দোয়া কবুল ও মুক্তি!
দোয়া কবুল ও শিরশ্ছেদ থেকে মুক্তির চমৎকার ঘটনা। তরবারির নিচ থেকে দলবলসহ রক্ষা পেয়েছিলেন মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান ইবনে যিয়াদ ইবনে আলগাম। তার দোয়া কবুল ও মুক্তির ঘটনা মুসলিম উম্মাহর জন্য শিক্ষণীয়। কী সেই দোয়া ও ঘটনা?
আল্লাহকে যারা ভয় করে তাদের কোনো ভয় নেই; তাদের কোনো চিন্তা বা হতাশাও নেই। জ্ঞানীরাই আল্লাহকে বেশি ভয় করে। এ কারণেই সব যুগে সব সমাজেই জ্ঞানীর মর্যাদা সীমাহীন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়।’
কুরআনুল কারিমের এ ঘোষণায় জ্ঞানী ব্যক্তির দোয়া যেমন কবুল হয় তেমনি মর্যাদা এবং সম্মানের সঙ্গে বিপদ থেকেও মুক্তি পায়।
মুহাদ্দিস আব্দুর রহমান ইবনে যিয়াদ-এর দোয়া ও মুক্তি
যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন আব্দুর রহমান ইবনে যিয়াদ ইবনে আলগাম। তিনি সঙ্গীদের নিয়ে সাগরপথে সফরে ছিলেন। কনস্টান্টিনোপলের খ্রিস্টান শাসকের নৌবাহিনী (জলদস্যুরা) তাদের আটক করে নিয়ে যায়। উপরের নির্দেশে তাদের জেলে বন্দি করে রাখে।
একবার খ্রিস্টানদের বড় দিন উপলক্ষে জেলখানায় কয়েদিদের ভালো খাবার পরিবেশন করা হয়। ওইদিন তাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া হয়। ভালো খাবার ও আদর-আপ্যায়নে মুসলিম বন্দিরা খুব খুশি হয়।
মুসলিম বন্দিদের খুশির খবর এক খ্রিস্টান নারী জানতে পেরে বাদশাহর কাছে এ মর্মে নালিশ করে বসেন যে, আরবরা আমার স্বামী ও ছেলেকে হত্যা করেছে; অথচ জেলখানায় আরব বন্দিদের এমনভাবে আপ্যায়ন করা হয়েছে- ‘যেন তারা মেহমান!’
খ্রিস্টান নারীর এ অভিযোগে বাদশা নিজেও রেগে যান এবং কয়েদিদের তার দরবারে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন। কয়েদিদের তার সামনে নিয়ে আসা হলে বাদশাহ জল্লাদকে সবার শিরশ্ছেদ করার নির্দেশ দেন।
জল্লাদ একে একে সব বন্দির শিরশ্ছেদ করতে করতে যখন হজরত আব্দুর রহমান ইবনে যিয়াদ ইবনে আলাগামের মুখোমুখি হলেন। তখন তার ঠোঁট নড়ছিল। তিনি কিছু পড়ছিলেন। বাদশাহ তা প্রত্যক্ষ করছিলেন।
হজরত আব্দুর রহমান ইবনে যিয়াদ ঠোঁট নেড়ে কী যেন পড়ছিলেন। তিনি আল্লাহকে ডাকলেন, দোয়া করলেন আর তার মুখ দিয়ে বের হলো-
اَللهُ... اللهُ رَبِّىْ لَا اُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু… আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ!... আল্লাহ তুমিই আমার প্রভু। আমি তোমার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’
বাদশাহ জিজ্ঞাসা ও ক্ষমা
এবার বাদশাহ জল্লাদকে থামতে বললেন। হজরত আব্দুর রহমান ইবনে যিয়াদ ইবনে আলগামকে জিজ্ঞাসা করলেন- তোমার ঠোঁট দিয়ে কী কথা বের হচ্ছে?
তখন তিনি বললেন-
اَللهُ... اللهُ رَبِّىْ لَا اُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا
উচ্চারণ : ‘আল্লাহু… আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ!... আল্লাহ তুমিই আমার প্রভু। আমি তোমার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না।’
কনস্টান্টিনোপলের খ্রিস্টান শাসকের এ শব্দগুলো শোনা মাত্রই তার মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বাদশাহ সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দেন- তাকে ও তাঁর সঙ্গীদের সবাইকে মুক্ত করে দাও। সুবহানাল্লাহ!
এ ঘটনা থেকে প্রমাণিত চমর মুহূর্তেও যারা আল্লাহকে ভুলে না, মহান আল্লাহও তাদের ভুলেন না। বরং তাদের দান করেন সফলতা। তাদের জন্য খোলা থাকে মুক্তির দরজা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর ওপর ভরসা করার এবং তার একত্মবাদের প্রতি অগাধ আস্থা ও বিশ্বাস রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
তথ্য : সোনালী পাতা, মাকতাব দারুস-সালাম, সৌদি আরব।
এমএমএস/জিকেএস