নতুন জামা-কাপড় না ধুয়ে নামাজ পড়া যাবে কি?
বাজার থেকে কেনা নতুন জামা-কাপড় ধোয়া ছাড়া পরে অনেকেই বিভিন্ন ইবাদত কিংবা অনুষ্ঠানে যায়। এসব নতুন কাপড় না ধুয়ে নামাজ পরলে কি নামাজ বিশুদ্ধ হবে? নতুন কেনা এসব কাপড় পরে ইবাদত করা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?
নতুন জামা-কাপড় পড়ায় রয়েছে ইসলামি রীতি। তা পরার সুন্নাত রীতি হলো দোয়া পড়া। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শিক্ষা দিয়েছেন। নতুন জামা কাপড় পড়ার আগে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া পড়তেন এবং উম্মতকে পড়তে বলেছেন-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ، أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهِ وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَهُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকালহামদু আনতা কাসাওতানিহি। আসআলুকা মিন খাইরিহি ওয়া খইরি মা সুনিআ লাহু। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনিআ লাহু।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! সব প্রশংসা আপনারই জন্য। আপনিই আমাকে এ পোশাক পরিয়েছেন। আমি আপনার কাছে এর কল্যাণ ও এটি যে উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করি। আর আমি এর ক্ষয়-ক্ষতি এবং এটি যে জন্য তৈরি করা হয়েছে তার ক্ষয়-ক্ষতি থেকেও আপনার কাছে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, সহিহুল জামে)
প্রশ্ন হলো- নতুন জামা-কাপড় কেনার পর তা পরে নামাজ পড়া যাবে কিনা?
এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়-
‘হ্যাঁ’, শর্ত সাপেক্ষে নতুন জামা-কাপড় পড়ে নামাজ পড়া যাবে। যদি নতুন জামা-কাপড়ে বাহ্যিকভাবে কোনো নাপাকি লেগে না থাকে আর তা দেখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা যায়। তবে ইসলামের শরয়ী দৃষ্টিতে ওই জামা-কাপড় পবিত্র বলেই গণ্য হবে।
এ দৃষ্টিকোন থেকে নতুন কেনা জামা-কাপড় পরে নামাজ পড়া যাবে; তা ধোয়া জরুরি নয়। কেননা ইলমে ফিকহের একটি প্রসিদ্ধ মূলনীতি হলো-
الأصل في الأشياء الطهارة
‘বস্তুর মূল হলো- পবিত্র হওয়া।’
তাই নাপাকি লেগে আছে বা নাপাকি লেগেছে এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোনো নতুন জামা-কাপড় নাপাক এমনটি বলা যাবে না।
পক্ষান্তরে…
যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, নতুন কাপড়ে এমন কোনো নাপাকি লেগে আছে; যা দেখা যায়। অথবা ওই নতুন জামা-কাপড়ে নাপাকি লেগে আছে এমনটি বাহ্যিকভাবে দেখা যায়; তবে তা পরে নামাজ পড়ার আগে ধুয়ে নেয়া জরুরি। নাপাকি লেগে থাকা কাপড় পরে নামাজ পরলে ওই নামাজ বিশুদ্ধ হবে না। কেননা নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কাপড় পাক-পবিত্র হওয়া আবশ্যক।
স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় নতুন জামা-কাপড় পড়ার নিয়ম
নতুন যে কোনো জামা-কাপড় ধুয়ে নেওয়া উত্তম। স্বাস্থগত দিক বিবেচনায় নতুন জামা-কাপড় ধুয়ে পরার মধ্যে রয়েছে অনেক উপকারিতা। তাই স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে বাজার থেকে কেনা নতুন জামা-কাপড় ধোয়া ছাড়া পরা ঠিক নয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। চকচকে হলেও নতুন পোশাক না ধুয়ে পরা উচিত নয়। কেননা এতে নানাবিধ ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে বলেও জানান চিকিৎসকরা। নতুন কাপড় না ধুয়ে পরার ক্ষতিকর দিকগুলো হলো-
১. ত্বকে র্যাশ দেখা দেওয়া
শপিং মল কিংবা দোকানে অনেক জামা-কাপড় প্রদর্শনীতে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়। এসব কাপড়ে যাতে ছত্রাক বা অন্য কোনো ক্ষতিকর আক্রমণ না ঘটে সেজন্য অনেক সময় ‘ফরমালডিহাইড’-এর মতো রাসায়নিক দেওয়া হয়। ওই জামা-কাপড় পরলে স্পর্শকাতর ত্বকে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
২. চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়া
সুন্দর ও নতুন জামা-কাপড় কিংবা যে কোনো পোশাক কিনে আনার আগে এটি অন্য অনেক মানুষের ছোঁয়া লাগতে পারে। আর ওই সব মানুষ কিংবা কাপড় বিক্রেতা যদি কোনো ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত থাকে; তবে এ পোশাক না ধুয়ে পরার ফলে এ ব্যক্তিও চর্মরোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই রোগের জীবাণু বা ক্ষতিকর বিষয় থেকে মুক্ত থাকতে নতুন জামা-কাপড় পরার আগে ধুয়ে নেওয়া জরুরি।
৩. পোশাকে রাসায়নিকের ব্যবহার
অনেক সময় পোশাককে আকর্ষণীয় ও নিখুঁত উপস্থাপনার জন্য বিভিন্ন রাসায়নিক ও উজ্জ্বল রংয়ের ব্যবহার করা হয়। এসব উপাদানে থাকতে পারে ক্যান্সারসহ অনেক জটিল রোগের ক্ষতিকর উপাদান। যা ত্বক থেকে শুরু করে অনেক রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি ত্বকের মারাত্মক ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
৪. ট্রায়ালে ক্ষতিকর জীবাণুর বিস্তার
আধুনিক সব পোশাকের দোকানে পোশাক পরে দেখার জন্য রয়েছে ট্রায়াল রুম। এসব দোকানে নতুন জামা-কাপড় পরে দেখার সুযোগ রয়েছে। এ উপায়ে একই নতুন পোশাক একাধিক ব্যক্তি পরে থাকে। যার ফলে ক্ষতির জীবাণু, উকুন, ছারপোকাসহ নানাবিধ সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। তাই নতুন পোশাক না পরে ব্যবহার করা উচিত নয়।
তাছাড়া পোশাক ট্রায়ালের ক্ষেত্রে অনেক ক্রেতা ঘামে ভেজা শরীরেও পোশাক পরে থাকেন। আর এ ঘাম থেকে সৃষ্ট রোগ-জীবাণুও নতুন কাপড় পরার ফলে অন্যের শরীরে সংক্রমণ হতে পারে।
তাই নতুন যে কোনো পোশাক পরার আগে অবশ্যই তা ধুয়ে পরিচ্ছন্ন করে ক্ষতিকর কিংবা অপবিত্র কোনো নাপাকি নেই নিশ্চিত হয়েই পরা জরুরি। আর তাতে ইবাদত-বন্দেগি তথা নামাজ যেমন হবে ত্রুটিমুক্ত আবার শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে এ নতুন জামা-কাপড় ব্যবহারকারী।
সুতরাং নতুন পোশাকে স্পষ্ট নাপাকি পরিলক্ষিত না হলে বা তাতে নাপাকি লেগেছে তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলে ধোয়া জরুরি নয়। তবে তা বাহ্যিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে 'পবিত্র' বলে ধরে নেয়া কিংবা নামাজ পড়া গেলেও স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় বাজারের নতুন জামা-কাপড় ভালভাবে ধুয়ে পরই নিরাপদ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নতুন জামা-কাপড় পরার ক্ষেত্রে স্বাস্থগত দিক ও সুন্নাতের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস