শয়তান যেভাবে মানুষের ৫টি আমল ধ্বংস করে দেয়
আমল যদি যথাযথভাবে করা হয় তবে তা আমলকারীর জন্য ফলপ্রসু হয়। বান্দার প্রতিটি কাজ কীভাবে করতে হবে তা জানাতেই এসেছে কুরআন ও প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন নসিহত। অথচ মানুষের এসব আমলের মধ্যে ৫টি সর্বোত্তম কাজ শয়তান নিমিষেই ৩টি কাজের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়। মুমিনের সর্বোত্তম আমল ও শয়তানের ধোঁকা দেয়া কাজটি ৩টি কী?
আল্লামা ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মুমিনের ৫টি আমল এবং শয়তানের ৩টি ধোকার বর্ণনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দুনিয়া হলো একটি বাগান। এতে রয়েছে-
> ইলম : ওলামায়ে কেরামের ইলম বা জ্ঞান। যা পথহারা মানুষকে সঠিক পথ দেখায়।
> সুবিচার : দায়িত্বশীল ইমাম বা নেতার সুবিচার। যার মাধ্যমে মানুষ সঠিক বিচার বা সমাধান পায়।
> ইবাদত-বন্দেগি : আমলে নিয়োজিত ব্যক্তির ইবাদাত-বন্দেগি। যা মানুষকে আল্লাহর ভয় ও মহব্বত তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করে।
> আমানত : হালাল ও হারাম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করা একজন ব্যবসায়ীর জন্য অনেক বড় আমানত। অর্থাৎ যিনি ব্যবসা পরিচালনায় আমানতদার।
> দ্বীনি নসিহত : উত্তম গুণের অধিকারী ব্যক্তিদের নসিহত বা উপদেশ। যা ইলম বা জ্ঞানবঞ্চিত মানুষকে আল্লাহর দিকে নিয়ে আসে।
শয়তানের ৩ ধোঁকা
শয়তান নিমিষেই ৩টি ধ্বংসাত্মক প্ররোচনার মাধ্যমে মানুষের উল্লেখিত পাঁচটি কাজকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে। আর এ ক্ষতি করার জন্য শয়তান মানুষের সামনে যে ৩ পরিকল্পনা বা ধোঁকা তুলে ধরে তাহলো-
> লোকদের মাঝে রিয়া বা অংহকারে উদ্বুদ্ধ করে। এর মধ্যেমে প্রথম তিনটি কাজ ধ্বংস করে দেয়। তাহলো, ইলম, সুবিধার এবং ইবাদত। রিয়া বা লোক দেখানোর ধোঁকার কারণে মানুষের এ ৩টি আমল ধ্বংস হয়ে যায়।
> সৎ ব্যবসা বা ব্যবসায়ী আমানতদারিতা নষ্ট করার জন্য খেয়ানতকে ধোঁকা হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আর খেয়ানতের মাধ্যমে মানুষ শয়তানের ধোঁকায় নিজের বিশ্বস্ততা ও আমানতদারিতা ধ্বংস করে দেয়।
> ইলমে দ্বীনের নসিহত বা সুন্দর উপদেশগুলোকে নষ্ট করতে শয়তান কলংক নামক ধোঁকার মাধ্যমে তা ধ্বংস করে দেয়। ইসলামের দিকে নসিহতকারী ব্যক্তিকে এমন কলংকজনক কাজে জড়িয়ে ফেলে যে, ওই ব্যক্তি কোনো মানুষকে ইসলামের উপদেশ বা দাওয়াত দেয়ার অবস্থায় থাকে না। এটি শয়তানের মারাত্মক ষড়যন্ত্র মূলক কাজ।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব সময় শয়তানের প্ররোচনা ও ধোঁকা থেকে হেফাজত থাকা। অহংকার, লোক দেখানো ইবাদতের মানসিকতা, হিংসা, খেয়ানত ও কলংকজনক কাজ থেকে সতর্ক থাকা। আল্লাহর কাছে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত থাকতে বেশি বেশি দোয়া করা।
সব সময় শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও রহমত কামনা করা। বিশেষ করে বেশি বেশি তাওবা ও ইসতেগফার পড়া। যাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।
> সব সময় ইসতেগফার পড়া
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ وَأَتُوبُ إلَيْهِ ، رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ، إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الْغَفُورُ
উচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম ওয়া আতুবু ইলাইহি; রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আংতাত তাওয়্যাবুল গাফুর।
> সকালে এবং সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইসতেগফার পড়া
أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আংতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু আউজুবিকা মিং শাররি মা সানাতু আবুউলাকা বি-নিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজান্মি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আংতা।’
> এ আয়াত দুটি বেশি বেশি পড়া
رَّبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ - وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَن يَحْضُرُونِ
উচ্চারণ : রাব্বি আউ-জুবিকা মিন্ হামাযা-তিশ শায়া-ত্বী-ন। ওয়া আউ-জুবিকা রাব্বি আইঁ ইয়াহদুরু-ন।
অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা! আমি শয়তানের প্ররোচনা থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আমার প্রভু! আমার নিকট তাদের উপস্থিতি থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুরা মুমিনূন : আয়াত ৯৭-৯৮)
আল্লাহ তাআলা উম্মাতে মুসলিমাকে উপরোক্ত পাঁচটি কাজ করতে গিয়ে রিয়া, খেয়ানত ও প্রতরণা থেকে হেফাজত করুন। যথাযথভাবে আল্লাহর পথে চলার তাওফিক দান করেন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম