মানুষ কেন ভোগান্তিতে পড়ে?
আমাদের এত ভোগান্তি কেন? এর পেছনে মূল কারণ কী? কখনো কি আমরা তা ভেবে দেখেছি? না, সেভাবে ভেবে দেখিনি। মানুষের ভোগান্তির পেছনে যেসব কারণ জড়িত, সে কারণ সম্পর্কে সতর্ক করে গেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিভিন্নভাবে মানুষকে পরীক্ষা করবেন, যারা এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন তারা দুনিয়ার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। আর যারা আল্লাহর পরীক্ষায় হেরে যাবেন তারাই ভোগান্তির শিকার হবেন।
অল্প কিছু মানুষ ভোগান্তির এ কারণগুলো জানলেও অধিকাংশ মানুষেরই তা অজানা। হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা সুস্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে বললেন- হে মুহাজিরগণ! পাঁচটি জিনিসের মাধ্যমে তোমরা পরীক্ষিত হবে এবং আমি আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যাতে তোমাদের ঐ পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি না হও। তাহলো-
> অশ্লীলতায় লজ্জিত না হওয়া
কোনো জাতির মধ্যে যখন অশ্লীলতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, মানুষ প্রকাশ্যে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলেও লজ্জাবোধ করবে না; তখন তাদের মধ্যে (এমনসব) মহামারি ও রোগ-বালাই এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্বপূরুষদের মধ্যে কখনও দেখা যায়নি।
> ওজনে কম দেয়া
যখন তারা ওজন ও পরিমাপে প্রতারণা শুরু করবে; তখন তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হবে দুর্ভিক্ষ, মারাত্মক বিপর্যয় এবং অত্যাচারী শাসকের শাসন।
> জাকাত দিতে অস্বীকার করা
যখন তারা নিজেদের ধন-সম্পদের জাকাত দিতে চাইবে না; তখন আকাশ থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি (দুনিয়াতে) প্রাণীকুল না থাকত তবে (চিরতরে) বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হতো।
> ওয়াদা ভঙ্গ করা
যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে করা তাদের ওয়াদা ভঙ্গ করবে; তখন আল্লাহ তাআলা তাদের উপর বাইরের শত্রু চাপিয়ে দেবেন আর তারা ঐ শত্রুদের কাছে তাদের অধিকার ও ক্ষমতা হারাবে।
> আল্লাহর বিধান অমান্য করা
তাদের নেতারা (দেশের দায়িত্বশীলরা) যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসন পরিচালনা না করবে এবং আল্লাহ তাআলা যা কিছু অবতীর্ণ করেছেন সেসব কিছুকে অগ্রাধিকার না দেবে, আল্লাহ তাআলা তাদের একে অপরের সঙ্গে লড়াই করতে বাধ্য করবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
হাদিসে ঘোষিত এ পাঁচটি কারণেই অধিকাংশ মানুষ ভোগান্তির শিকার হবেন। বর্তমান সময়ে হচ্ছেও তাই। কোথাও কেউ শান্তি কিংবা নিরাপদে নেই। মানসিক বিপর্যয় ও ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে।
মানুষের ভোগান্তির শিকার ও আজাবে পতিত হওয়া সম্পর্কে ভিন্ন একটি হাদিসে ভিন্ন একটি বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। বর্তমান সময়ে যার প্রাদুর্ভাবও সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আর এর কারণে অসংখ্য মানুষ ভোগান্তি ও যন্ত্রণার জীবন অতিবাহিত করছে। তাহলো-
হজরত আবু মালিক আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমার উম্মতের কিছু লোক মদকে (নেশা জাতীয় জিনিসকে) ভিন্ন ভিন্ন নাম দিয়ে তা পান করবে। (আসর সাজিয়ে) তাদের জন্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো হবে এবং মেয়েরা গান করবে। আল্লাহ তাআলা তাদের (নেশাগ্রস্ত ও বিনোদনকারী এসব ব্যক্তিকে) মাটিতে দাবিয়ে দেবেন এবং তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করবেন।’ (ইবনে মাজাহ)
সুতরাং মানুষের উচিত, ভোগান্তির শিকার হওয়া থেকে বেঁচে থাকতে হাদিসে ঘোষিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করা। হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যেমন ব্যক্তি, পরিবার, সামাজিক জীবন পরিচালনা করা জরুরি তেমনি রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রেও হাদিসের নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ভোগান্তি মুক্ত জীবনের দিকে ধাবিত হওয়া একান্ত কর্তব্য।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের যথাযথ ভূমিকা ও কর্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। ভোগান্তিমুক্ত জীবন গঠন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম