশি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-
أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَقُلْتُ: مَا تَقُولُ: فِي نِسَائِنَا قَالَ: «أَطْعِمُوهُنَّ مِمَّا تَأْكُلُونَ، وَاكْسُوهُنَّ مِمَّا تَكْتَسُونَ، وَلَا تَضْرِبُوهُنَّ، وَلَا تُقَبِّحُوهُنَّ
‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এলাম। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাদের স্ত্রীদের (হক) বিষয়ে আপনি কী বলেন? তিনি বললেন, তোমরা (স্বামীরা) যা খাবে, তাদের (নারীদের) তাই খেতে দেবে। তাদের তাই পরাবে যা তোমরা পরবে। আর তাদের প্রহার করবে না এবং তাদের কটূ-কাটব্য করবে না।’ (আবু দাউদ)
মনে রাখতে হবে
নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস এলেই গর্ভবর্তী নারীর প্রতি দায়িত্ব পালনের তাগিদ আসবে; দিবস চলে গেলেই যেন এ দায়িত্ব পালন ও সচেতনতা বন্ধ হয়ে না যায়। এমনটি যেন না হয়; সে কারণেই ইসলাম মাতৃত্ব ও গর্ভবর্তী নারীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়। আর ইসলামের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা থেকেও তা প্রমাণিত।
পরিশেষে...
প্রসূতির নিরাপদ মাতৃত্ব লাভের অধিকার ও মাতৃস্বাস্থ্য পরিচর্যার গুরুত্ব অপরিসীম। মাতৃত্ব অর্জন সব নারীকেই ধর্মীয় বিধি-নিষেধ এবং অনেক সতর্ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। অন্যথায় মা ও শিশু উভয়েরই জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। তাই যিনি মা হবেন, তার অবশ্যই স্বাস্থ্য উন্নয়ন, সচেতনতা বাড়ানো ও যথেষ্ট পরিচর্যা করাই ইসলামের একান্ত দাবি।
কেননা একজন সুস্থ মা-ই পারবে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে। সুস্থ শিশুর জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ মাতৃত্ব। গর্ভবতী নারীকে দিতে হবে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম, যত্ন ও সেবা। নারী নিরাপদ মাতৃত্ব ও গর্ভকালীন সেবা সবার সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব।
এমএমএস/এমএস