আত্মাকে সতেজ রাখতে যা করবেন
আল্লাহ তাআলা স্মরণ মানুষের আত্মাকে সজিব সতেজ ও কোমল করে দেয়। মাছ যেমন পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না ঠিক তেমনি আত্মাও আল্লাহ তাআলার স্মরণ ছাড়া সতেজ থাকে না।
দেহকে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখার জন্য যেমন খাবারের প্রয়োজন, তেমনি আত্মাকে জীবিত ও সতেজ রাখার জন্যও খাবারের প্রয়োজন হয়। আত্মার এ সতেজতার খাবার বাহ্যিক নয় বরং তা আধ্যাত্মিক আর আত্মার সেই খাবার হলো- তার জিকির বা তাকে স্মরণ করা। অর্থাৎ আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় জীবিত রাখা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা আর-রাদ : আয়াত ২৮)
এ আয়াত থেকেই সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, আল্লাহর স্মরণের হৃদয় প্রশান্ত হয়, আত্মায় সতেজতা ফিরে আসে। তাই আমরা যদি আমাদের আত্মাকে সতেজ রাখতে চাই তবে সব সময় তাকে স্মরণ রাখতে হবে। কেননা আমরা তাকে স্মরণ করলে তিনিও আমাদের স্মরণ করবেন বলে কুরআনুল কারিমের একাধিক আয়াতে এভাবে ঘোষণা দিয়েছেন-
- ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব আর তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা আল-বাকারা : আয়াত ১৫২)
- ‘তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও ভীতির সঙ্গে অনুচ্চস্বরে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ করবে আর তুমি উদাসীন হবে না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২০৫)
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কীভাবে স্মরণ করেন, সে বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে হাদিসে কুদসিতে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘বান্দা আল্লাহকে যেভাবে স্মরণ করেন, আল্লাহও বান্দাকে সেভাবে স্মরণ করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মানুষ! যদি তুমি আমাকে মনে মনে স্মরণ করো, তবে আমি তোমাকে মনে মনে স্মরণ করব আর যদি তুমি আমাকে কোনো বৈঠকে স্মরণ করো তবে আমি তাদের চেয়ে উত্তম বৈঠকে তোমার স্মরণ করব।’ (কানজুল উম্মাল)
হাদিসে আরও বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নীরবে বসে আল্লাহর জিকির করে আর তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে থাকে; আল্লাহ তাআলা তাকে তার রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দান করবেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিটি জিনিসের মরিচা পরিষ্কার করার যন্ত্র আছে আর অন্তরের মরিচা পরিষ্কার করার (আত্মাকে সতেজ রাখার) যন্ত্র হলো আল্লাহর জিকির।’ (বায়হাকি)
আল্লাহকে স্মরণ করব যেভাবে
সব সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখার জন্য, আত্মাকে সতেজ রাখার জন্য বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা ও উপায় বলে দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি সকাল ও সন্ধ্যায় একশত বার পড়ে-
سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ
উচ্চারণ : ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’
কেয়ামতের দিন তার চেয়ে ভালো আমল নিয়ে আর কেউ আসবে না; তবে ওই ব্যক্তি ছাড়া যে এই কালেমাটি তার সমান বা তার চেয়ে বেশি বার পড়ে।’ (মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন- সন্ধ্যা ও সকালে-
- ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ (সুরা ইখলাস),
- ‘কুল আউজু বিরাব্বিল ফালাক’ (সুরা ফালাক) ও
- কুল আউজু বিরাব্বিন নাস’ (সুরা নাস)
তিনবার পড়; তবে এগুলো সবকিছু থেকে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। (আবু দাউদ, তিরমিজি)
তাই আসুন, উল্লেখিত তাসবিহ ও সুরাসমূহ পড়ি; কলবের মরিচিকা দূর করি। আত্মাকে সতেজ রাখি। বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করি। আর তাতে মহান আল্লাহও আমাদের স্মরণ করবেন। রহমতের চাদরে আবৃত করে রাখবেন।
হে দয়াময় প্রভূ! আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন। আপনার রহমতের চাদরে জড়িয়ে নিন। আমিন।
এমএমএস/পিআর