বিশ্বনবির প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা যেমন ছিল
প্রিয় নবি হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার অন্যতম শর্ত। কেমন ভালোবাসতে হবে প্রিয় নবিকে? আর সাহাবায়ে কেরাম কেমন ভালোবাসতে তাঁকে? তাঁকে ভালোবাসার বিষয়ে কী বলেছেন তিনি?
মুমিন মুসলমানের ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে কিনা তা বুঝার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা। কেননা প্রিয় নবির সঙ্গে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর এ সম্পর্কিত আলোচনাই তার প্রমাণ-
- হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজীকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি, তবে নিজের জানের চেয়ে বেশি নয়। নবিজী বললেন, ওহু! তাহলে তো এখনো (ঈমান পরিপূর্ণ) হয়নি। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! যতক্ষণ না আমি তোমার জানের চেয়েও বেশি প্রিয় না হব ততক্ষণ তোমার ঈমান পূর্ণ হবে না।
কিছুক্ষণ পর হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর শপথ! এখন আপনি আমার কাছে আমার জানের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে গেছেন। নবিজী বললেন, ‘হ্যাঁ’, ওমর! এখন তোমার ঈমান পূর্ণ হয়েছে।’ (বুখারি)
- হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় না হব।’ (বুখারি)
সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবিকে ভালোবাসতেন তাদের জানের চেয়েও বেশি। মুমিন মুসলমানের জন্য এ ভালোবাসাই পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার অন্যতম শর্ত। আসুন জেনে নিই- প্রিয় নবির প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসা কেমন ছিল-
- হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ভালোবাসা
তিনি বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসায় ধন-সম্পদসহ সব কিছুই ত্যাগ করেছিলেন। নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়ানোতেই পেতেন সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি। মক্কা থেকে মদিনার সফরের সময় ভেড়ার দুধ পানে পিপাসা নিবারণ করলেন প্রিয় নবি আর তৃপ্ত হলেন হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, ‘মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার সময় আমরা এক রাখালের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলাম। সে সময় বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব পিপাসার্ত। আমি ভেড়ার দুধ দোহন করলাম। তিনি তা পান করলেন, আমি খুব আনন্দিত হলাম। সত্যি বলতে কি, নবীজির দুধ পান দেখে আমি তৃপ্ত হয়ে গেলাম।’ (বুখারি)
মৃত্যুশয্যায় হজরত আবু বকর
হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু মৃত্যু শয্যায় থাকা অবস্থায় জিজ্ঞাসা করলেন- হে আয়েশা! নবিজী কোনদিন ইন্তেকাল করেছিলেন? হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু জানালেন- ‘সোমবার’। তিনি বললেন, আজ কী বার? জবাব এলো- সোমবার। তিনি বললেন, হায় যদি আমার মৃত্যু রাতের আগেই হতো!’ (বুখারি)
নবি পরিবারের প্রতি আবু বকরের ভালোবাসা
হজরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা একবার হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নবিজীর মিরাস (উত্তরাধিকার) চেয়ে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে পাঠালেন।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আলি, নবির মিরাস তো বন্টণ হয় না! (কেননা) নবিজী বলে গেছেন, ‘আমরা যা রেখে গেছি, তা সদকা হিসেবে বিবেচিত হবে, নবি-পরিবার যতদিন থাকবে; এ সম্পদ থেকে তাদের ভরণপোষোণের ব্যবস্থা করা হবে। নবিজীর যুগে এসব সম্পদ যে নিয়মে খরচ হত আমিও সে নিয়মেই খরচ করব। এতে কোনো পরিবর্তন হবে না।
আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন অধিকারের কথা বললেন। নবীজির সাথে তাঁদের আত্মীয়তার বিষয়টি সামনে আনলেন। হজরত আবু বকর জবাবে বললেন- দেখো আলি! আমার নিজের আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষার চেয়েও আমার কাছে নবিজীর আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোর গুরুত্ব ও মর্দাযা অনেক বেশি।’ (বুখারি)
-হজরত ওমরের ভালোবাসা
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন আব্বাকে (হজরত ওমর) বললাম, হজরত উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আমার চেয়ে দ্বিগুণ ভাতা দেন কেন? অথচ নবিজীর সঙ্গে তাঁর চেয়ে আমি বেশি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আব্বাজান হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জবাব দিলেন-
‘দেখো! উসামার আব্বা হজরত যায়দ তোমার আব্বা (ওমরের) চেয়ে আল্লাহর রাসুলের বেশি প্রিয় ছিলেন। আর উসামা তোমার তুলনায় আল্লাহর রাসুলের বেশি প্রিয়জন ছিল। আমি আমার ভালোবাসাকে রাসুলের ভালোবাসার উপর প্রাধান্য দিতে পারি না।
নবির ভালোবাসায় প্রাধান্য লাভ
হজরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কা বিজয়ের দিন আবু সুফিয়ানকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে আসলেন। তখনও আবু সুফিয়ান ইসলাম গ্রহণ করেনি; বরং কাফেরদের সরদার। এমন সময় হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বিশ্বনবির কাছে আবু সুফিয়ানকে হত্যার অনুমতি চাইলেন।
এবার হজরত আব্বাস বললেন, হে ওমর! একটু শান্ত হও। আবু সুফিয়ান যদি তোমার গোত্রের কেউ হতো তবে তুমি এমনটি করতে না।
হজরত ওমর বললেন, থামুন আব্বাস! শুনুন, আমার কাছে তোমার ইসলাম গ্রহণের মর্যাদা আমার বাবা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ অপেক্ষা অনেক বেশি আনন্দের ছিল। তা কেন জানো? আমি জানতাম; তুমি ইসলাম গ্রহণ করলে নবিজী (তোমার ভাতিজা) বেশি খুশি হবেন। হায়! আমার পিতাও যদি মুসলমান হতেন।’ (মুসলিম)
- হজরত সাওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভালোবাসা
বদর যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধে সারি সোজা করছেন। তাঁর হাতে একটি তীর ছিল। হজরত সাওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু (ইচ্ছাকৃতভাবে) সারির একটু সামনে দাঁড়িয়ে যান। বিশ্বনবি তার সামনে এসে তাকে তীর দিয়ে মৃদু খোঁচা দেন; আর বলেন, সারি সোজা করে দাঁড়াও।
এবার হজরত সাওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন, আপনি আমাকে তীর দিয়ে খোঁচা দিয়ে কষ্ট দিয়েছেন। আমি প্রতিশোধ নিতে চাই।
নবিজী সাওয়াদের হাতে তীর দিলেন আর নিজের পেট থেকে কাপড় সরালেন এবং সাওয়াদকে প্রতিশোধ নিতে বললেন। এ সুযোগে সাওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবিজীকে জড়িয়ে ধরলেন এবং চুমু খেতে শুরু করলেন।
নবিজী বললেন, সাওয়াদ! এমনকি করলে কেন? তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! সামনে যুদ্ধ। বাঁচবো কিনা মরবো জানিনা। মৃত্যুর আগে আপনার শরীরের একটু স্পর্শ পাওয়ার জন্যই এমনটি করেছি।’ (সীরাতে ইবনে হিশাম)
- হজরত উসাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভালোবাসা
হজরত উসাইদ ইবনে হুদাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলছিলেন আর রসিকতা করে শ্রোতাদের হাসাচ্ছিলেন। এমন সময় নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি কাঠের টুকরা দিয়ে তার পেটে খোঁচা দিলেন।
এবার হজরত উসাইদ বললেন, হে আল্লাহর নবি! আমাকের এর বদলা নিতে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- ঠিক আছে, বদলা নাও।
হজরত উসাইদ বললেন, আপনার গায়ে তো জামা আছে, অথচ আমার গায়ে জামা ছিলো না। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গায়ের জামা খুললেন।
তখন হজরত উসাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয় নবিকে জড়িয়ে ধরে তাঁর এক পাশে চুমু দিতে লাগলেন আর বললেন- ‘আপনার বরকত পাওয়ার জন্যই আমি এমনটি করেছি, ইয়া রাসূলাল্লাহ!’ (আবু দাউদ)
- হজরত সুমাইয়ার ভালোবাসা
ওহুদের যুদ্ধ শেষ। বিশ্বনবিসহ সাহাবাগণ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে মদিনায় ফিরছিলেন। তারা বনূ দীনার গোত্রের পাশ দিয়ে যখন যাচ্ছিলেন তখন হজরত সুমাইয়া বিনতে কায়েসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। যুদ্ধ ফেরত সাহাবারা হজরত সুমাইয়াকে জানালেন, তোমার স্বামী, ভাই ও বাবা যুদ্ধে শহিদ হয়েছেন।
ওয়াকেদির বর্ণনায় জানা যায়, হজরত সুমাইয়া বিনতে কায়েস তার স্বামী, ভাই ও বাবার শাহাদাতের কথা শোনার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে জানতে চাইলেন- নবিজী কেমন আছেন? তিনি বেঁচে আছেন তো!
তারা (যুদ্ধ ফেরত সাহাবারা) বললেন, ‘আপনি যেমন কামনা করছেন। আলহামদুলিল্লাহ! তিনি ভাল আছেন। এবার হজরত সুমাইয়া বললেন, ‘তাহলে তাঁকে একটু দেখাও। আমি তাঁর জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক একটু দেখে নেই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ইশারা করে তাঁকে দেখানো হল। দেখা মাত্রই তিনি চিৎকার করে বলে উঠলেন-
‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনাকে সুস্থ পাবার পর সব বিপদ (স্বামী, ভাই ও বাবার মৃত্যু) আমার কাছে তুচ্ছ।’ অর্থাৎ এখন আর আমার মনে আমার স্বামী, ভাই বা বাবাকে হারানোর কোনো কষ্ট নেই। আপনাকে সুস্থ পেয়ে সব কিছুই আমি ভুলে গেছি।’ (আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া, আলকামিল)
- হজরত উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহার ভালোবাসা
কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা হজরত উম্মে হাবিবাহ। তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী। মক্কা বিজয়ের আগে অষ্টম হিজরিতে আবু সুফিয়ান মদিনায় এসে তার (কন্যা উম্মে হাবিবার) ঘরে গেলেন।
আবু সুফিয়ান ঘরে প্রবেশ করে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানায় বসতে গেলে নবি পত্নী উম্মে হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বিছানা গুটাতে শুরু করলেন এবং বসতে বারণ করলেন।
আবু সুফিয়ান তা দেখে বিস্মিত হলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন- মা, আমি কি এ বিছানায় বসার উপযুক্ত নই! এবার হজরত উম্মে হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানা। আর তুমি মুশরিক; অপবিত্র।
তাই আমি চাই না যে, তুমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিছানায় বস। এ কথা শুনে আবু সুফিয়ান মেয়ের ঘর থেকে বের হয়ে অন্যত্র চলে গেলেন।’ অর্থাৎ বিশ্বনবির ভালোবাসা ও সম্মানের কাছে আপন পিতাও ছিল তুচ্ছ। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, গযওয়াতুল ফাতহ)
- হজরত আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর ভালোবাসা
ওহুদ্ধের ঘটনা। বিশ্বনবির নিরাপত্তায় কাফের অবিশ্বাসীদের নিক্ষেপ করা তীরের সামনে নিজের বুক পেতে দেন। অবিশ্বাসী কুরাইশদের পাল্টা আক্রমণে মুসলিম বাহিনী সাময়িক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে। এ সময় কাফেরা নবিজী ও সাহাবাদের প্রতি প্রচণ্ড আক্রমণ করে বসে। সে সময় বিশ্বনবি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিরাপত্তায় কাফেরদের আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন হজরত তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু।
হজরত তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থেকে ময়দানের অবস্থা দেখতে মাথা উঁচু করলেন বিশ্বনবি। এ সময় হজরত তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে উঠলেন-
‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমার মা-বাবা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনি উঁকি দেবেন না; মাথা উঁচু করবেন না। (কাফেরদের নিক্ষেপ করা তীর আপনার পবিত্র দেহে লাগতে পারে। আমার বুক আপনার বুকের সামনে উৎসর্গিত।’ (বুখারি)
- হজরত ওরওয়াহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা
বিশ্বনবির প্রতি সাহাবাদের ভালোবাসার বর্ণনা করেন হজরত ওরওয়াহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি ইসলাম গ্রহণের আগে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকদের পক্ষে কথা বলতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়েছিলেন। হুদাইবিয়া থেকে ফিরে ওরওয়াহ তার কাওমকে বিশ্বনবির প্রতি সাহাবাদের সম্মান ও ভালোবাসার অনুভূতি সম্পর্কে বলেছিলেন-
‘আমি অনেক রাজা-বাদশাহর কাছে প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছি। কায়সার, কিসরা ও নাজ্জাশির দরবারেও গিয়েছি। আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার সাহাবারা যেমন ভক্তি করে, কোনো বাদশাহর প্রতি তার সঙ্গীদের এমন ভক্তি আমি আর কোথাও দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি থুতু ফেললে তাঁর সঙ্গীদের কেউ না কেউ তা হাতে নিয়ে সঙ্গীদের চেহারায় ও শরীরে মেখে ফেলে। তিনি যখন কোনো আদেশ করেন, তখন তারা তাঁর আদেশ পালনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর যখন তিনি অজু করেন তখন তাঁর ওজুতে ব্যবহৃত পানি পাওয়ার জন্য প্রায় লড়াই বেধে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়।’ (বুখারি)
এ ছিল বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের প্রতি ভালোবাসার নমুনা।
মুমিন মুসলমানের কাছে বিশ্বনবির ভালোবাসা আজও বিদ্যমান। যে কারণে এখনও বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো দুষমন যদি কোনো কথা বা আক্রমণ কিংবা কটাক্ষ করে; সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে মুসলিম বিশ্ব।
বিশ্বনবির প্রতি অবমাননায় ক্ষোভ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কোনো সাধারণ বিষয় নয়, এটি মুমিন মুসলমানের পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার অগ্নি পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় পাস করলেই মুসলিম উম্মাহ হয়ে উঠবে প্রকৃত ঈমানদার।
হে আল্লাহ! আপনি উম্মতে মুহাম্মাদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা প্রদর্শন ও হৃদয়ে লালন করার তাওফিক দান করুন। পরিপূর্ণ ঈমানদার হিসেবে কবুল করুন। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ যথাযথভাবে জীবনের প্রতিটি স্তরে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম