রোগ-বিপদ মুক্তি ও সন্তান লাভের কার্যকর দোয়া
কুরআনুল কারিমের সুরা আম্বিয়ায় রোগ ও বিপদ থেকে মুক্তি এবং সন্তান লাভের কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য তিনটি দোয়া তুলে ধরেছেন। এ তিনটি দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার তিনজন নবিকে কঠিন রোগ, চরম বিপদ থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং দান করেছেন নেক সন্তান।
নবিদের আহ্বানে কবুল হওয়া দোয়া তিনটি মহান আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির শিক্ষা ও সফলতা লাভের জন্য কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেছেন।
সুরা আম্বিয়ায় উল্লেখিত তিনটি দোয়া ছিল হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের রোগমুক্তির দোয়া। হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামের বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া। আর হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের সন্তান লাভের দোয়া। আল্লাহ তাআলা এ তিন নবির হৃদয়ের আকুতি ও প্রার্থনা কবুল করেন এবং কুরআনে দোয়া কবুলের বিষয়টিও উল্লেখ করেন। সুরা আম্বিয়ায় নবিদের প্রার্থনা ও তা কবুলের বর্ণনা এভাবে ওঠে এসেছে-
- চরম অসুস্থতায় হজরত আইয়ুব আলাইহি সালামের প্রার্থনা
(وَأَيُّوبَ إِذْ نَادَى رَبَّهُ)
أَنِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِين
উচ্চারণ : ‘আন্নি মাচ্ছানিয়াদ্দুররু ওয়া আংতা আরহামুর রাহিমিন।’
অর্থ : (আর স্মরণ করুন আইয়্যুবের কথা, যখন তিনি তাঁর পালনকর্তাকে আহবান করে বলেছিলেন)-
আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি আর আপনি দয়াবানদের চেয়েও সর্বশ্রেষ্ট দয়াবান।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৩)
আল্লাহ তাআলা হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল করলেন। দোয়া কবুল করার প্রসঙ্গটি কুরআনে এভাবে এসেছে-
‘অতপর আমি তার (সেই) আহ্বানে সাড়া দিলাম এবং তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিলাম আর তার পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম এবং দয়াবশতঃ আমার পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আর এটা ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৪)
উল্লেখ্য অসুস্থতার কারণে হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালামের পরিবার-পরিজন সবাই তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে তাকে পুনরায় পরিবার-সম্পদ ও সুস্থতা দান করেন।
- চরম বিপদে হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের প্রার্থনা
(وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَى فِي الظُّلُمَاتِ أَن)
لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
অর্থ : ‘(আর মাছওয়ালার কথা স্মরণ করুন; তিনি রাগ হয়ে চলে গিয়েছিলেন, অতপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধরতে পারব না। অতপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে আহবান করলেন)-
‘তুমি ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই; তুমি নির্দোষ আমি গোনাহগার।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৭)
হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম নিজ অঞ্চল ছেড়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনাক্রমে সমুদ্রে নৌকা থেকে পানিতে ঝাঁপ দিতে হলো তাঁকে। নদিতে ঝাঁপ দিলে সমুদ্রের মাছ তাকে খেয়ে ফেলে। আর মাছের পেটে অন্ধকারের চরম বিপদ থেকে মুক্তির জন্য তিনি মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। আল।লাহ তাআলা আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁকে অন্ধকার বিপদ থেকে মুক্তি দেন। কুরআনে এসেছে-
‘অতপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৮)
- সন্তান লাভে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের দোয়া
(وَزَكَرِيَّا إِذْ نَادَى رَبَّهُ)
رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি লা তাজারনি ফারদান ওয়া আংতা খাইরুল ওয়ারিসিন।’
অর্থ : (আর যাকারিয়ার কথা স্মরণ করুন, যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করেছিল)-
‘হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একা রেখো না। তুমি তো উত্তম ওয়ারিস।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ৮৯)
হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম একবার বিনা মৌসুমে হজরত মারইয়ামকে ফল দ্বারা জীবিকা দানের বিষয়টি লক্ষ্য রেখে বার্ধক্যে মহান আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেন। যা সুরা আল-ইমরানে বিস্তারিত ওঠে এসেছে। এ সুরায়ও তিনি আল্লাহর কাছে সন্তান কামনা করেন। অতপর আল্লাহ তাআলা তাকে সন্তান দান করার মাধ্যমে তার দোয়া কবুল করেন। সে কথা কুরআনে এভাবে ওঠে এসেছে-
‘অতপর আমি তার দোয়া কবুল করেছিলাম, তাকে দান করেছিলাম ইয়াহইয়া এবং তার জন্য তার স্ত্রীকে (বার্ধক্যে) প্রসবযোগ্য করেছিলাম। তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, তারা আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত।’ (সুরা আম্বিয়া : ৯০)
কুরআনুল কারিমের সুরা আম্বিয়ায় উল্লেখিত দোয়া তিনটি পরীক্ষিত ও গ্রহণযোগ্য। সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রোগমুক্তি, বিপদমুক্তি কিংবা সন্তান লাভের জন্য এসব দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
নবিদের অনুকরণ ও অনুসরণে দোয়া করলে মহান আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের চরম অসুস্থতা ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দেবেন। আর নিঃসন্তান দম্পতিকে দান করেন নেক সন্তান।
আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে কুরআনুল কারিমের কবুল হওয়ার দোয়া তিনটির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস